Indian Ammunition

বন্ধু রাশিয়ার সৈন্য সংহারে ভারতীয় গোলাবারুদ ব্যবহার ইউক্রেনের? পাল্টা প্রতিক্রিয়া নয়াদিল্লির

ভারতে তৈরি গোলাবারুদ রুশ সৈন্য সংহারে ব্যবহার করছে ইউক্রেন। বহুজাতিক ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এই প্রতিবেদন ঘিরে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে হইচই। যা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৩
Share:
০১ ২০

ভারতে তৈরি কামানের গোলা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ইউক্রেন ফৌজ। যুদ্ধের মধ্যেই এমনই চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করল বহুজাতিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। যা পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি।

০২ ২০

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলির তৈরি ১৫৫ মিলিমিটারের কামানের গোলা হাতে পেয়েছে ইউক্রেন গোলন্দাজ বাহিনী। ঘুরপথে যা কিভকে সরবরাহ করা হচ্ছে। গোটা বিষয়টি জেনেও চুপ করে রয়েছে নয়াদিল্লি।

Advertisement
০৩ ২০

উল্লেখ্য, ১৫৫ মিলিমিটার ক্যালিবারের গোলা বফোর্স-সহ অধিকাংশ হাউৎজ়ার কামানে ব্যবহার করা হয়। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে পাক ফৌজের থেকে মসকো উপত্যকা পুনর্দখলের জন্য এই গোলা ব্যবহার করেছিল ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী। পাহাড়ি যুদ্ধে নিখুঁত নিশানায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই গোল। এর ধ্বংসক্ষমতাও মারাত্মক।

০৪ ২০

রয়টার্সের দাবি, এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনকে গোলাবারুদ সরবরাহ করছে ভারত। ইটালি থেকে ব্রিটেন হয়ে ঘুরপথে কিভের হাতে পৌঁছচ্ছে ওই সমরাস্ত্র। ইতিমধ্যেই যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে মস্কো।

০৫ ২০

রয়টার্সের প্রতিবেদনে ভারত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং অস্ত্র নির্মাণকারী শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১১টি সূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া শুল্ক দফতরের নানা তথ্যও সেখানে তুলে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির দাবি, নয়াদিল্লি জানে যে ইউরোপে তাঁদের বিক্রি করা অস্ত্র শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোলাবারুদ রফতানি বন্ধ করেনি নয়াদিল্লি।

০৬ ২০

সমরাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ভারতের একটি নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। তা হল, যে দেশ এখান থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনবে, কেবলমাত্র তাঁরাই সেটা ব্যবহার করতে পারবে। ওই অস্ত্র অন্য কোনও দেশ বা গোষ্ঠীকে দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে অস্ত্র রফতানি বন্ধ করতে পারে ভারত।

০৭ ২০

রয়টার্সের প্রতিবেদনে ভারতের তিন জন শীর্ষ আধিকারিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের জুলাইতে রুশ বিদেশমন্ত্রী সর্গেই লেভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিন শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, ওই বৈঠকে অন্তত দু’বার নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন লেভরভ।

০৮ ২০

এই আবহে আবার চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন এক স্প্যানিশ ও এক ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণকারী সংস্থার প্রাক্তন শীর্ষকর্তা। তাঁরা জানিয়েছেন, মূলত দু’টি দেশ ঘুরে ভারতীয় গোলাবারুদ হাতে পাচ্ছে ইউক্রেনের সেনা। সেগুলি হল, ইটালি ও চেক প্রজাতন্ত্র।

০৯ ২০

এই মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে ইউক্রেন, ইটালি, স্পেন ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে রয়টার্স। তবে সেখান থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলে জানিয়েছে এই বহুজাতিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।

১০ ২০

অন্য দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, ইউরোপে সমরাস্ত্র সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করার জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তবে সবটাই নিয়ম মেনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

১১ ২০

এ বছরের জানুয়ারিতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ‘‘ইউক্রেনকে কোনও গোলাবারুদ বিক্রি করা হয়নি।’’ রয়টার্সের ওই রিপোর্টের পরও প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নয়াদিল্লি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘সমরাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণকারী সংস্থাগুলির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। নিয়ম ভেঙে অস্ত্র বিক্রির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এই রিপোর্ট পুরোপুরি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।’’

১২ ২০

যদিও ভারতীয় আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে রিপোর্টে রয়টার্স দাবি করেছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যত গোলাবারুদ ব্যবহার করছে তার এক শতাংশেরও কম নয়াদিল্লির থেকে আমদানি করেছে কিভ। সেই অস্ত্র কোনও ইউরোপীয় দেশের থেকে ইউক্রেন কিনেছে না কি দান হিসেবে পেয়েছে, তা রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়নি।

১৩ ২০

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের উপর হামলা চালায় হামাস জঙ্গি গোষ্ঠী। যার ফলশ্রুতিতে প্রত্যাঘাত হানে ইহুদি ফৌজ। সেই থেকে গাজ়া স্ট্রিপে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে রক্তক্ষয়ী লড়াই। ওই যুদ্ধতেও ইজ়রায়েলি সেনা ভারতের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করছে বলে খবর ছড়িয়েছিল।

১৪ ২০

শুধু তাই নয়, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট দিয়ে ইহুদি সেনা বেছে বেছে গাজ়ার জনবহুল এলাকা ও হাসপাতাল টার্গেট করছে বলেও খবর প্রকাশ করেছিল একাধিক সংবাদমাধ্যম। কিছু ছবিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যা পত্রপাঠ খারিজ করে দেয় নয়াদিল্লি।

১৫ ২০

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিভ যথেচ্ছ ভাবে পাকিস্তানের তৈরি গোলাবারুদ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেনি ইসলামাবাদ।

১৬ ২০

প্রসঙ্গত, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি ইউক্রেনকে লাগাতার হাতিয়ার জুগিয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ান ও আমেরিকাকে পরমাণু হামলার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে রেখেছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করলে ভুগতে হবে বলে বার বার হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।

১৭ ২০

এই পরিস্থিতিতে ঘুরপথে ভারতের থেকে ইউক্রেনের গোলাবারুদ সংগ্রহকে কী চোখে দেখবে মস্কো? ‘বন্ধু’ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে নয়াদিল্লির? ইতিমধ্যেই এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

১৮ ২০

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, রয়টার্সের প্রতিবেদন ভারত-রাশিয়া সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কারণ, নয়াদিল্লি যে ভারসাম্যের রাজনীতি করতে চাইছে তা ভাল ভাবেই বুঝতে পারছে মস্কো। ঘুরপথে সামান্য অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছলে খুশি হবে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশ। তখন তাঁদের সঙ্গে অন্যান্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়াদিল্লির পথে অনেক সহজ হবে।

১৯ ২০

আর এই কারণেই রয়টার্সের ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া দেয়নি মস্কো। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা-সহ সমস্ত পশ্চিমি দেশ। সেই নিষেধাজ্ঞা উ়ড়িয়েই মস্কোর থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনছে নয়াদিল্লি। যা ভারসাম্যের রাজনীতির অঙ্গ বলে দাবি করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

২০ ২০

শুধু তাই নয়, রাশিয়ার থেকে অস্ত্র কেনাও বন্ধ করেনি নয়াদিল্লি। রুশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ হাতে পেয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তলোয়ার ক্লাসের দু’টি যুদ্ধজাহাজও রাশিয়ায় তৈরি করেছে ভারত। যার পরীক্ষামূলক সমুদ্রযাত্রার সময় হাজির ছিলেন খোদ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। খুব অল্প দিনের মধ্যেই ওই দু’টি যুদ্ধজাহাজ হাতে পাবে ভারতীয় নৌসেনা।

সব ছবি: সংগৃহীত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement