সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের সাফল্যের স্বাদ পাইয়ে দেওয়াই তাঁর নেশা। নিজে আইপিএস অফিসার। কিন্তু তাঁর সহায়তা ও সাহচর্যে আইএফএস-ও পাশ করেছেন একাধিক তরুণ-তরুণী। পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
নাম মহেশ ভগবন্ত। ১৯৯৫ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসারের শখ পড়ানো। কী ভাবে সিভিল সার্ভিসের মতো কঠিন পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের পাশ করানো যায়, সেটাই তাঁর চিন্তা।
সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে, ২০২১ সালের ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস (আইএফএস)-এর ফলাফল। তার পরই একের পর এক ফোন পাচ্ছেন ভগবত।
সবাই ফোন করে প্রথমেই জানাচ্ছেন ধন্যবাদ। তার পর কারও কারও আর্জি, ‘‘এ বার আমাদের পড়ান।’’
রায়পুর থেকে মণিপুর, রাজস্থান থেকে উত্তরপ্রদেশ—আইপিএস মহেশ ভগবতের ছাত্র ছড়িয়ে সারা দেশে। এবং তাঁরা সবাই হবু আমলা।
এ বার মোট ১০৮ জন ইউপিএসসি পরীক্ষার্থী পড়িয়েছিলেন ‘শখের শিক্ষক’ ভগবত। তাঁদের ৫০ শতাংশই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেছেন।
শুধু তা-ই নয়। মেধাতালিকার প্রথম ২০ জনের মধ্যে ১০ জনই এই আইপিএস অফিসারের কাছ থেকে ‘তালিম’ নিয়েছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককে শিক্ষকের একটাই বার্তা, ‘‘এ বার সমাজের জন্য পরিশ্রম করো।’’
দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ অফিসার বলেই পরিচিত মহেশ। তেলঙ্গানার রচোকোণ্ডা হল দেশের বৃহত্তম পুলিশ কমিশনারেট। চার জেলা নিয়ে ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা এই কমিশনারেটের নিয়ন্ত্রণে। সেখানকার পুলিশ কমিশনার মহেশ। রচকোণ্ডার পুলিশ কমিশনার মহেশ এত বড় এলাকার আইনশৃঙ্খলা দেখেন। পাশাপাশি তাঁর নেশা শিক্ষকতা।
গত ছয় বছরে প্রায় ১,২৫০ জন ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এই আইপিএস অফিসার। যদিও শিক্ষক নয়, নিজেকে ‘মেন্টর’ বলতেই পছন্দ করেন তিনি।
যাঁদের তিনি ‘মেন্টর’ ছিলেন, তাঁদের কেউ এখন আইএএস, কেউ আইপিএস, কেউ বা আইএফএস অফিসার।
নিজের কাজের ফাঁকে ঘণ্টা দুই সময় বের করে ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ান এই আইপিএস অফিসার। কোন বিষয়ের কোন অংশ কত টুকু পড়তে হবে, কোন বিষয়ে বিশেষ জোর দিতে হবে— সেই সব পরিকল্পনা ছকে দেন তিনি।
ইউপিএসসি পাশ করা পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, শুধু সফল হওয়া পরীক্ষার্থীদের নয়, যাঁরা এক বার বিফল হয়েছেন, দ্বিতীয় বার আরও ভাল করে তাঁদের পড়ান আইপিএস ভগবত। তা ছাড়া, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের জন্য ভগবতের একটি দল রয়েছে। তাঁরা নোট, বইপত্র, সাজেশন তৈরি করে রাখেন পড়ুয়াদের জন্য।
তাঁর এলাকায় মানবপাচার, শিশুশ্রমিক এবং বাল্যবিবাহের মতো সমস্যা ছিল বিরাট। আইপিএস অফিসার ভগবত তা প্রতিহত করেছেন।
তার মধ্যে শিক্ষকতা কেন করেন? আইপিএস অফিসারের কথায়, ‘‘নিজে যখন আইপিএস অফিসার হওয়ার চেষ্টায় পরিশ্রম করছিলাম, বিশেষ কোনও সুবিধা পাইনি। তবু সাফল্য এসেছে। সেই শিক্ষা ওদের দিয়ে সাহায্য করছি শুধু।’’
আইপিএস অফিসারের সংযোজন, ‘‘আমার সন্তুষ্টির উৎস প্রার্থীদের সাফল্য। অনেক দুঃস্থ পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলেমেয়ের লড়াই দেখেছি। তারা এক টানা কয়েক বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যখন তারা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়ে আইএএস, আইপিএস বা আইএফএস হয়ে হাসিমুখে সামনে দাঁড়ায় বা ফোন করে, সেই তৃপ্তি অন্য রকম।’’