গত কয়েক দিনে দুই দেশের মধ্যে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল ইরান এবং পাকিস্তান। তবে হামলা-পাল্টা হামলার জট ছাড়িয়ে দুই দেশই এগিয়ে এসেছে উত্তেজনা কমাতে।
সম্প্রতি ইরান এবং পাকিস্তান— উভয়েই বালুচিস্তান সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর পরেই অশান্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
দু’দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলেও আন্তর্জাতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়। তবে সেই আবহেই নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক শুধরে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানাল দুই দেশ।
সূত্রের খবর, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি এবং ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের মধ্যে ফোনে কথা হওয়ার পর উভয় দেশেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে।
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, দুই দেশই ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ’ করতে এবং ‘সন্ত্রাস দমন’ ও অন্যান্য উদ্বেগের বিষয়ে সমন্বয় আরও মজবুত করতে প্রস্তুত।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই সহযোগিতার উপর ভিত্তি করেই আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় থাকবে বলে বিদেশমন্ত্রী জোর দিয়েছেন।’
এর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ ইরান এবং পাকিস্তানকে মিটমাট করে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
অন্য দিকে চিনও দু’দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে এ বার নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক করতে সম্মতি জানাল ইরান এবং পাকিস্তান।
প্রসঙ্গত, ইরান-পাকিস্তান সংঘাতের সূত্রপাত মঙ্গলবার থেকে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বালুচিস্তানে জঙ্গি সংগঠন জইশ আল অদলের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইরান।
পাকিস্তানের উপর হামলার কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে তেহরান। ইরানের বিদেশমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গি সংগঠন জইশ অল অদল বা ‘আর্মি অফ জাস্টিস’-এর ঘাঁটি ধ্বংস করা।
ইরানের দাবি ছিল, এই জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ মূলত ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই জঙ্গি গোষ্ঠী ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে বলেও সে দেশের দাবি।
আর সেই কারণেই জইশ অল অদল সংগঠনের ঘাঁটি উচ্ছেদ করতে পাকিস্তানের ‘সবজ কোহ’ গ্রামে মঙ্গলবার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।
এই হামলার পরেই গর্জে ওঠে ইসলামাবাদ। ইরানের হামলায় পাকিস্তানের দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দেয়, ‘ফল ভুগতে হবে’ ইরানকে।
এর পরে বৃহস্পতিবার ইরানের উপর পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তাদের ‘মার্গ বার সরমাচার’ নামক ওই অভিযানে ‘বেশ কয়েক জন সন্ত্রাসবাদী’র মৃত্যু হয়েছে।
ইরান এবং পাকিস্তানের হামলা-পাল্টা হামলার আবহে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। পাক হামলাকে মোটেও ভাল চোখে দেখেনি ইরান।
তাদের বিদেশ মন্ত্রক বৃহস্পতিবারই তেহরানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ‘প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ’ কূটনীতিককে তলব করেছে এবং তাঁর কাছ থেকে পাক হামলার কৈফিয়ত চাওয়া হয়।
বায়ুসেনার মহড়াও শুরু করেছিল ইরান। ইরান-পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে উত্তেজনায় টানটান হয়ে ওঠে মধ্য এশিয়া।
তবে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া সেই উত্তেজনা কমেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্মতি জানিয়েছে দুই দেশই।