নিজের দিনে বিপক্ষকে নাজেহাল করে দিতেন তাঁরা। যদিও বাইশ গজে আর তাঁদের কেরামতি দেখা যায় না। ক্রিকেট থেকে অবসরের পরে আইপিএলের আঙিনায় নেপথ্যের নায়ক এঁরা। কোচ হিসাবেও প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার কৌশল শেখাচ্ছেন দলের ক্রিকেটারদের। অথচ এককালে আইপিএলের নিলামে পাত্তাই পাননি এই তারকারা।
খেলোয়াড়ি জীবনে বহু ব্যাটারদের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন ৯৩ টেস্টে ৪৩৯ টেস্ট উইকেটের মালিক ডেল স্টেন। দক্ষিণ আফ্রিকার তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও এই জোরে বোলারকে অন্যতম সেরার তকমা দিতে রাজি অনেকে।
তবে আইপিএলের নিলামে টানা তিন বছর দলই পাননি স্টেন। ২০১৮, ’১৯, এবং ’২০ সালে তাঁকে কেনায় আগ্রহী ছিল না কোনও দল। চলতি বছর সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে জোরে বোলিং কোচের দায়িত্বে রয়েছেন স্টেন।
স্টেনের মতো বোলারকেও অনায়াসে সামলাতে পারতেন শ্রীলঙ্কার কুমার সঙ্গকারা। এককালে দ্বীপরাষ্ট্রের উইকেটরক্ষক তথা অধিনায়কের ব্যাট থেকে বেরিয়েছে ১২,৪০০ টেস্ট রান।
আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের প্রধান কোচ হিসাবে কাজ করছেন সঙ্গকারা। যদিও ২০১৫ সালের নিলামে তাঁকে কেউ কিনতেই চায়নি!
স্টেন বা সঙ্গকারার মতোই ক্রিকেটের ইতিহাসে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছেন ব্রায়ান লারা। হবে না-ই বা কেন? পাঁচ দিনের লাল বলের ক্রিকেটে তিনিই একমাত্র ব্যাটার যিনি ৪০০ রানের ইনিংস খেলেছেন।
১৩১ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই বাঁ-হাতি ব্যাটারের টেস্ট রান ১১,৯৫৩। তবে টেস্টের মহারথীকে আইপিএলের দলের মালিকেরা পাত্তা দেননি। গত বছর দলই পাননি লারা। তবে চলতি বছরে হায়দরাবাদের ব্যাটিং কোচের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি।
সঙ্গকারার দেশের মাহেলা জয়বর্ধনের নেতৃত্বে বহু কঠিন ম্যাচ বার করেছে শ্রীলঙ্কা। ১৪৯ টেস্টে ১১,৮১৪ রানের মালিক অবশ্য আইপিএলে তেমন নজর কাড়তে পারেননি।
চলতি বছর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রধান কোচের দায়িত্বে সামালাচ্ছেন মাহেলা। তবে ২০১৬ সালে পরিস্থিতি অন্য ছিল। সে বার কোনও দলের মালিকই তাঁর উপর বাজি ধরেননি।
শেষের ওভারে টানটান উত্তেজনা। মাত্র কয়েকটি রানে ম্যাচের ভাগ্য বদলে যেতে পারে। এ রকম বহু সময় শ্রীলঙ্কার ত্রাতা হয়ে লাসিথ মালিঙ্গা। ইনসুইং ইয়র্কারে বিপক্ষের ব্যাটারদের মিডল স্টাম্প উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালের আইপিএলে মালিঙ্গার ইয়র্কার দেখা যায়নি। কারণ, সে বার তাঁকে কেনায় আগ্রহ ছিল না কোনও দলের। তবে চলতি বছরে রাজস্থানের প্রধান বোলিং কোচ হিসাবে কাজ করছেন মালিঙ্গা।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বহু ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন ডেভিড হাসি। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে পরিচিত হাসিকে এক সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের ভরসা ছিলেন।
তবে ২০১৫ সালের নিলামে হতাশ হয়েছিলেন হাসি। সে বার কোনও দল জোটেনি তাঁর। যদিও চলতি বছরে কেকেআরের কোচিং দলে রয়েছেন হাসি।
ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ঝোড়ো ইনিংস দিয়ে প্রথম আইপিলে অভিযান শুরু করেছিল কেকেআর। ৭৩ বলে ১৫৮ রানের অপরাজিত সেই ইনিংস আজও মনে রেখেছেন অনেকে। ২০০৮ সালের সেই ম্যাচে ১৪০ রানের বেঙ্গালুরুকে ধরাশায়ী করেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কলকাতা।
২০১৯ সালের নিলামে ম্যাকালামও দল পাননি। যদিও কেকেআরের প্রধান কোচ হিসাবে দুর্দান্ত কাজ করছেন নিউজিল্যান্ডের এই প্রাক্তন ক্রিকেটার।
ক্রিকেট দুনিয়ার অনেকের কাছে তিনি ‘মিস্টার ক্রিকেট’। তবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বহু ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলা মাইকেল হাসি ২০১৬ সালে আইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগই পাননি তিনি। সে বার কোনও দলই তাঁর উপরে ভরসা করেননি।
এই মুহূর্তে ব্যাটিং কোচ হিসাবে রবীন্দ্র জাডেজার দলকে সামলাচ্ছেন হাসি। চলতি আইপিএলে টানা চার বার হারের মুখ দেখলেও চেন্নাই সুপার কিংসকে যে অবহেলা করা যাবে না, তা পঞ্চম ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন রবিন উত্থাপা-শিবম দুবেরা। এর নেপথ্যে যে হাসির অবদানও রয়েছে, তা-ও মনে করাচ্ছেন ক্রিকেট পণ্ডিতরা।