আবারও একটা বিশ্বকাপ। আবারও একটা ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ। পূর্বোক্ত দু’টি লাইনে যেমন অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই, ম্যাচের ফলাফলেও তেমনই অতীতেরই পুনরাবৃত্তি। পাকিস্তানকে কার্যত দুরমুশ করে আমদাবাদের লড়াই অনায়াসে জিতে নিল রোহিত শর্মার ভারত।
বিশ্বকাপের সবচেয়ে হাই ভোল্টেজ ম্যাচের প্রথমার্ধেই কার্যত ঠিক হয়ে গিয়েছিল ফলাফল কী হতে চলেছে। বাকিটা কেবল সেই চিত্রনাট্য মেনে ধীরেসুস্থে এগিয়ে যাওয়া। বিগত বিশ্বকাপগুলির মতো ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপেও বদলাল না সেই পরিস্থিতি। বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারত আবারও পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করল।
পাকিস্তানের কষ্টার্জিত ১৯১ রান তাড়া করতে ভারতের হয়ে ওপেন করেন রোহিত এবং শুভমন গিল। ডেঙ্গিজয় করে মাঠে ফেরার পর শুভমন কেমন খেলবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল ক্রিকেটমহলে। অন্য দিকে, পাকিস্তানের অন্যতম সেরা জোরে বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদির ভিতরে ঢুকে আসা বল রোহিত কী ভাবে সামলাবেন, তা নিয়েও সংশয় ছিল। যদিও ম্যাচের প্রথমার্ধেই বোঝা গিয়েছিল, নিষ্প্রাণ পিচে তেমন কোনও সুবিধা অবশিষ্ট নেই জোরে বোলারদের জন্য। কিন্তু ক্রিকেটকে বলা হয় মহান অনিশ্চয়তার খেলা। তাই কখন যে পিচ চরিত্র বদলে ফেলে, তা বোঝা মুশকিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তেমন কিছুই ঘটল না।
রোহিত আর শুভমন শুরুটা করেন ঝড়ের গতিতে। তবে ম্যাচের রাশ বরাবরই ছিল অধিনায়ক রোহিতের হাতে। যখন যেমন ইচ্ছে, শনিবারের আমদাবাদে রোহিত ঠিক তেমনই বল পাঠালেন গ্যালারিতে। না শাহিন শাহ, না হ্যারিস রউফ, শাদাব খান— কোনও বোলারই সামান্যতম দাগও কাটতে পারেননি। অবলীলায় রোহিত সকলকেই একে একে ফেলেছেন লক্ষাধিক দর্শকের গ্যালারিতে। আর গোটা দেশ লাফিয়ে উঠেছে ‘আটে আট’ করার স্বপ্নে বলিয়ান হয়ে। মোট ৬৩ বল খেলেছেন রোহিত, করেছেন ৮৬ রান। তার মধ্যে রয়েছে ছ’টি বিরাট ছক্কা এবং সমসংখ্যক বাউন্ডারি। দিনের শেষে ক্যাপ্টেন রোহিতকে ১০-এর মধ্যে দিতে হচ্ছে ৯। ম্যাচ শেষ করে ফিরতে পারলেন না, শুধুমাত্র এই কারণে এক নম্বর কাটা গেল ৪৫ নম্বর জার্সিধারীর।
শুভমন গিলের লড়াইটা ছিল দ্বিমুখী। প্রথমত, ডেঙ্গি থেকে সুস্থ হওয়ার পর শরীর মাঠে কতটা সঙ্গ দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন বহু ক্রিকেটপ্রেমী। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের জোরে বোলারদের কী ভাবে মোকাবিলা করবেন, সেই লড়াইও জিতে নিলেন অনায়াসেই। মাত্র ১১ বল খেলেছেন শুভমন, করেছেন ১৬ রান। পুরো রানই এসেছে তাঁর সপাটে মারা চারটি বাউন্ডারিতে। তবে দ্রুত আউট হয়ে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন আইকন। আনন্দবাজার অনলাইন ১০-এর মধ্যে শুভমনকে দিচ্ছে ৫।
তিনে নামেন বিরাট কোহলি। তবে তিনিও বেশি ক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। মোট ১৮টি বল খেলেছেন কোহলি, করেছেন ১৬ রান। মেরেছেন ৩টি বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত হাসান আলির বলে সোজা মারতে গিয়ে টাইমিংয়ের গোলমালে বল চলে যায় মহম্মদ নওয়াজের হাতে। সেই ক্যাচ ফেলেননি নওয়াজ। ১০-এর মধ্যে আনন্দবাজার অনলাইন বিরাটকে দিচ্ছে ৫।
চারে ব্যাট করতে আসেন শ্রেয়স আইয়ার। তাড়াহুড়ো করার কোনও কারণ ছিল না। শ্রেয়স তা করেনওনি। ধীরেসুস্থে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান মহার্ঘ জয়ের দিকে। যদিও এই ম্যাচেও দ্রুত গতির শর্ট বলের বিরুদ্ধে শ্রেয়সের অস্বস্তি চাপা থাকেনি। রউফ তা বুঝতে পেরেই পর পর শর্ট বল করা শুরু করেন। যথারীতি সমস্যায় পড়ে যান শ্রেয়স। কিন্তু হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ম্যাচ বার করে নিয়ে যান তিনি। ৬২ বল খেলে করেন মহামূল্যবান ৫৩ রান। মেরেছেন দু’টি পেল্লায় ছক্কা। ১০-এর মধ্যে শ্রেয়সকে দেওয়া যেতে পারে ৮।
ভারতের পাঁচ নম্বর ব্যাটার কেএল রাহুল। তিনি এমন সময় ব্যাট করতে নামলেন যে, তখন আর বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট নেই ম্যাচের। সেই অনুযায়ীই খেললেন দক্ষিণের এই শিল্পী ব্যাটার। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ২৯ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন রাহুল। ১০-এর মধ্যে আনন্দবাজার অনলাইন তাঁকে দিচ্ছে ৬।
পাকিস্তানের বোলারদের বিশেষ কিছুই করার ছিল না। কিন্তু তার মধ্যেও যতটা সম্ভব লড়াই দিলেন শাহিন শাহ। তবে দিনটা তাঁর ছিল না। ৬ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৬ রান দেন শাহিন। তুলে নেন রোহিত এবং শুভমন— দুই ওপেনারকেই। যদিও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ১০-এর মধ্যে বোলার শাহিন পাচ্ছেন টেনেটুনে ৫।
বিরাট কোহলির উইকেট পেয়েছেন হাসান আলি। ৬ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৪ রানে একটি উইকেট পান। ১০-এর মধ্যে হাসান আলিকে আনন্দবাজার অনলাইন দিচ্ছে ৩।
মহম্মদ নওয়াজ থেকে হ্যারিস রউফ, শাদাব খান— কেউই দাগ কাটতে পারেননি। দু’শো রানের কম পুঁজি নিয়ে অবশ্য ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বোলারদের তেমন কিছু করারও থাকে না। আনন্দবাজার অনলাইন নওয়াজ, রউফ এবং শাদাবকে ১০-এ দিচ্ছে ২।
ব্যাটিংয়েও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কহতব্য কিছুই নেই। আবদুল্লাহ্ শফিক এবং ইমাম উল হক খুব বেশি এগোতে না পারলেও শুরুটা ভালই করেছিলেন। বিশ্বকাপের বড় ম্যাচে তাদের ২০ এবং ৩৬ রান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, কার্যত কোনও প্রভাবই থাকল না তাঁদের ইনিংসের। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তাঁরা পাবেন ১০-এর মধ্যে ৪।
পাকিস্তানের ইনিংসকে কিছুটা টেনে নিয়ে যান অধিনায়ক বাবর আজ়ম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ান। ৩০ নম্বর ওভারে তৃতীয় উইকেট পড়ে। অর্ধশতরান করার পরেই সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাবর। তিনি পাবেন ৬।
কুলদীপ যাদবের বলে আউট হন সাউদ সাকিল। তাঁর অবদান ১০ বলে মাত্র ৬ রান। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তাঁর প্রাপ্য ১০-এর মধ্যে ৩।
একই ওভারে ইফতিকারকে ফেরান কুলদীপ। তিনি ৪ বল খেলে একটি মাত্র বাউন্ডারি মারতে পেরেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তাঁর প্রাপ্য ১০-এর মধ্যে ২।
৩৪ নম্বর ওভারে মহম্মদ রিজ়ওয়ানকে আউট করেন বুমরা। অর্ধশতরান থেকে মাত্র এক রান দূরে ছিলেন পাক ব্যাটার। তাঁর ইনিংসও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত আমদাবাদের ম্যাচে। কিন্তু দিনের শেষে হতাশা ছাড়া কিছুই পেলেন না পাক ব্যাটার। তিনি পাচ্ছেন ৬।
শাদাব খানও ব্যাট হাতে বিশেষ কিছু করতে পারেননি। পাঁচ বলে মাত্র ২ রান করে বুমরার বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তাঁরও প্রাপ্য ১০-এর মধ্যে ২।
১৪ বলে ৪ রান করে ফেরেন মহম্মদ নওয়াজ়। মনে রাখার মতো কিছু তিনি করতে পারেননি। তিনি পেলেন ১০-এ ২।
এর পর হাসান আলিকে ফেরান রবীন্দ্র জাডেজা। তাঁর অবদান ১৯ বলে ১২ রান। দু’টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তাঁর প্রাপ্য ৩।
হ্যারিস রউফের অবদান ৬ বলে মাত্র ২ রান। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে ব্যাটার রউফের প্রাপ্য ১।
ভারতের মহম্মদ সিরাজ পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ২টি উইকেট নেন। বাবর এবং ওপেনার আবদুল্লাহ্কে ফেরান তিনি। তাঁর প্রাপ্য ১০-এ ৮।
যশপ্রীত বুমরাও ২টি উইকেট নেন। সঠিক সময়ে রিজ়ওয়ানকে ফেরাতে না পারলে ম্যাচের গতি অন্য দিকে ঘুরে যেতে পারত। বুমরার জন্য তা হয়নি। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তাঁর প্রাপ্য ৮।
পাকিস্তান ম্যাচে হার্দিকের আগ্রাসন আলাদা করে নজর কেড়েছে। তাঁর ঝুলিতে ওপেনার ইমাম-সহ ২টি উইকেট। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তাঁর প্রাপ্য ৭।
কুলদীপ পাকিস্তানের দু’টি উইকেট নিয়েছেন। এক ওভারে পর পর দু’টি ধাক্কা তিনি দিয়েছেন পাক শিবিরকে। তাঁর প্রাপ্য ৮।
জা়ডেজা ২টি উইকেট নিয়েছেন। তাঁর শিকার হাসান আলি এবং হ্যারিস রউফ। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তাঁর প্রাপ্য ৬।