নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ইরানে। হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন মহিলা বিক্ষোভকারীদের চোখ-মুখ-বুক এমনকি যৌনাঙ্গ লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল সে দেশের নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে।
পাখি মারার বন্দুক দিয়ে খুব কাছ থেকে নিরস্ত্র মহিলাদের উপর গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে পুরুষদের পায়ে, নিতম্বে এবং পিঠেও।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। একই কথা স্বীকার করে নিয়েছেন আহত মহিলাদের শুশ্রূষা করা চিকিৎসকরাও।
হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ চলার সময়, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে এত দিন লাঠিসোঁটা নিয়ে মহিলাদের উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সরাসরি মহিলাদের উপর গুলি চালিয়ে হামলার অভিযোগ।
‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর তরফে প্রকাশ্যে আনা ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে কয়েক ডজন ছোট গুলি বিক্ষোভকারী মহিলাদের শরীরে ঢুকেছে। সেই ক্ষতস্থান থেকে গল গল করে বেরিয়ে আসছে রক্ত।
এক জন চিকিৎসক জানান, ‘‘আমি বছর ২০-এর এক মহিলার চিকিত্সা করেছি, যাঁর যৌনাঙ্গে দু’টি গুলি লেগেছিল। তাঁর উরুতে আরও দশটি গুলি করা হয়েছিল।
এই ১০টি গুলি সহজে বার করা গেলেও যৌনাঙ্গে লাগা গুলি বার করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কারণ মূত্রনালি এবং যোনিপথের মাঝে গিয়ে ওই গুলি দু’টি আটকায়।’’
প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নীতি পুলিশের কবলে মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার পরেই প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ইরানের জনগণ।
দেশ জুড়ে হিজাব পরার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাস্তায় হিজাব পুড়িয়ে, মাথার চুল কেটে ফেলে, শাসকদলের নেতাদের ছবি পুড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
প্রশাসনের কড়া বলপ্রয়োগের ফলেও থামানো যাচ্ছে না বিক্ষোভ। সেই সঙ্গে গান, নাচ ও কবিতার মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ করে চলেছেন তাঁরা।
যদিও বিক্ষোভকারীদের দমাতে ধীরে ধীরে আরও কড়া পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। কিছু দিন আগেই এক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ ওঠে নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে।
এর পর সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার শাস্তি হিসাবে বৃহস্পতিবার ২৩ বছর বয়সি যুবক মহসিন শেকারিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান প্রশাসন। তার পর থেকে আরও উন্মত্ত হয়েছে জনগণ। বিক্ষোভ হয়েছে লাগামছাড়া।
সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ বৃহস্পতিবার ২৩ বছর বয়সি যুবক মহসিন শেকারিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় তেহরান প্রশাসন। সে দেশে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন ওই যুবক। এই ঘটনার জেরে সে দেশে বিক্ষোভের আঁচ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
রাজধানী তেহরান-সহ সে দেশের কয়েকটি শহরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভকারীদের সমাবেশ। তেহরানের সাত্তার খান স্ট্রিটে রাস্তা অবরোধ শুরু হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এর পর ধীরে ধীরে সেই হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ সে দেশের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খোমেইনির তিন দশকের ‘স্বৈরাচারী’ শাসনের অবসান চেয়ে আন্দোলনে পরিণত হয়। তাতে অংশ নেন পুরুষেরাও। মহসিনও সে দলে ছিলেন বলে ইরানের দাবি। এখনও বেশ কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে আশঙ্কা ইরানের মানবাধিকার আন্দোলনকারীদের।