২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার আইপিএলের ছোট নিলাম নিয়ে যথারীতি হইচই পড়ে গিয়েছে। নিলামে উঠে এসেছিল মোট ৪০৫ জনের নাম। ২৭৩ জন ভারতীয় ও ১৩২ জন বিদেশি। নিয়ম অনুযায়ী নিলামে ৮৭ জন ক্রিকেটারকে কেনার অনুমতি থাকলেও বিক্রি হয়েছেন ৮০ জন। এই ৮০ জনের মধ্যে রয়েছেন অবিনাশ সিংহ। তাঁকে কিনেছে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (আরসিবি)।
এ বারের ছোট নিলাম আগের সব ছোট নিলামের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। নিলামে ৮০ জন ক্রিকেটার কেনায় খরচ হয়েছে মোট ১৬৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে অবিনাশকে কিনতে খরচ হয়েছে ৬০ লক্ষ টাকা।
আইপিএল-এর ছোট নিলাম নিয়ে আরসিবি খুব একটা ব্যস্ত ছিল না। যে সব ক্রিকেটারদের জন্য আরসিবি দর হাঁকিয়েছিল, তাঁদের বেশির ভাগকেই তারা কিনতে পেরেছে।
ছোট নিলামে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার উইল জ্যাকস এবং রিস টপলিকে কিনতে কোটি কোটি খরচ করেছে আরসিবি। উইলকে কেনা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকায়। রিসকে কেনা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লক্ষে।
নিলামে ইংল্যান্ডের দুই তারকাকে কেনার পর আরসিবি হাত বাড়িয়েছিল অবিক্রিত এবং অনামী খেলোয়াড়দের দিকে। সেখান থেকেই রাজন কুমার, অবিনাশ সিংহ, সোনু যাদব, হিমাংশু শর্মা এবং মনোজ ভান্দগেকে কিনে নেয় আরসিবি। রাজন এবং অবিনাশ বাদে বাকি তিন জনকে আরসিবি কিনেছে মাথাপিছু ২০ লক্ষ টাকায়।
৬০ লক্ষ টাকায় আরসিবিতে যোগ দেওয়া অবিনাশের জীবনের গল্প রূপকথার মতো। দাদাদের ক্রিকেটে এখনও হাতেখড়ি হয়নি অবিনাশের। এমনকি, জম্মুর এই পেসার নিজের রাজ্যের ক্রিকেট দলের হয়েও কখনও খেলেননি। ট্রায়ালের সময় তাঁর বল করার ধরন আরসিবি কর্তাদের মন জয় করে নিয়েছিল। তিনি নাকি ট্রায়ালের সময় এত বল করেছেন, যা দেখে মুগ্ধ হন দলের কর্তারা। তখনই অবিনাশকে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ছোটবেলা থেকেই অবিনাশের ঝোঁক ছিল ভারতীয় সেনার প্রতি। দেশের সেনাবাহিনীতে যোগও দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে তাঁর আর সেনায় যোগ দেওয়া হয়নি। এর পর তিনি কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেট কেবল শখ ছিল। আমি কখনই এই মানসিকতা নিয়ে খেলিনি যে, এক দিন আমাকে পেশাদার ক্রিকেটার হতে হবে।’’
তিনি যোগ করেন, ‘‘আমি কানাডায় যাওয়ার পরিকল্পনাও করছিলাম। আমার বাবাও ক্রিকেট খেলার বিরোধী ছিলেন। আমাকে স্পাইক জুতো কিনে দেওয়ার ক্ষমতা বাবার ছিল না। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। আমার দুই ভাই পড়াশোনা করছে। আমিও বেকার ছিলাম। আমার বাবা বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষ ছিলেন।’’
অবিনাশের ক্রিকেট খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর বাবা। ক্রিকেটের সরঞ্জামের অত্যাধিক দামের কারণেই তাঁর বাবা ক্রিকেট খেলার বিরুদ্ধে ছিলেন বলে অবিনাশ জানিয়েছিলেন।
অবিনাশ জানিয়েছেন, তিনি ক্রিকেটকে কখনও গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। কিন্তু মনযোগ দিয়ে খেলতে শুরু করার পর থেকে ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগ্রহ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)-ও অবিনাশকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। অবিনাশকে কিনতে নিলামের সময় ৫৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি ছিল কেকেআর। কিন্তু অবিনাশের ভাগ্য তাঁকে নিয়ে গিয়েছে বিরাটদের শিবিরে।
২০২৩-এর আইপিএলে কোহলি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং অন্যান্য পছন্দের ক্রিকেট তারকাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নিতে তৈরি হচ্ছেন অবিনাশ।
২০২১-এর আইপিএলের পর থেকে আরসিবির অধিনায়কের পদ ছেড়েছেন বিরাট। তার পর থেকে দল চালনার দায়িত্ব গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটার ফাফ ডুপ্লেসির কাঁধে। তবে ডুপ্লেসির অধিনায়কত্বেও গত আইপিএলে ভাল ফল করতে পারেনি আরসিবি।