এত দিন ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে যে দৃশ্য দেখা যেত, এখন কি সেটাই ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের ছবি? দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা এবং খেলার মাঠের খেলোয়াড়ি মানসিকতা— এই দুই বাদে আর কিছুই যেন মিলছে না দুই প্রতিবেশী দেশের। পান থেকে চুন খসলেই লেগে যাচ্ছে দু’দলের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাডিলেড ওভালে বুধবার ভারত নেমেছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের ম্যাচে। সেই ম্যাচেই খেলা ছাপিয়ে এখন তোলপাড় ফেলে দিচ্ছে একের পর এক বিতর্ক আর ঝগড়া।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারত ৫ রানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। কিন্তু ভারতের জয় কি সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক? বাংলাদেশের দিকে তাকালে কিন্তু তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কখনও কোহলির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আবার কখনও হার্দিকের ওয়াইড বল বিতর্ক, বিশ্বকাপের ক্রিকেট ম্যাচ যেন ঝগড়া-ঝামেলারও বিশ্বকাপ!
অ্যাডিলেডে হঠাৎ বিরাট কোহলি এবং শাকিব আল হাসানের মধ্যে বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। ভারত ব্যাট করার সময় আম্পায়ারের একটি নো বলের সিদ্ধান্তে বিতর্কের শুরু। তাতেই ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া বেঁধে যায় বাংলাদেশ অধিনায়কের।
১৫তম ওভারে হাসান মেহমুদের ওভারের শেষ বলটি ছিল বাউন্সার। বিরাট কোনও রকমে তাতে ব্যাট লাগান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দেখা যায় আম্পায়ারকে ডান হাত দিয়ে নো বলের ইঙ্গিত করতে। আম্পায়ারও নো ডাকেন।
তাতেই আপত্তি শাকিবের। বাংলাদেশের অধিনায়ককে দেখা যায় দৌড়ে এসে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে। তিনি বোঝাতে চান যে, বিরাট কখনও আম্পায়ারকে বলতে পারেন না নো বল দিতে। শাকিব এবং আম্পায়ারের মাঝে ঢুকে পড়েন বিরাট। তিনি শাকিবকে বোঝাতে শুরু করেন যে, ওটা নো বলই ছিল। শাকিব তাঁকেও কিছু বলেন।
শাকিব বনাম কোহলি ঝগড়া চলেছে, এটা ঠিক। কিন্তু সব কিছুই চলল হাসি মুখে। প্রাথমিক ভাবে শাকিব মেজাজ হারালেও বিরাটের সঙ্গে কথা বলার সময় দু’জনেরই মুখে হাসি লেগে ছিল শেষ পর্যন্ত। সুনাম বজায় রইল ‘জেন্টলম্যানস গেম’-এর।
পরের বিতর্কে অবশ্য বাংলাদেশ নেই। তা ভারতীয় দলের দুই তারকা ব্যাটারের মধ্যে। প্রথম চরিত্রের নাম বিরাট কোহলি, দ্বিতীয় চরিত্র দীনেশ কার্তিক। ঘটনাস্থল, অ্যাডিলেড ওভালের ২২ গজ।
১৬তম ওভারে শরিফুলের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে কোহলি। বিরাট ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় এক্সট্রা কভারের দিকে। তিনি রান নিতে দৌড় শুরু করেও থেমে যান। কার্তিক তত ক্ষণে অনেকটা পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দেন বিরাট। কিন্তু ক্রিজে ফেরার আগেই শরিফুল উইকেট ভেঙে দেন।
আউট হওয়ার পর বিরক্তি প্রকাশ করেন কার্তিক। তাঁকে দেখা যায় বিরাটের সঙ্গে কথা বলতে। এর পর মাথা নাড়তে নাড়তে মাঠ ছাড়েন ভারতীয় উইকেটরক্ষক। হাতের ইশারায় কোহলিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, বল কোথায় আছে তা দেখেও কেন তিনি দৌড়তে শুরু করলেন?
পরের বিতর্কের কেন্দ্রে হার্দিক পাণ্ড্য। তাঁর শেষ বলটি কি ওয়াইড ছিল? আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বলটি ওয়াইড ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটার নুরুল হাসান তা মানতে চাননি। তিনি দাবি করেন বলটি ওয়াইড ছিল।
বাংলাদেশের ইনিংসের ১৫তম ওভার চলছিল। বৃষ্টির জন্য সেই ইনিংস ছিল ১৬ ওভারের। অর্থাৎ শেষ ওভারের আগের ওভারে খেলা চলছিল। শেষ বলটি করার আগে নুরুল অফ স্টাম্পের বাইরে ছিলেন। হার্দিকের বলটি ওয়াইড লাইনের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি লাইনের মধ্যে ছিল।
শেষ ওভারে ২০ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু নুরুল এবং তাসকিন আহমেদ ১৪ রান তুলতে পারেন। ৫ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। তাদের সমর্থকদের আফসোস থেকে যাবে ওই ওয়াইডটি নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন ওটা ওয়াইড হলে পাল্টে যেতে পারত ম্যাচের ফল।
বাংলাদেশের ইনিংসের সপ্তম ওভারে অফে বল ঠেলে দিয়ে রান নিতে যান লিটন। কোহলি দাঁড়িয়েছিলেন পয়েন্টে। আরশদীপ বল ছুড়ে ফেরত পাঠানোর সময়েই কোহলি বল কুড়িয়ে ছুড়ে দেওয়ার ভঙ্গি করেন।
মাঠের দুই আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস এবং ক্রিস ব্রাউনের নজর এড়িয়ে যায় এই ঘটনা। তৃতীয় আম্পায়ারও আপত্তি করেননি। বাংলাদেশের দুই ব্যাটারের তরফেও কোনও প্রতিবাদ আসেনি।
আইসিসির ৪১.৫ ধারা অনুযায়ী, ব্যাটারকে কোনও ভাবে বাধা দিলে বা বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করলে আম্পায়াররা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে বিপক্ষ দলকে পাঁচ রান শাস্তি হিসাবে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মাঠের দুই আম্পায়ার মনে করেননি, কোহলি কোনও অপরাধ করেছেন।
বাংলাদেশ শিবিরে এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। ম্যাচের পর মিক্সড জ়োনে কোহলির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, “আমরা সবাই জানতাম মাঠ ভিজে ছিল। তার মধ্যে ভুয়ো থ্রো করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের পাঁচ রান পাওয়া উচিত ছিল। তা হলে আমাদের দিকে ম্যাচ ঘুরে যেত। দুর্ভাগ্যবশত, সেটা হয়নি।”