২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইজ়রায়েল আক্রমণ করতে পারে ইরান। তেহরানের ‘সক্রিয়তা’ দেখে তেমনই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে।
আমেরিকার গোয়েন্দা দফতর এবং বেশ কিছু সূত্রের খবর, রবিবারই ইজ়রায়েলের উপর ‘প্রত্যাঘাত’ চালাতে চলেছে ইরান। অতর্কিত আক্রমণ রুখতে এখন থেকেই পরিকল্পনা ছকে ফেলেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ।
বন্ধু ইজ়রায়েলকে রক্ষা করতে এবং পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের স্বার্থকে নিরাপদে রাখতে কোমর বাঁধছে আমেরিকাও। ইতিমধ্যেই পূর্ব ভূমধ্যসাগরে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে তারা।
আমেরিকার নৌসেনার একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই দুই যুদ্ধজাহাজের একটি হল ‘ইউএস কার্নি’। লোহিত সাগরে ইরানের মদতপুষ্ট ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিকে রুখতে এই জাহাজটি ‘সাফল্য’ পেয়েছিল। সেই জাহাজকেই এ বার ইরানের আক্রমণ রুখতে পাঠিয়েছে আমেরিকা।
ইজ়রায়েল সেনার সব স্তরের আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করেছে। বিশ্রাম বা ছুটিতে থাকা সেনা আধিকারিকদেরও কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ প্রতিরোধে নিজেদের ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’কে সজাগ রাখছে ইজ়রায়েল। বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে রাজধানী তেল আভিভের জন্য।
সামরিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরেও সক্রিয়তা বেড়েছে। শোনা যাচ্ছে, সুইৎজ়ারল্যান্ডের মধ্যস্থতায় ইরানকে বার্তা পাঠিয়েছে আমেরিকা। এ ছাড়াও সৌদি আরব, কাতার, ইজ়রায়েলের মতো পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলির সঙ্গেও নিয়মিত যোগোযোগ রেখে চলেছেন আমেরিকার কূটনীতিকেরা।
ইরান ইজ়রায়েলের উপর আক্রমণ চালাতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্ভাব্য আক্রমণ নিয়ে তিনি যেমন ইজ়রায়েলকে সতর্ক করেছেন, তেমনই এই পথে না হাঁটার জন্য সতর্ক করেছেন ইরানকেও।
‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং ‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইজ়রায়েলের উপর ইরান আক্রমণ চালালে তা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হবে। আবার বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা চালানো একটি সংস্থা বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মাধ্যমে ইজ়রায়েলে হামলা চালাতে চলেছে ইরান।
ওই সংস্থাটি বলছে, বর্তমানে ইরান অন্তত ২০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম। সে ক্ষেত্রে ইরান-ইজ়রায়েলের ছায়াযুদ্ধ রক্তক্ষয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে বিমান হামলা চালায় ইজ়রায়েল। হামলায় ভবনটি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি ইরানের কয়েক জন কূটনীতিক নিহত হন। এর পর থেকে হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে তেহরান।
তার পরেই গত বৃহস্পতিবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি হোসেইনি খোমেইনি বলেছিলেন, ‘‘ইজ়রায়েলকে অবশ্যই কৃতকর্মের শাস্তি পেতে হবে।’’
এই বিষয়ে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে বাইডেন বলেন, ‘‘ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে আমরা সম্ভাব্য সমস্ত পদক্ষেপ করব। আমরা দৃঢ় ভাবে ইজ়রায়েলের পাশে রয়েছি।’’
গত ৭ অক্টোবর গাজ়ায় সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে হামাস, হিজ়বুল্লা, হুথি-সহ ইজ়রায়েল বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিচ্ছে ইরান। তারই জেরে গত এক মাসে ইরানের বিভিন্ন ঠিকানায় হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহুর বাহিনী।