চন্দ্রযান এবং মঙ্গলযান। ভারতের এই দুই মহাকাশ অভিযানের বিষয়ে ভারতীয়রা কমবেশি জানেন। কিন্তু সমুদ্রযানের বিষয়ে জানেন কি? এটি হল গভীর সমুদ্রে ভারতের বিশেষ অভিযান।
গভীর সমুদ্রের রহস্য উন্মোচন করতেই ভারতের তরফে এই বিশেষ সমুদ্র অভিযান ‘সমুদ্রযান’-এর উদ্যোগ।
এই বিশেষ সমুদ্র অভিযানের জন্য তৈরি হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ। ডুবোজাহাজের নাম ‘মৎস্য ৬০০০’। সমুদ্রের গভীরে গবেষণা চালানোর জন্যই বিশেষ প্রযুক্তিতে এই ডুবোজাহাজ তৈরি করা হচ্ছে।
এই যানে থাকবে ডুবুরিদের জন্য তিনটি অত্যাধুনিক পোশাক। জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত গভীর জলে থাকতে পারবে, তেমন ব্যবস্থাও আছে এই ডুবোজাহাজে।
সমুদ্রের নীচের জীববৈচিত্রের মূল্যায়ন, ভূবৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ এবং উদ্ধার অভিযানেও ব্যবহার করা হবে এই বিশেষ ডুবোজাহাজ।
একই সঙ্গে সমুদ্রের অতলে গিয়ে খনন, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র অনুসন্ধানের প্রযুক্তিও এই ডুবোজাহাজে রয়েছে।
‘মৎস্য ৬০০০’-এর প্রাথমিক নকশা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। ইসরো, ডিআরডিও-সহ বিভিন্ন ভারতীয় গবেষণা সংস্থার উদ্যোগে এই ডুবোজাহাজ তৈরির কাজ চলছে।
‘মৎস্য ৬০০০’ সম্পূর্ণ রূপে ভারতে তৈরি ডুবোজাহাজ বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে। মানবচালিত এই ডুবোজাহাজ সমুদ্রের গভীরে গবেষণা চালাতে বিজ্ঞান মন্ত্রককে সহায়তা করবে।
ইতিমধ্যেই বিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীনে থাকা চেন্নাইয়ের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশান টেকনোলজি’ (এনআইওটি) সমুদ্রের ৬০০০ মিটার গভীরে যাওয়ার মতো অত্যাধুনিক যন্ত্র তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে।
সমুদ্রযান মিশনের অন্যতম লক্ষ্য হল একটি মনুষ্যচালিত ডুবোজাহাজ তৈরি করা, যা তিন জন মানুষকে নিয়ে সমুদ্রের ৬০০০ মিটার গভীরে যেতে পারবে।
কিন্তু কেন শুরু হয়েছিল সমুদ্রের অতলে অন্বেষণের এই অভিযান? পৃথিবীর ৭০ শতাংশ জল এবং বাকি ৩০ শতাংশ স্থল। মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমুদ্র। বিজ্ঞানীদের দাবি, গভীর মহাসাগরের প্রায় ৯৫ শতাংশ অনাবিষ্কৃত রয়ে গিয়েছে।
ভারত তিনটি দিক দিয়ে সমুদ্রবেষ্টিত। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ উপকূলীয় এলাকাগুলিতে বসবাস করেন। পর্যটন কেন্দ্র এবং ব্যবসার কারণেও ভারতের অর্থনীতিতে এই অঞ্চলগুলির বিশেষ অবদান রয়েছে।
এই উদ্যোগের সূচনাকালে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ উল্লেখ বলেন, ‘‘এই বিশেষ প্রযুক্তিটি পলিমেটালিক ম্যাঙ্গানিজ নোডুলস, গ্যাস হাইড্রেটস, হাইড্রোর মতো অজীব সম্পদের অনুসন্ধান চালাতে বিজ্ঞান মন্ত্রককে সহায়তা করবে৷ হাজার থেকে পাঁচ হাজার মিটারের মধ্যে থাকা কোবাল্ট ক্রাস্ট খুঁজতেও সাহায্য করবে এই যান।’’
ভারত সরকার এই অভিযানে ৫ বছরের জন্য ৪,০৭৭ কোটি় বরাদ্দ করেছে।
২০২১-২১ থেকে ২০২৫-২৬ এর মধ্যে এই ডুবোজাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
প্রথম ৩ বছরে আনুমানিক ৩ হাজার কোটি খরচ হবে। বাকি খরচ হবে পরবর্তী দু’বছরে।
এখনও পর্যন্ত আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স এবং চিনের কাছে মানবচালিত এমন ডুবোজাহাজ রয়েছে যা সমুদ্রের গভীরে যেতে পারবে। খুব শীঘ্রই এই দলে নাম লেখাবে ভারত।