জল, স্থল আকাশ— তিন বাহিনী দিয়ে সাজানো ভারতের সেনাবাহিনী। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশরক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন এই বাহিনীর সদস্যেরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যেক জওয়ানের জীবন দেশের কাজে উৎসর্গীকৃত।
দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে, কনকনে ঠান্ডায় কিংবা ধু ধু মরু প্রান্তরে, সেনা জওয়ানেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। উত্তাল সমুদ্রে কাটে তাঁদের বিনিদ্র রাত। শত্রুর আক্রমণেও প্রাণ দিতে হয় তাঁদেরই।
যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সবার আগে ডাক পড়ে সেনা জওয়ানদের। উদ্ধারকাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তাঁরাই। যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রশিক্ষিত ভারতের সৈনিকেরা।
ভারতের সেই জল, স্থল এবং আকাশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে এ বার নতুন এক ‘হাত’ জুড়তে পারে। তৈরি হতে পারে মহাকাশ বাহিনী। সম্প্রতি তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন এক প্রবীণ সেনাকর্তা।
ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভাদৌরিয়া একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সম্প্রতি মহাকাশ বাহিনী সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হন। তিনি জানান, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও গ্রহণ করা হয়নি।
আমেরিকার সেনাবাহিনীতে স্থল, জল এবং বিমান বাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে মহাকাশ বাহিনী। মহাকাশের জন্য স্বতন্ত্র বাহিনী প্রস্তুত করেছে আমেরিকা। অর্থাৎ, তাদের সেনায় তিনের পরিবর্তে রয়েছে চারটি বাহিনী।
ভারতও কি তবে সেনাসজ্জার ক্ষেত্রে আমেরিকার পথেই পা বাড়াবে? আমেরিকান বাহিনীর ধাঁচেই কি ভারতে তৈরি হবে আলাদা মহাকাশ বাহিনী?
বিষয়টি তেমন নয়। ভারতের ভাবনা খানিকটা আলাদা। মহাকাশ বাহিনী হিসাবে আলাদা করে কোনও বাহিনী গড়ার পরিকল্পনা নেই ভারতের। বরং ভারতীয় বায়ুসেনারই একটি অঙ্গ হিসাবে কাজ করার কথা মহাকাশ বাহিনীর।
এয়ার চিফ মার্শাল জানান, ভারতীয় বায়ুসেনার নাম বদলে ভারতীয় বায়ু এবং মহাকাশ সেনা করা হতে পারে। বায়ুসেনার তরফে তেমন একটি প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাখা হয়েছে।
তবে গোটা বিষয়টাই এখনও মাঝপথে ঝুলে রয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। বায়ুসেনার তরফে মহাকাশ বাহিনীকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে।
শুক্রবারের অনুষ্ঠানে এয়ার চিফ মার্শাল মহাকাশ বাহিনীর উপকারিতার কথাও জানান। তিনি জানান, আমেরিকা নয়, ফ্রান্সের বাহিনীর সঙ্গে এই পরিকল্পনার মিল রয়েছে। ফরাসি সেনাবাহিনীর বায়ুসেনার নাম বিমান এবং মহাকাশ বাহিনী।
কী করবে মহাকাশ বাহিনী? মূলত বায়ুসেনার সঙ্গে সমন্বয় রেখেই এগিয়ে চলেন মহাকাশ সৈনিকেরা। আমেরিকার মহাকাশ বাহিনীর অন্যতম প্রধান কাজ মহাকাশ অভিযানে সাহায্য করা।
মহাকাশে আমেরিকা এবং তার বন্ধু দেশগুলির আগ্রহ অনুযায়ী কাজ করেন আমেরিকান মহাকাশ বাহিনীর সদস্যেরা। সেই মতোই তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আমেরিকার বিভিন্ন মহাকাশযানের উৎক্ষেপণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে মহাকাশ বাহিনী। এ ছাড়া, প্রয়োজন অনুযায়ী বায়ুসেনার কাজ ভাগ করে নেওয়াও তাদের কাজ।
ভারতীয় বায়ুসেনায় মহাকাশ বাহিনীর ভূমিকাও তেমনই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই বাহিনী আসলে হবে বিমান বাহিনীরই খানিক সম্প্রসারণ। মহাকাশ সংক্রান্ত কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন মহাকাশ সৈনিকেরা।
ভারতীয় বায়ুসেনার বক্তব্য, কাজ অনুযায়ী বিমানের পাশাপাশি মহাকাশ সৈনিকের আখ্যাও তাদের পাওয়া উচিত। সেই মর্মে সরকারের কাছে তারা প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাব গৃহীত হয় কি না, মহাকাশ বাহিনীর বিষয়টি কী ভাবে সেনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেটাই এখন দেখার।