পায়ের তলায় সর্ষে। ঝুলিতে বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে পা রেখেছেন এই যুবক। তিনি আমেরিকাবাসী ভূপর্যটক ইন্ডি নেলনস। গোটা দুনিয়া ঘুরে দেখার স্বপ্ন চোখে নিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে পাড়ি দিতে শুরু করেন নানা দেশে।
কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি বিশ্বজয়ের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তা-ও আবার ঋণ নিয়ে।
ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সারা বিশ্বে টহল দিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি।
২৪ বছর বয়সে মাত্র ৫৪০ দিনে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ঘুরে ফেলার কৃতিত্ব রয়েছে ইন্ডির। এ ছাড়াও ভিন্ন একটি কারণে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠেছে তাঁর। ১৭০টি আলাদা সংস্থার বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতার জন্য এই বিশ্বরেকর্ড।
২০১৭ সালে এই ভ্রমণ পর্ব চালু হওয়ার মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে মোট ১৭০টি ভিন্ন উড়ান সংস্থার বিমানে চড়ে রেকর্ড গড়েছেন এই ভূপর্যটক।
এর আগে ১৫৬টি এয়ারলাইন্সের যাত্রী হিসাবে রেকর্ড ছিল রিউজি ফুরুশো নামের এক জাপানি ভূপর্যটকের। ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বিশ্বভ্রমণ করেছিলেন তিনি।
পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়ানোর নেশায় এক দেশে একাধিক বার পা রেখেছেন ইন্ডি। সেই তালিকায় রয়েছে কিম জং উনের উত্তর কোরিয়াও। তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভারতও।
ভারতের সংস্কৃতি ও আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে এই ভ্রমণপ্রিয় মানুষটিকে। তাঁর পছন্দের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কম্বোডিয়া। সেখানকার স্থানীয় মানুষেরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ, এমনটাই মনে হয়েছে এই ভূপর্যটকের।
পথে তাঁর বিভিন্ন রকমের মজার অভিজ্ঞতা থাকলেও নানা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাঁকে। না চাইলেও অসংখ্য যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে ইন্ডিকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণ করতে হয়েছে।
ইন্ডি যতটা সম্ভব সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছিলেন। তবে সব দেশের ক্ষেত্রে তাঁর পরিকল্পনা সফল হয়নি।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে পৌঁছনোর ঠিক আগের রাতে সেখানে গৃহযুদ্ধেরর বলি হতে হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের ২৪ জন সদস্যকে। যার ফলে রাজধানীতে ১২ হাজার ফরাসি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল।
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় চারটি দেশে পা রাখার পর। ইরান, লিবিয়া, পাপুয়া নিউগিনি আর রাশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্ভবত সারা জীবন মনে রাখবেন তিনি।
সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। কারণ, তিনি যে আদতে ভিন্দেশের গুপ্তচরবৃত্তির জন্য আসেননি, সেটা এই চারটে দেশে প্রমাণ করতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল ইন্ডির। ইরান, লিবিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি এবং রাশিয়ায় তাঁকে গুপ্তচর সন্দেহে আটক করা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
কারাবাস এড়াতে বার বার তাঁকে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে তিনি গুপ্তচর নন। প্রথম দিকে এক সময় ইন্ডির মনে হয়েছিল হয়তো জীবনে নিজের দেশে ফেরা হবে না আর। চতুর্থ বার সেই ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন তিনি।
নিজের সবচেয়ে অপছন্দের জায়গা হিসাবে ইন্ডি উল্লেখ করেছেন আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকুলে অবস্থিত করোমস দ্বীপপুঞ্জকে।
বিমান পরিষেবার পরিপ্রেক্ষিতে, এমিরেটস এবং কাতার এয়ারওয়েজ় ইন্ডির প্রিয়। সৌভাগ্যবশত, কোনও উড়ান সংস্থার পরিষেবা সম্পর্কে তাঁর কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল না বলে সংবাদংমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। প্রায় ৫০০টি বিমানের উড়ান পরিষেবা নিয়েছিলেন, তার মধ্যে মাত্র দু’টি বাতিল হয়েছিল।