. কিছু মানুষ আছেন যাঁরা কঠোর পরিশ্রমী। আর সেই পরিশ্রমের ফলে তাঁরা যা চান, তা-ই অর্জন করে নেন।
এমনই এক জন মানুষ হলেন বি রবি পিল্লাই। যিনি একজন দুবাই-ভিত্তিক ভারতীয় ব্যবসায়ী।
বর্তমানে দুবাই-ভিত্তিক আরপি গ্রুপের প্রধান রবি সম্প্রতি এমন একটি কীর্তি গড়েছেন, যা তাঁর সম্পদের প্রমাণ দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
রবি একটি এয়ারবাস এইচ-১৪৫ হেলিকপ্টার কিনে ফেলেছেন। এই রকম হেলিকপ্টারের তিনিই প্রথম ভারতীয় মালিক! এর আগে কোনও ভারতীয় ব্যবসায়ী এই হেলিকপ্টারের মালিক হননি। ধনকুবের রবি ১০০ কোটি টাকায় হেলিকপ্টারটি কিনেছেন।
সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত এই অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারে সর্বোচ্চ সাতজন যাত্রী ও দু’জন চালকের আসন রয়েছে। এই হেলিকপ্টারটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতা থেকেও উড়ে যেতে এবং অবতরণ করতে সক্ষম।
এয়ারবাস কর্তৃপক্ষ হেলিকপ্টারটি কোভালামে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কোভালাম থেকেই রবিকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি এক বিলাসবহুল হোটেলের উদ্দেশে উড়ে যায়। এই হেলিকপ্টারটিই এশিয়ার প্রথম পাঁচ-ব্লেডের এইচ-১৪৫ হেলিকপ্টার।
রবি একাধিক বিলাসবহুল হোটেলের মালিক। আরপি গ্রুপের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, হোটেলগুলিতে থাকতে-আসা বিশেষ অতিথিদের এই হেলিকপ্টারে চড়িয়ে রাজ্যের পর্যটনস্থলগুলিতে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে। কোঝিকোড়, কোল্লাম এবং তিরুঅনন্তপুরমে আরপি গ্রুপের নিজস্ব হেলিপ্যাডও রয়েছে।
এত বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও রবি সাধারণ জীবন যাপন করতেই ভালবাসেন। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং প্রচুর দান-ধ্যান করার জন্যও বিশেষ পরিচিততিনি।
রবির জন্ম ১৯৫৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর কেরলের চাভারা গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। কৃষিকাজ করেই রবির পরিবারের সংসার চলত।
ছোটবেলা থেকেই অর্থাভাবের কারণে বহু সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে রবিকে। কিন্তু দারিদ্রে থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনও কঠোর পরিশ্রম করতে ছাড়েননি। কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ছোটবেলা থেকেই শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন রবি।
স্থানীয় একটি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর কোচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন রবি।
ছাত্রাবস্থা থেকেই ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। কোচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি ব্যবসার দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়েন। সেই সময়ে তিনি স্থানীয় এক মহাজনের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ধার নিয়ে নিজের চিট-ফান্ড কোম্পানি শুরু করেন।
ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জনের পর সবার প্রথমে মহাজনের ঋণ শোধ করেন রবি। এর পর লাভের টাকা জমিয়ে হোটেল তৈরির কাজে হাত লাগান।
জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন রবি। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে তাঁকে এক সময় দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধও রাখতে হয়েছিল। কিন্তু রবি হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিলেন না।
. ১৯৭৮ সালে রবি ভারত ছেড়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে পৌঁছে শীঘ্রই ১৫০ জন কর্মচারী নিয়ে নাসের এস আল হাজরি কর্পোরেশন (এনএসএইচ) নামে নিজস্ব নির্মাণ সংস্থা শুরু করেন।
একটি ফরাসি বিমান সংস্থার কাছ থেকে বড় চুক্তি পাওয়ার পর রবির নির্মাণ ব্যবসা বহুগুণ বেড়ে যায়।
কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কঠিন সংগ্রাম এবং নিষ্ঠার জোরে রবি বর্তমানে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকার মালিক। তাঁর কোম্পানিগুলিতে প্রায় ৭০,০০০ কর্মচারী কাজ করেন।
ফোর্বস পত্রিকার মতে বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় রবির নাম রয়েছে। রবি কেরলের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিও বটে।
রবিকে ২০১০ সালে ‘পদ্মশ্রী’ এবং ২০০৮ সালে ‘প্রবাসী ভারতীয় সম্মান’ দিয়ে ভূষিত করে ভারত সরকার। নিউ ইয়র্কের এক্সেলসিয়র কলেজ থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
গরিব কৃষিজীবী পরিবারে জন্মালেও সঠিক নেতৃত্ব এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রবি এখন অনেক তরুণের অনুপ্রেরণা।