Iran Hijab Row

বিপ্লবের আগে হিজাব না পরার জন্য মরতে হত না ইরানি মহিলাদের, সমুদ্রসৈকতে আসতেন বিকিনি পরে

আজ থেকে তিন দশক আগেও হিজাব পরিধান করা নিয়ে তটস্থ থাকতে হত না ইরানের মহিলাদের। বরং সেই সময়ের তোলা কিছু ছবি কিন্তু অন্য কথাই বলবে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৬
Share:
০১ ২০

হিজাব না পরে রাস্তায় বেরোনোর শাস্তি হিসাবে ইরানের রাজধানী তেহরানে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণীকে আটক করে পুলিশ। থানাতেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। আর তার পর থেকে ইরানে দিকে দিকে অসন্তোষের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। রাস্তায় নেমে হিজাব পুড়ানো থেকে শুরু করে মাথার চুল কেটে ফেলা— বিভিন্ন অভিনব পন্থায় প্রতিবাদে নেমেছে সে দেশের পুরুষ-মহিলা। কিন্তু ইরানে হিজাব পরা নিয়ে নীতিপুলিশি কি সব সময়েই ছিল?

০২ ২০

আজ থেকে তিন দশক আগেও হিজাব পরিধান করা নিয়ে তটস্থ থাকতে হত না ইরানের মহিলাদের। বরং সেই সময়ের তোলা ছবি কিন্তু অন্য কথাই বলবে।

Advertisement
০৩ ২০

১৯৭৯ সালে রাজতন্ত্র-বিরোধী বিপ্লবের সাক্ষী হন ইরানের মানুষ। পহলভি রাজবংশের শাসক শাহ মহম্মদ রেজা পহলভিকে সরিয়ে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে ইসলামিক রিপাবলিক সরকার।

০৪ ২০

ইরান থেকে রাজপরিবারকে উৎখাত করার এই বিপ্লবকে সমর্থন জুগিয়েছিল বিভিন্ন বামপন্থী ও ইসলামপন্থী সংগঠনও। ইতিহাসের পাতায় এই ঘটনা ইরানি বিপ্লব বা ইসলামিক বিপ্লব নামেও পরিচিত।

০৫ ২০

রাজপরিবারের উৎখাতের সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টে যায় ইরানের সামাজিক পরিস্থিতি এবং রীতিনীতিও।

০৬ ২০

কিন্তু ইরানের ক্ষমতার হাতবদলের আগে কেমন ছিল সে দেশে মহিলাদের সার্বিক পরিস্থিতি? ইসলামিক বিপ্লবের আগে, হিজাবের বদলে পাশ্চাত্যের পোশাকশৈলীর প্রতিও বিশেষ আকর্ষণ দেখা গিয়েছিল।

০৭ ২০

হিজাব পরার পাশাপাশি জিন্স, মিনি স্কার্ট এবং শর্ট-হাতা টপ পরেও ইরানের রাস্তায় স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারতেন সেই দেশের মহিলারা। সমুদ্রসৈকতে বিকিনি পরেও ঘুরতে দেখা যেত সে দেশের মহিলাদের। সেই সময় ইরানের শহরের মহিলাদের বাহারি জুতো পরতেও দেখা যেত। চোখে থাকত বিভিন্ন ধরনের রোদচশমা।

ছবি: সংগৃহীত।

০৮ ২০

১৯৭৭ সালের আগে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন সে দেশের বহু মহিলা। শিক্ষার মানের দিক থেকেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ নাম ছিল। বিপ্লব শুরুর সময় ইতিমধ্যেই সে দেশের বহু মহিলা উচ্চশিক্ষিত ছিলেন।

ছবি: সংগৃহীত।

০৯ ২০

ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ভর্তির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। গ্রামে বসবাসকারী রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা যাতে বাড়ি থেকে দূরে পড়াশোনা করার সুযোগ পান, তা নিয়েও কর্তৃপক্ষের তরফে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

১০ ২০

ইসলামিক বিপ্লব হওয়ার আগে শেষ কয়েক বছরে ইরানে পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার একত্রিত হওয়ার প্রবণতাও দেখা গিয়েছিল। সবাই মিলে এক হয়ে পিকনিকে যেত ইরানের বহু পরিবার। পিকনিক ইরানি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মধ্যবিত্তদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিল। বিপ্লবের পরেও এই নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবে বর্তমানে এই সব পিকনিকে মহিলাদের উপস্থিতি অনেক কমেছে। কমেছে পিকনিকে গিয়ে পুরুষ এবং মহিলাদের রাজনীতি বা আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাও।

ছবি: সংগৃহীত।

১১ ২০

ইরানের রাজপরিবারের পতনের আগে তেহরানের বুকে দেখা যেত মহিলাদের সেলুনও। খোলা চুলে দিব্যি সেলুনে যাতায়াত করতে পারতেন তাঁরা। ইসলামিক বিপ্লবের পর সেলুন থাকলেও, সে সব সেলুনে মহিলাদের আনাগোনা অনেক কমেছে।

ছবি: সংগৃহীত।

১২ ২০

শীতের সময়ে তেহরানের তুষারময় রাস্তায় হাঁটার জন্য এক সময়ে ইরানি মহিলাদের ভিড় লেগে যেত। কিন্তু বর্তমানে সেই দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না।

ছবি: সংগৃহীত।

১৩ ২০

ক্ষমতায় আসার পরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনি আদেশ দেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সব মহিলাকে হিজাব পরে থাকতে হবে। এর বিরুদ্ধে সেই সময়েও পথে নামতে দেখা গিয়েছিল সে দেশের মহিলাদের।

১৪ ২০

১৯৭৯ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবসের দিন সমাজের সর্বস্তরের হাজার হাজার মহিলা খোমেইনির এই নয়া নির্দেশের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন।

১৫ ২০

দেশের সর্বোচ্চ নেতার থেকে এ-ও আদেশে আসে যে, ইরানের মহিলারা বাড়ির ভিতরে যা খুশি পরিধান করতে পারেন, কিন্তু বাইরে বেরোলে তাঁদের ‘সংযত’ ভাবেই বেরোতে হবে।

১৬ ২০

নমাজ পড়ার ক্ষেত্রেও নতুন নিয়ম জারি করা হয়। নির্দেশ দেওয়া হয়, মহিলা এবং পুরুষদের একই ঘরে নমাজ পড়া যাবে না। মহিলাদের প্রার্থনা করার জায়গা হতে হবে পুরুষদের প্রার্থনা করার জায়গা থেকে দূরে। ধীরে ধীরে সমাজে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য আরও বাড়তে থাকে।

১৭ ২০

ইসলামিক বিপ্লবের পরে সমু্দ্রসৈকত মহিলাদের সাঁতারের পোশাক পরাও নিষিদ্ধ করা হয়। ইরানে মহিলা এবং পুরুষদের একসঙ্গে ফুটবল ম্যাচ দেখার উপর আনুষ্ঠানিক ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি না করা হলেও বর্তমানে সে দেশের মহিলাদের প্রায়ই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার মুখে আটকানো হয়।

১৮ ২০

ইরানের রাজবংশের পতনের পর বহু বছর পেরিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও কমেছে সে দেশের মহিলাদের সামাজিক অধিকার। তবে এই নিয়ে বিপ্লব কখনও থেমে থাকেনি। কিন্তু বিপ্লবের ফল এখনও হাতে পাননি সে দেশের মহিলারা।

১৯ ২০

প্রসঙ্গত, পুলিশের হেফাজতে মাহশার রহস্যমৃত্যুর পর ইরানের মহিলাদের অধিকার নিয়ে আবার পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। হিজাব-বিতর্কে জ্বলছে ইরান।

২০ ২০

দেশ জুড়ে ক্ষোভের আঁচ উত্তরোত্তর বাড়ছে। বুধবারও ইরানের রাস্তায় দেখা গিয়েছে সেই গণক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বুধবার তেহরানের রাস্তায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন অসন্তুষ্ট জনতা। ওঠে সরকার-বিরোধী স্লোগানও। দেশে মেয়েদের কঠোর পোশাকবিধির বিরুদ্ধে সরব হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয় বলেও সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement