সম্প্রতি ভারত সফরে এসেছিলেন আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। নয়াদিল্লির সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয় তাঁদের। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন।
ভারতে জো বাইডেন সরকারের দুই শীর্ষকর্তার আলোচনার বিষয় ছিল ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার অগ্রগতি। কিন্তু বৈঠকে অনিবার্য ভাবেই উঠে আসে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ এবং সেই সংক্রান্ত সঙ্কটের কথা।
ব্লিঙ্কেন এবং লয়েডের সঙ্গে দেখা করার পর জয়শঙ্কর এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, তাঁদের আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল পশ্চিম এশিয়া। এ ছাড়া, দক্ষিণ এশিয়া, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা এবং ইউক্রেন সঙ্কট নিয়েও কথা হয় তাঁদের।
এক মাসের বেশি সময় ধরে বিধ্বংসী যুদ্ধ চলছে পশ্চিম এশিয়ায়। ইজ়রায়েলের সঙ্গে হামাসের সেই সংঘাতে মৃত্যুমিছিল জারি। ইতিমধ্যেই গাজ়ায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে নানা মহল। ইজ়রায়েলকে যুদ্ধ থামাতে অনুরোধ করা হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে। গাজ়ার হাসপাতালে ইজ়রায়েলি হামলার নিন্দা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
পশ্চিম এশিয়ার সমস্যার দ্বিপাক্ষিক শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা প্রথম থেকেই বলে আসছে ভারত। ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার কড়া নিন্দা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর নয়াদিল্লির তরফে বলা হয়, আলোচনার মাধ্যমে দু’পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে ওই এলাকায় শান্তি ফেরাতে হবে।
যুদ্ধ চলাকালীন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মোদী। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ইজ়রায়েলি হামলায় গাজ়ায় সাধারণ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদী। সেই সঙ্গে রইসির সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের অবস্থান নিয়েও কথা হয়েছে তাঁর।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মোদীকে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে বলেছেন। এ বিষয়ে ভারতকে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করার অনুরোধ জানিয়েছে ইরান।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব সাম্প্রতিক অতীতে নিঃসন্দেহে বেড়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্টের কথাতেই তা স্পষ্ট। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কি আছে নয়াদিল্লির?
পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ় ইনাসিও লুলা ডা সিলভার সঙ্গেও কথা বলেছেন মোদী। এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, পশ্চিম এশিয়া নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ, আশঙ্কা একে অপরের সঙ্গে তাঁরা ভাগ করে নিয়েছেন।
আমেরিকার আলোচনা, ইরানের অনুরোধ কিংবা ব্রাজিলের সঙ্গে আলাপচারিতা পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নয়াদিল্লির গুরুত্ব বৃদ্ধির দিকেই ইঙ্গিত করে।
ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ আন্তর্জাতিক মহলে আমেরিকার অবস্থানকে কিছুটা হলেও টলিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা যে নীতি নিয়েছে, তা খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না অনেক রাষ্ট্র।
গাজ়ায় হাসপাতালে ইজ়রায়েলের আক্রমণ চলছে আমেরিকার মদতেই। আমেরিকা প্রকাশ্যেই ইজ়রায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে যে মানবিকতার পাঠ এত দিন পড়িয়ে এসেছে আমেরিকা, এ বার তা তাদের দিকেই পাল্টা আঙুল তুলতে শুরু করেছে। গাজ়ায় শিশু-সহ সাধারণ মানুষের হত্যার সময় আমেরিকার ‘মানবিক’ রূপ কোথায় গেল, প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু পশ্চিম এশিয়া নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তেই বিভিন্ন বিষয়ে আমেরিকার বজ্রনির্ঘোষ সাম্প্রতিক অতীতে ফিকে হয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় এলেও আর হস্তক্ষেপ করতে পারেনি হোয়াইট হাউস।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বহির্বিশ্বের কোনও বিষয়ে আমেরিকার আলাপ-আলোচনার আলাদা তাৎপর্য আছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যে কোনও সমস্যার সমাধানের অন্যতম কার্যকরী উপায় আলোচনা। ভারতকে সে ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে হোয়াইট হাউস।
ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইন সঙ্কটে ভারতের অবস্থান যে হেতু প্রথম থেকেই নিরপেক্ষ, তাই এই সঙ্কটের দিনেও ভারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে দেগে দিলেও ভারত তা করেনি।
বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতা ভারতের আছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। হয়তো ভারতের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়, তবে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ফেরাতে পারবে ভারত, আশাবাদী বিশেষজ্ঞদের একাংশ।