সকালটাই দিন দেখায়! সব সময় সঠিক নয়। অন্তত রবিবার ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের ক্ষেত্রে তা একেবারেই সঠিক হল না। ম্যাচের প্রথমার্ধে ভারতকে যথেষ্ট হোঁচট খেতে দেখা গেলেও শেষ বাজি তারাই জিতে নেয়।
রোহিতের বিধ্বংসী ব্যাটে এবং মহম্মদ শামির দু্র্দান্ত বলে প্রায় উড়ে গেল ইংল্যান্ড। ১০০ রানে তাদের হারাল ভারত। এই নিয়ে বিশ্বকাপে টানা ছ’টি ম্যাচ জিতল তারা।
রবিবার লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে ছিল ম্যাচ। দুপুর থেকে ছিল টানটান উত্তেজনা। ভারত টসে হেরে যায়। ইংল্যান্ড প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়। প্রথম দিকে একের পর এক ব্যাটার আউট হয়ে যান। চার ওভারের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় ভারত। ৯ রান করে আউট হয়ে যান শুভমান গিল।
ডেঙ্গি হওয়ার কারণে বিশ্বকাপের প্রথম দু’টি ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি। সে কারণে মানসিক চাপে ছিলেন। শুভমান নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁর ছ’কেজি ওজন কমে গিয়েছে। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমে সেই ধাক্কা সামলাতে বেগ পেতে হয়। তার মধ্যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে ৯ রানের মাথায় আউট।
শুভমন আউট হলে মাঠে নামেন বিরাট কোহলি। ভক্তদের তাঁর কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেকটাই। তবে ৯ বলে শূন্য রান করে আউট হয়ে যান তিনি।
আউট হওয়ার পর নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি কোহলি। সাজঘরে ফিরে সোফায় ঘুষি মারতে দেখা যায় তাঁকে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই একটু সমস্যায় পড়েছেন বলে দেখা যাচ্ছিল বিরাটকে। পিচ ব্যাটিং সহায়ক না হওয়ায় স্বাভাবিক শট খেলতে সমস্যা হচ্ছিল।
এর পর শ্রেয়স আইয়ার করেন ১৬ বলে ৪ রান। একের পর এক ব্যাটার যখন আউট হয়ে যাচ্ছেন, তখন এক দিক ধরে রাখেন রোহিত শর্মা। ১০১ বলে ৮৭ রান করেন তিনি।
শতরান হাতছাড়া হয়েছে রোহিতের। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো স্কোর করতে সাহায্য করেছেন তিনি। সামনে থেকে লড়াই করে যোগ্য অধিনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন।
ভারতের অধিনায়ক টপকে গেলেন সচিন তেন্ডুলকরকে। টি-টোয়েন্টি এবং এক দিনের বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ রানের নিরিখে এখন বিরাট কোহলির পরেই রয়েছেন রোহিত। দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৫৯ ম্যাচে কোহলির রান ২,৫২৫। রোহিত রয়েছেন ঠিক তাঁর পিছনে। এক দিনের বিশ্বকাপে তাঁর রান ১৩৭০। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৯৬৩ করেছেন। সচিন শুধুমাত্র এক দিনের বিশ্বকাপই খেলেছেন। তিনি ৪৫টি ম্যাচে ২,২৭৮ রান করেছেন। ৬টি শতরান এবং ১৫টি অর্ধশতরান রয়েছে। অন্য দিকে, দু’টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে রোহিতের ৭টি শতরান এবং ৯টি অর্ধশতরান রয়েছে।
রোহিতকে সঙ্গত দিয়েছেন কেএল রাহুল। ভারত তিন উইকেট হারিয়ে যখন বেশ বিপাকে তখন খেলতে নেমে ৫৮ বলে ৩৯ রান করেন তিনি।
ভারতকে বাকিটা উতরে দেয় সূর্যকুমার যাদবের ঝোড়ো ইনিংস। ৪৭ বলে ৪৯ রান করেন তিনি। তাতেই ভারতের মোট রান দাঁড়ায় ২২৯। ইংল্যান্ডের ডেভিড উইলি নিয়েছেন তিন উইকেট। ১০ ওভার বল করে দিয়েছেন ৪৫ রান।
সেই রান তাড়া করতে নেমে বেশ বিপাকেই পড়ে ইংল্যান্ড। তাদের কোনও ব্যাটার ৩০-এর বেশি রান করতে পারেননি। সর্বোচ্চ রান করেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ৪৬ বলে ২৭ রান করেছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের তিন ব্যাটার খাতা না খুলেই আউট হয়েছেন। জো রুট, বেন স্টোকস, মার্ক উড।
ইংল্যান্ডের এই ব্যাটিং লাইন-আপকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন মহম্মদ সামি। চার উইকেট নিয়েছেন তিনি। সাত ওভার বল করে ২২ রান দিয়েছেন। একটুর জন্য মিস হয়েছে হ্যাটট্রিক।
সামির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপক্ষকে ধ্বংস করেছেন যশপ্রীত বুমরা। তিনি তিন উইকেট নিয়েছেন। ৬.৫ ওভার বল করে দিয়েছেন ৩২ রান। কুলদীপ যাদব ২ উইকেট এবং রবীন্দ্র জাডেজা ১ উইকেট পেয়েছেন।
রবিবার ভারতীয় ক্রিকেটারেরা হাতে কালো ব্যান্ড পরে লখনউয়ের মাঠে নামেন। ভারতীয় সাজঘরে থাকা কোচ রাহুল দ্রাবিড় ও ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌরের জার্সিতেও কালো ব্যান্ড দেখা গিয়েছে।
গত সোমবার, ২৩ অক্টোবর প্রয়াত হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বিষাণ সিংহ বেদী। ভারতীয় ক্রিকেটে বড় নাম ছিলেন বেদী। তাঁকে স্মরণ করেই কালো ব্যান্ড পরে নেমেছেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। মনে করা হচ্ছে, প্রাক্তন ক্রিকেটারকে ক্রিকেটের মাধ্যমেই শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাল ভারতীয় দল।