গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম। সংক্ষেপে জিপিএস। মহাকাশ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে নজরদারি চালিয়ে পৃথিবীর যাবতীয় জিনিসের অবস্থান নির্ণয় করা হয় এই জিপিএসের মাধ্যমেই।
বিশ্বের তিনটি দেশের কাছে এই মুহূর্তে নিজস্ব গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম (জিএনএসএস) রয়েছে— আমেরিকা, চিন, রাশিয়া। এ ছাড়াও একটি জিএনএসএস নিয়ন্ত্রণ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
আমেরিকার জিএনএসএস-এর নাম জিপিএস। বিশ্ব জুড়ে সেটিই বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয়। এ ছাড়া রয়েছে রাশিয়ার গ্লোন্যাস, চিনের বেইদৌ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিপিএসের নাম গ্যালিলিও।
এই চারটি জিএনএসএস ছাড়াও আঞ্চলিক ভাবে আরও দু’টি দেশ স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করে। ভারত এবং জাপানের নিজস্ব জিপিএস রয়েছে।
ভারতের জিপিএস-এর নাম ‘নেভিক’ (এনএভিআইসি)। জাপান ব্যবহার করে কিউজ়েডএসএস। এগুলির পরিধি সারা বিশ্বে বিস্তৃত নয়। আঞ্চলিক ভাবে এই সব জিপিএস অবস্থান নির্ণয় করে থাকে।
ভারতের জিপিএস-এর কার্যক্ষেত্রের পরিধি কিছুটা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতের নেভিকও আগামী দিনে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে চায়।
নেভিককে বিশ্বের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। তবে আপাতত এই জিপিএসের পরিধি আগের থেকে কিছুটা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতের মধ্যে নেভিক ক্রিয়াশীল। ভারতের বাইরে ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্তও নেভিক সক্রিয় ছিল। এ বার সেই দূরত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৩০০০ কিলোমিটার করা হচ্ছে। ইসরো প্রধান এস সোমনাথ নিজে সে কথা জানিয়েছেন।
ইসরোর পরিকল্পনামাফিক নেভিকের পরিধি বৃদ্ধি করা গেলে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশগুলিও এর দ্বারা উপকৃত হবে। পড়শি দেশগুলিতেও অবস্থান নির্ণয়ের কাজ করতে পারবে ভারতের জিপিএস।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংগঠন (সার্ক)-এর অন্তর্গত দেশগুলির মধ্যেই আপাতত নেভিকের কার্যপরিধি সীমাবদ্ধ থাকবে। আগামী দিনে ভারতের জিপিএসের ‘হাত’ আরও লম্বা করা হতে পারে।
মহাকাশে বিভিন্ন অবস্থানে স্থাপিত মোট সাতটি কৃত্তিম উপগ্রহের মাধ্যমে কাজ করে ভারতের নেভিক। এদের মধ্যে তিনটি স্যাটেলাইট জিয়োস্টেশনারি কক্ষপথের নির্দিষ্ট কিছু অংশে অবস্থান করছে।
বাকি চারটি স্যাটেলাইটকে জিয়োসিক্রোনাস কক্ষপথের বিভিন্ন অংশে রেখেছে ইসরো। নিরক্ষরেখার উপরেও রয়েছে একাধিক স্যাটেলাইট। ইসরোর কন্ট্রোলরুম থেকে এই স্যাটেলাইটগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
নেভিকের পরিধি বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্য এই সাতটি কৃত্রিম উপগ্রহে কাজ হবে না। তার জন্য আরও কয়েকটি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাতে হবে ইসরোকে। স্যাটেলাইট সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বাড়বে জিপিএসের ক্ষমতা।
ভারতের জিপিএস এখনও কাঙ্ক্ষিত জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। ভারতের নাগরিকেরাও অনেকে নেভিকের নাম জানেন না। ভারতের অলিগলিতে সক্রিয় আমেরিকার সর্বজনস্বীকৃত জিপিএস।
চলার পথে যে কোনও অচেনা ঠিকানা খুঁজে বার করতে ভরসা গুগলের ম্যাপ। জিপিএস লোকেশনের মাধ্যমেই সেই মানচিত্র কাজ করে। হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করতেও কাজে লাগে জিপিএস।
ভারতের জিপিএসকে তেমন কেউ না চিনলেও তার কাজ কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। নেভিক মূলত দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজে লাগে। ভারতের জনগণের স্বার্থেই নেভিককে কাজে লাগায় সরকার।
দেশের বিদ্যুৎ পরিষেবা ঠিক রাখতে, সাধারণ গাড়ির সুরক্ষা, ট্রেন সম্পর্কিত সঠিক তথ্য নির্ণয়, মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ প্রভৃতি একাধির গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয় নেভিক। ইসরো এই পরিষেবা আরও উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।