সফল ভাবে নিজেদের দ্বিস্তরীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী (ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স বা বিএমডি) ব্যবস্থার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা করল ভারত। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ৫০০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার সফল ‘ফ্লাইট’ পরীক্ষাটি করেছে ভারতীয় ‘প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা’ (ডিআরডিও)। বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর তরফে এ খবর জানানো হয়েছে।
ওড়িশার চাঁদিপুরের ‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ’ (আইটিআর) থেকে নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সফল ফ্লাইট পরীক্ষার জন্য ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ডিআরডিও সূত্রে খবর, শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিরোধে কার্যকরী হবে এই নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ভারতীয় সেনার নতুন ‘স্ট্র্যা়টেজিক ফোর্স কমান্ড’-এর তত্ত্বাবধানে আগেই এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারিক কৌশল ও লক্ষ্যভেদের সক্ষমতার প্রাথমিক পরীক্ষা হয়েছে। বুধবার হল দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা।
তবে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘অগ্নি’ সিরিজর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নয় বলে ডিআরডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই পরীক্ষার জন্য ভারত নিজেদেরই একটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের অনুকরণ করে ছোড়া ওই ‘টার্গেট’ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমে ওড়িশার ধামরা মিসাইল লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে ৪টে ২০ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ক্ষেপণাস্ত্রটি এমন ভাবে ছোড়া হয়েছিল যে, তা শত্রুদেশের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো আচরণ করছিল।
কিন্তু স্থল এবং সমুদ্রে থাকা রাডার দ্রুত ওই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে শনাক্ত করে ফেলে। এর পরেই বিএমডি সিস্টেম বালেশ্বরের চাঁদিপুর থেকে ৪টে ২৪ মিনিটে ‘অ্যাডভান্সড এরিয়া ডিফেন্স’ ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য কাজ শুরু করে।
ডিআরডিও সূত্রে খবর, এর কিছু ক্ষণের মধ্যে নিজেদের দিকে ছোড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয় ভারতের পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কোনও শক্তিধর আকাশ প্রতিরোধক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি ভারত। বিএমডি সিস্টেম এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। যদি সমস্ত পরীক্ষা সফল হয়, তা হলে ২০২৮-’২৯ সালের মধ্যেই ভারত তার প্রথম আকাশ প্রতিরোধক ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের হাতে এখনও পর্যন্ত নিজস্ব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা না থাকলেও চিন, রাশিয়া, আমেরিকা, ইজ়রায়েলের কাছে নিজেদের আকাশকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা আছে।
যদি ডিআরডিও সফল ভাবে দ্বিস্তরীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলতে পারে, তা হলে চিন, রাশিয়া, আমেরিকা, ইজ়রায়েলের সঙ্গে সেই তালিকায় নাম উঠবে ভারতেরও। ইউরোপের কিছু দেশও ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ থাকার দাবি করে। কিন্তু তার কোনও প্রমাণ নেই।
ভারতের বিএমডি সিস্টেম তৈরি হয়ে গেলে তা শত্রুপক্ষের দিক থেকে ধেয়ে আসা দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকাতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মাটি থেকে আকাশ দূরপাল্লার হামলা প্রতিরোধক এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত তিনটি কাজ করবে। রাডারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করা, দ্রুত সেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য তৎপর হওয়া এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে রুখে দেওয়া।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতের বিএমডি সিস্টেম সফল ভাবে তৈরি হলে তা ইজ়রায়েলের ‘আয়রন ডোম’, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০ সিস্টেম’ এবং আমেরিকার ‘প্যাট্রিয়ট’-এর থেকেও বেশি কার্যকর হতে পারে।
সামগ্রিক ভাবে, দ্বিস্তরীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা আকাশপথে ভারতের প্রতিরক্ষা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। শত্রুবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রকে অনেক দূরেই ধ্বংস করে ভারতীয় আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের কাছে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, পাকিস্তান এবং চিনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে উদ্ভূত হুমকির কারণে বর্তমান সময়ে ভারতের হাতে এই ধরনের ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
বুধবার সফল ভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সেই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারই দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা করল ভারত।
তবে এই পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাস্থলের আশপাশের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে থাকা গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার গ্রামবাসীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।
পরীক্ষা সফল না হলে ‘ধামরা মিসাইল লঞ্চ কমপ্লেক্স’ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি মাটিতে আছড়ে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারত। ফলে ক্ষতির আশঙ্কাও ছিল। আর সেই কারণেই ওই গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।