ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ফুলেফেঁপে উঠেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে সেই তথ্য। গত এক সপ্তাহে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুক্রবার গত সপ্তাহের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব প্রকাশ করেছে আরবিআই। তাদের সেই পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি ডলারের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
১৪ জুলাইয়ের সপ্তাহের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে আরবিআই। ওই সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ ১২৭৪ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফলে ১৪ জুলাইয়ে ভারতের ভান্ডারে মোট বিদেশি মুদ্রার অর্থমূল্য পৌঁছে গিয়েছিল ৬০ হাজার ৯০২ কোটি ডলার। দীর্ঘ দিন পর তা ৬০ হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছে।
এর আগে গত ১৪ জুলাই পূর্ববর্তী সপ্তাহের যে পরিসংখ্যান আরবিআই প্রকাশ করেছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল ১২২ কোটি বৃদ্ধি পেয়ে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ হয়েছে ৫৯ হাজার ৬২৮ কোটি ডলার।
এর পরের সপ্তাহে বিদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য আরও বেড়েছে। রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিদেশি মুদ্রা ৬০ হাজার কোটির গণ্ডি টপকাতে পেরেছে।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে শেষ বার ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার এতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন মোট সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার অর্থমূল্য ছিল ৬৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
কোভিড অতিমারির মাঝে বিদেশি মুদ্রার এই বৃদ্ধিতে ভারতীয় অর্থনীতির ভান্ডারে চওড়া হয়েছিল হাসি। কিন্তু তার পর থেকে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি কমতে শুরু করে।
ভারতের বাণিজ্যিক বৃদ্ধিকে ত্বরাণ্বিত করতে এর পর নানা পদক্ষেপ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ভারতীয় মুদ্রার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বিদেশি মুদ্রাকে কাজে লাগানো হয়।
অবশেষে আরবিআইয়ের চেষ্টা সফল হয়েছে। ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তারই ফলশ্রুতিতে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ফুলেফেঁপে উঠেছে।
আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র, বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ অ্যান্ড ডিজাইন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে সফ্টওয়্যার পরিষেবা সংক্রান্ত জিনিসপত্র বিদেশে রফতানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরবিআইয়ের গভর্নর। তার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও।
অর্থনীতিবিদেরা জানাচ্ছেন, ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার বৃদ্ধি পাওয়ার নেপথ্যে পরোক্ষে আমেরিকার অনেক অবদান রয়েছে। আমেরিকার অর্থনীতির পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে ভারতের বাজারে।
বিশ্ব জুড়ে আমেরিকার ডলার কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প হিসাবে চিন, রাশিয়া কিংবা অন্য কোনও দেশের মুদ্রা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডলারের গুরুত্ব কমে যাওয়ায় অনিবার্য ভাবেই অন্য বৈদেশিক মুদ্রার গুরুত্ব কিছুটা বাড়ছে। সেই প্রেক্ষিতে ভারতের টাকাও আন্তর্জাতিক বাজারে মাথা তুলছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে টাকার ব্যবহার বাড়লে বৃদ্ধি পাবে তার গুরুত্বও। আর তা হলেই ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার দাম বৃদ্ধি পাবে।
শুক্রবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক আমেরিকান ডলার ভারতীয় মুদ্রায় ৮১.৯৪৫ টাকার সমান। ওই সপ্তাহে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।