দেশের মাটিতে ছুটছে গতিশীল ট্রেন বন্দে ভারত। শুধু গতিশীলই নয়, বিলাসবহুলও বটে। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে বন্দে ভারতে নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তবে একটি ঘটনা থেকে বন্দে ভারতকে কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। যত্রতত্র পাথরের ঘায়ে ক্ষতি হচ্ছে এই সেমি হাইস্পিড ট্রেনের।
বন্দে ভারত লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। যে ঘটনায় স্বভাবতই অস্বস্তি বাড়িয়েছে রেলের। আবার, বন্দে ভারতে নানা বিপত্তির ঘটনাও নেহাত কম নয়।
বার বার বন্দে ভারতকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনায় রেলের বিরাট অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবার সেই ক্ষতির খতিয়ান সংসদে তুলে ধরেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
গত পাঁচ বছরে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার ঘটনায় ৫৫.৬০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে রেলের। লোকসভায় এমনটাই জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
এই প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে বেশ কয়েকটি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে (জুন মাস পর্যন্ত) পাথর ছোড়ার ফলে বন্দে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ৫৫.৬০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’
কিন্তু বন্দে ভারতে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা রোখা হবে কী করে? কী ভাবছে রেল? এই প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, যাত্রী সুরক্ষা এবং রেলের সম্পত্তি রক্ষার জন্য রেল রক্ষী বাহিনী, জিআরপি, জেলা পুলিশ, প্রশাসন মিলে ‘অপারেশন সাথী’ করছে।
কী এই ‘অপারেশন সাথী’? রেলপথ সংলগ্ন এলাকায় চলছে এই অভিযান। পাথর ছোড়া এবং তার পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে বোঝানো হচ্ছে।
রেলমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, পাথর ছোড়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় যাত্রীদের কোনও ক্ষতি হয়নি।
তবে বন্দে ভারতকে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় ফেলেছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। গ্রেফতারির মতো পদক্ষেপ সত্ত্বেও এই ঘটনা রোখা যাচ্ছে না। গত বুধবারই ভোপাল-দিল্লি রুটে বন্দে ভারতকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়।
এর আগে ৫ জুলাই বেঙ্গালুরু-ধারওয়াড় রুট দিয়ে যাওয়ার সময় বন্দে ভারতকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। সেই ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে দুই নাবালককে আটকও করেছিল পুলিশ। তার আগে ওই একই রুটের বন্দে ভারতে পাথর ছোড়া হয় ১ জুলাই।
মে মাসে কেরলের তিরুরেও একই ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেকেন্দ্রাবাদ-বিশাখাপত্তনম রুটে, জানুয়ারি মাসে হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়া হয়।
এ তো গেল পাথর নিক্ষেপের কয়েকটি দৃষ্টান্ত। বন্দে ভারতে যাত্রীদের রসনাতৃপ্তিরও ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ইদানীং গতিশীল ট্রেনের খাবার নিয়েও যাত্রী অসন্তোষ ধরা পড়েছে।
বন্দে ভারতের খাবারের মান নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন এক যাত্রী। তাঁর অভিযোগ, খাবারে আরশোলা ছিল। সুবোধ পহলাজন নামে ওই যাত্রী গত ২৪ জুলাই ভোপাল-দিল্লি রুটের বন্দে ভারতে গোয়ালিয়র পর্যন্ত ভ্রমণ করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ট্রেনের মধ্যে তাঁকে যে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তাতে আরশোলা ছিল। এর আগেও বন্দে ভারতের খাবারের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন যাত্রীদের একাংশ।
বন্দে ভারতের ধাক্কায় গরু, মোষের মৃত্যুর ঘটনাও নেহাত কম নয়। যা নিয়েও অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রেলকে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের দাহনু এলাকায় এই ট্রেনের ধাক্কায় একটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
মোদী সরকারের ‘সাধের ট্রেন’ বন্দে ভারত। কিন্তু দেশের মাটিতে এমন গতিশীল ট্রেন চালানো নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে। যেমন, বন্দে ভারতের মতো দ্রুততম ট্রেন চলাচলের জন্য দেশের রেলপথ কতটা উপযুক্ত, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার, বন্দে ভারতের জন্য বেশি খরচ করতে গিয়ে অন্য যাত্রিবাহী ট্রেনের সুরক্ষায় গাফিলতি থেকে যাচ্ছে কি না, সেই নিয়েও বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর এই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে।