International Court of Justice

কুলভূষণ থেকে গাজ়া, কী ভাবে বিবাদ মেটায় আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত? এর বিচারপতিরাই বা কারা?

দুই বা তার বেশি দেশের মধ্যে বিবাদ মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত বা আইসিজে। পাক সেনার হাতে বন্দি অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় নৌসেনা অফিসার কুলভূষণ যাদবের প্রাণরক্ষা করেছে এই আদালতই।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:১৬
Share:
০১ ২২

পশ্চিম এশিয়া হোক বা পূর্ব ইউরোপ। যুদ্ধ ও গণহত্যায় রক্তাক্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। এই আবহে বিচারের আশায় ‘আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত’-এর (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজ়ে) দ্বারস্থ হয় একের পর এক দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন এই আদালতের ক্ষমতা অপরিসীম। কী ভাবে কাজ করে এই আদালত?

০২ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের জন্ম ১৯৪৫ সালে। এটি ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ্ শহরে অবস্থিত। যে ছ’টি মূল স্তম্ভের উপর রাষ্ট্রপুঞ্জ দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার অন্যতম হল আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত।

Advertisement
০৩ ২২

মূলত, দুই বা তার বেশি দেশের মধ্যে কোনও আইনগত বিরোধ দেখা দিলে তার নিষ্পত্তি করে থাকে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত। রাষ্ট্রপু়ঞ্জের অন্যান্য দফতরগুলিকে আইনি পরামর্শও দিয়ে থাকে এই আদালত।

০৪ ২২

চলতি কথায় ‘বিশ্ব আদালত’ নামে আইসিজের পরিচিতি রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ছ’টি প্রধান অঙ্গের মধ্যে এটি অন্যতম। বাকি পাঁচটি হল সাধারণ সভা, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল ও সচিবালয়।

০৫ ২২

রাষ্ট্রপুঞ্জের ছ’টি প্রধান অঙ্গের মধ্যে পাঁচটিই রয়েছে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটিতে। একটি মাত্র দফতর ইউরোপে অবস্থিত। তা হল আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত।

০৬ ২২

আইসিজে অবশ্য স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কোনও মামলা করতে পারে না। কেবলমাত্র দুই বা ততোধিক রাষ্ট্র কোনও বিবদমান বিষয়ের মীমাংসা চাইলে, তাদের অনুরোধে এই আদালত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এতে মোট ১৫ জন বিচারপতি রয়েছেন।

০৭ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের বিচারপতিদের ন’বছরের জন্য নির্বাচিত করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদ। প্রতি তিন বছর অন্তর এক তৃতীয়াংশ আসনের জন্য বিচারপতিদের নির্বাচিত করা হয়। কেউ এতে পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন।

০৮ ২২

আইসিজের বিচারপতিরা তাঁদের দেশের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না। একজন স্বাধীন বিচারপতি হিসাবে দায়িত্বভার সামলান তাঁরা। এখানে একটি দেশের একজন বিচারপতিই থাকতে পারেন।

০৯ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে বিবদমান দু’টি দেশ তাঁদের পছন্দমতো এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন। এই এজেন্ট আইনজীবীর ভূমিকা পালন করেন। তবে কোনও রাজনৈতিক নেতারও সেখানে বক্তব্য রাখার অধিকার রয়েছে। ২০২০ সালে গাম্বিয়া বনাম মায়ানমার মামলায় সেই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।

১০ ২২

সাধারণত, সওয়াল-জবাব শেষ হওয়ার পর আইসিজের বিচারপতিরা বন্ধ ঘরে নিজেদের মধ্যে রায় নিয়ে আলোচনা সেরে নেন। তার পর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। যা পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

১১ ২২

রাষ্ট্রপুঞ্জের বর্তমান সদস্য সংখ্যা হল ১৯৩। সদস্য দেশগুলির মধ্যে বিবাদ মেটাতে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত তৈরি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই আদালতের বড় ভূমিকা রয়েছে। যদিও সব ক্ষেত্রে আশা পূরণ করতে পারেনি এই আদালত।

১২ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত দু’ভাবে মামলার নিষ্পত্তি করে থাকে। প্রথমটি হল, বিতর্কিত মামলা। যা মূলত দুই বা তার বেশি দেশের মধ্যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে চলা বিবাদ। আইনি উপায়ে যা মিটিয়ে থাকে আইসিজে।

১৩ ২২

দ্বিতীয়টি হল, পরামর্শমূলক কার্যপ্রণালী। এতে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থার থেকে যে আইনি পরামর্শ চাওয়া হয়, তা দিয়ে থাকে আইসিজে। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনকেও আইনি পরামর্শ দেয় এই আদালত।

১৪ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের রায় চূড়ান্ত। যা ঘোষণার পর নতুন করে আর আবেদন করা যায় না। এই আদালতের রায় পছন্দ না হলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে যেতে পারে। সেখানে তখন বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটি হয়। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ এতে ভেটো দিতে পারে।

১৫ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের মতোই রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি)। তবে দু’টির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। দুই বা তার বেশি দেশের মধ্যে চলা বিবাদ নিষ্পত্তি করে আইসিজে। অন্য দিকে আইসিসি একটি ফৌজদারি আদালত। সেখানে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িতদের বিচার করা হয়।

১৬ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি অঙ্গ। অন্য দিকে আইসিসি সরাসরি এর অঙ্গ নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা অনুমোদিত একটি সংস্থা যা স্বাধীন ভাবে কাজ করে। তবে সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র অর্থাৎ ১৯৩টি দেশ একে এখনও মান্যতা দেয়নি।

১৭ ২২

আইসিসির তদন্ত শুরু করার অধিকার রয়েছে। ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা বা শিশুদের রণাঙ্গণে পাঠানোর মতো বিষয়ের তদন্ত করতে পারে এই আদালত।

১৮ ২২

আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে বর্তমানে একজন ভারতীয় বিচারপতি রয়েছেন। তাঁর নাম দলবীর ভান্ডারি। ২০১২ সাল থেকে এই আদালতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এই প্রাক্তন বিচারপতি। কিছু দিন আগে গাজ়ায় গ্রাউন্ড অপারেশনকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করে ইজ়রায়েলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন তিনি।

১৯ ২২

২০১৬ সালের ৩ মার্চ গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অফিসার কূলভূষণ যাদবকে গ্রেফতার করে পাক সেনা। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের দ্বারস্থ হয় নয়াদিল্লি।

২০ ২২

ইসলামাবাদের অভিযোগ, ভারতের গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা র-এর হয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলেন কুলভূষণ। পাক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু এই নিয়ে আবেদন করা হলে নয়াদিল্লির পক্ষে রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত।

২১ ২২

আইসিজেতে ভারত জানিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা অফিসার কুলভূষণকে ইরান থেকে অপহরণ করা হয়েছে। তার পর বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের মদত দেওয়ার মতো মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে পাকিস্তান। দ্বিতীয়ত, তাঁকে গ্রেফতারের পর নিয়ম মেনে ভারতের হাই কমিশনারকে জানানো হয়নি। তাঁকে আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষায় প্রদান করেনি ইসলামাবাদ।

২২ ২২

এই পরিস্থিতিতে আইসিজে জানিয়েছে, এখনই কুলভূষণকে ফাঁসি দিতে পারবে না পাকিস্তান। তাঁকে পর্যাপ্ত আইনি সুবিধা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশনের নিয়ম ভাঙা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত। বর্তমানে কুলভূষণকে দেশে ফেরাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement