২০২২ সালের জানুয়ারি মাস। নতুন বছরের শুরুতেই সকলকে চমকে দিয়ে ভারতের টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। টি২০ এবং এক দিনের ম্যাচের নেতৃত্ব থেকে তার আগেই তিনি অব্যাহতি পেয়ে গিয়েছেন।
বিরাট কোহলি পরবর্তী সময়ে ভারতীয় দলের হাল ধরেন রোহিত শর্মা। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি২০, বিরাটের পর তাঁকেই দেওয়া হয় নেতৃত্বের ভার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রোহিতের নেতৃত্বে ৫ দিনের ম্যাচ খেলছে ভারত।
ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলে ২০২২ ছিল পালাবদলের সময়। নেতৃত্বে রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে দলের চরিত্রই যেন পাল্টে গিয়েছে। বিরাটের ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের মতো করে দল সাজিয়েছেন রোহিত।
অধিনায়ক হিসাবে বিরাট এবং রোহিতকে নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে চর্চা চলছেই। দাঁড়িপাল্লায় কেউ বিরাটকে এগিয়ে রাখেন তো কারও বিচারে এগিয়ে থাকেন রোহিত।
অনেকের মতে, রোহিতের নেতৃত্বে খেলতে গিয়ে ভারতের বেশ কয়েক জন তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার মিইয়ে পড়ছেন। হাত খুলে খেলতেই পারছেন না তাঁরা। পাচ্ছেন না যথেষ্ট সুযোগ। বিরাটের নেতৃত্বে এই ক্রিকেটারদের পরিসংখ্যান কিন্তু চোখ ধাঁধানো।
প্রথমেই বলতে হয় ময়াঙ্ক আগরওয়ালের কথা। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের তরুণ প্রজন্মের অন্যতম ময়াঙ্ক। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান বলছে তাঁর রানের গড় ৪৪.১২। ওই বছর ময়াঙ্ক করেছেন মোট ৩৫৩ রান।
২০২১ সালে ময়াঙ্কের নামে একটি টেস্ট সেঞ্চুরি এবং দুই অর্ধশতরান রয়েছে। অন্য দিকে, ২০২২ সালে তাঁর টেস্ট পরিসংখ্যান একেবারেই ভাল নয়। ৭ ইনিংস খেলে মোট ১৩০ রান করেছেন তিনি। রোহিতের নেতৃত্বে ময়াঙ্কের গড় মাত্র ১৮.৫৭।
ভারতের আর এক তরুণ প্রতিভা ওয়াশিংটন সুন্দরও বিরাটের পর রোহিতের নেতৃত্বে ভাল খেলতে পারেননি। ২০২১ সালে ৪টি ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ইকোনমি রেট ছিল ৮.৯০। তার আগের বছরও বল হাতে দুরন্ত প্রদর্শন করেন এই স্পিনার। ৭.৮০ ইকোনমি রেটে ৭ ম্যাচ খেলে তিনি তুলে নেন ৬ উইকেট।
তবে ২০২২ সাল ওয়াশিংটনের জন্য খুব একটা ভাল যায়নি। একটি মাত্র ২০ ওভারের ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তাতে ১টি উইকেট পান। ইকোনমি রেট ছিল ১২। এর পর প্রথম একাদশে আর সুযোগই দেওয়া হয়নি ওয়াশিংটনকে।
পরিসংখ্যান বলছে ২০ ওভারের খেলায় ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উইকেটরক্ষক তথা ব্যাটার ঋষভ পন্থের প্রদর্শনও বিরাটের চেয়ে রোহিতের নেতৃত্বে খানিক ম্রিয়মান। ২০২১ সালে ১০টি ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৩০.৪২।
অন্য দিকে, ২০২২ সালে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে পন্থের টি২০ কেরিয়ারের গড় মাত্র ২১.৩৪। তিনি এ বছর ২১টি ম্যাচ খেলে করেছেন মোট ৩৬৪ রান।
ভারতের বর্তমান সহ-অধিনায়ক তথা ওপেনার লোকেশ রাহুলের পরিসংখ্যানও অধিনায়ক বিরাটের সময়ে বেশি ভাল। গত বছর তিনি ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলে মোট ৪৬১ রান করেছিলেন। গড় ছিল ৪৩.১২।
২০২২ সালে ২টি টেস্ট খেলেছেন রাহুল। তাঁর গড় মাত্র ২০। রোহিতের নেতৃত্বে ২টি ম্যাচে তিনি সবমিলিয়ে করেছেন ৮০ রান।
আর এক ভারতীয় স্পিনার অক্ষর পটেলের টেস্ট কেরিয়ারের দিকে চোখ রাখলে উঠে আসে একই রকম পরিসংখ্যান। বিরাটের নেতৃত্বে ১০টি টেস্টে অক্ষর মোট ৩৬টি উইকেট নিয়েছিলেন। তাঁর ইকোনমি রেট ছিল ১১.৮৬।
২০২২ সালে রোহিতের নেতৃত্বে অক্ষর খেলেছেন ২টি টেস্ট। ৩টি উইকেট পেয়েছেন তিনি। তাঁর বোলিং গড় ১৯.৩৩। একাধিক টেস্ট ম্যাচে অক্ষরকে প্রথম একাদশে রাখেননি রোহিত।
কখনও সতীর্থদের সঙ্গে ব্যবহার, মাঠে আচরণ, কখনও প্রথম একাদশ বাছাই— নানা কারণে বার বার বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন ভারতের নতুন অধিনায়ক। বিরাট অনুরাগীদের অভিযোগ, রোহিত মাঠে এবং মাঠের বাইরে সতীর্থদের সঙ্গে আশানুরূপ ব্যবহার করেন না।
অনেকে আবার এ-ও বলেন, বিরাট তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি ম্যাচের পর ম্যাচ যে ভাবে ভরসা রাখতেন, তাঁদের পাশে থেকে যে ভাবে সাহস জোগাতেন, তা রোহিত করেন না। অধিনায়ক হিসাবে এটিকে রোহিতের নেতিবাচক দিক হিসাবে তুলে ধরেন কেউ কেউ।