ইনল্যান্ড তাইপান। মূলত অস্ট্রেলিয়ায় দেখতে পাওয়া এই সাপই নাকি বিশ্বের ‘সবচেয়ে বিষধর’ সাপ! যার এক ছোবলে ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে মেরে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীতে ৬০০টি বিষাক্ত প্রজাতির মধ্যে, কেবল মাত্র ২০০ প্রজাতির সাপের কামড় এক জন মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞদের মতে বিষধর প্রজাতির সাপেদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইনল্যান্ড তাইপান। তাই এই সাপ দেখলেই দূরে সরে যাওয়ার পরামর্শই তাঁরা দিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম ওয়েবসাইটের মতে, ইনল্যান্ড তাইপান একটি হিংস্র সাপ এবং সর্প বিশেষজ্ঞদের অনেকেই একে বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপ বলে মনে করেন।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’-এর ‘স্কুল অফ কেমিস্ট্রি’র ওয়েবসাইটেও সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইনল্যান্ড তাইপান।
ইনল্যান্ড তাইপান লম্বায় মূলত মাঝারি থেকে বড় মাপের একটি সাপ। এদের মাথা আয়তক্ষেত্রাকার।
ভোরের দিকে এই সাপ সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। দিনের বাকি অংশে মাটির গভীর ফাটল এবং অন্য পশুদের গর্তের মধ্যে থাকে।
কিন্তু কেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন যে ইনল্যান্ড তাইপান-ই বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর একটি সাপ? এই সাপের বিষের তীব্রতাই বা কতখানি?
সাপের বিষ মাপা হয় এলডি৫০ স্কেলে। এই স্কেল সাপের বিষের ক্ষমতা নির্ধারণ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে যে কোনও সাপের থেকে ইনল্যান্ড তাইপানের বিষ অনেক বেশি তীব্র । ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’ বলছে তাইপানের কামড়ে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ বিষ বার করতে দেখা গিয়েছে, তা হল ১১০ মিলিগ্রাম।
ইনল্যান্ড তাইপানের ১১০ মিলিগ্রাম বিষের একটি কামড়ে যে পরিমাণ বিষ থাকে তা ১০০ জন মানুষ বা আড়াই লক্ষ ইঁদুর মারার জন্য যথেষ্ট।
তবে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে এই তাইপানের খুব একটা দেখা মেলে না। বনাঞ্চলেও খুব একটা দেখা মেলে না এই সাপের। সাধারণত লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে এবং দিনের বেলায় গর্তে ঢুকে থাকে।
ইনল্যান্ড তাইপানের বিজ্ঞানসম্মত নাম অক্সিউরানাস মাইক্রোলেপিডোটাস।
অভ্যন্তরীণ তাইপানের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৮ মিটার (৫.৯ ফুট)। যদিও এর দৈর্ঘ্য ২.৫ মিটার (৮.২ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে।
তাইপানের বিষদাঁত ৩.৫ থেকে ৬.২ মিলিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। তাইপানের গায়ের রং চকচকে গাঢ় বাদামি এবং হালকা সবুজ বর্ণের হয়। চোখের রংও গাঢ় বাদামি রঙের।
তাইপান একসঙ্গে এক ডজন থেকে দু’ডজন ডিম পাড়ে। দু’মাস পর সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। ডিমগুলি সাধারণত পরিত্যক্ত প্রাণীর গর্ত এবং গভীর ফাটলে পাড়া হয়। প্রজনন হার তাদের খাদ্যের উপর আংশিক ভাবে নির্ভর করে। পর্যাপ্ত খাবার না থাকলে এই সাপ কম প্রজনন করে।
এই সাপ গড়ে ১০ থেকে ১৫ বছর বেঁচে থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার এক চিড়িয়াখানায় একটি তাইপান ২০ বছরেরও বেশি বেঁচে ছিল।