নৌসেনার শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং সামুদ্রিক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা মজবুত করতে আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক নয়া সামরিক বাহন আনতে চলেছে ভারত।
শুধু সামুদ্রিক অঞ্চলে প্রতিরক্ষার বিষয়টিই নয়, সমুদ্রে কোনও খনিজ পদার্থ বা তেলের ভান্ডারের খোঁজ, নজরদারি চালানো, সামুদ্রিক গবেষণার মতো বহুমুখী কাজও করবে এই বাহন।
আমেরিকার সংস্থা ‘ওশেন এয়ারো’র সঙ্গে যৌথ ভাবে এই বাহনটি তৈরি করছে ভারতের ‘অ্যানাড্রোম সিস্টেমস’। এই সংস্থাটি মূলত চালকবিহীন সামরিক উড়ান বানিয়ে থাকে।
নতুন এই সামরিক বাহনটির নাম ‘ট্রাইটন’। জলের উপরে তো বটেই, সমুদ্রের নীচ দিয়েও চলতে পারে এই বাহন। এটিকে ‘অটোনমাস আন্ডারওয়াটার অ্যান্ড সারফেস ভেহিকল’ (এইউএসভি) বলা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই বাহনটি সমুদ্র প্রতিরক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনবে। এমনকি সমুদ্র গবেষণাতেও ‘ট্রাইটন’ বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বয়ংক্রিয় এই বাহনটি সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে চলবে। কোন দিক থেকে এবং সমুদ্রের কতটা গভীর থেকে আওয়াজ আসছে, কোনও জাহাজ বা ডুবোজাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমা পার করে ঢুকে পড়েছে কি না, তা চিহ্নিত করে তৎক্ষণাৎ নৌবাহিনীকে সতর্ক করে এই জলযান।
এই সামুদ্রিক বাহনে রয়েছে ‘আইএসআর’ প্রযুক্তি। অর্থাৎ ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেল্যান্স এবং রিকনয়সাঁ। অর্থাৎ, এই যান নজরদারি চালানোর পাশাপাশি দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে এবং বিপদের আঁচ পেলে পাল্টা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
এই যানটিকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, সমুদ্রের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও এটি কাজ করতে পারবে।
গত দু’বছর ধরে গবেষণা করে ‘ট্রাইটন’-এর ক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে। জুড়ে দেওয়া হয়েছে আরও উন্নত প্রযুক্তি।
আমেরিকার নৌসেনা এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর ৫৯ এবং ৬৮ টাস্ক ফোর্স এই যানটি ব্যবহার করে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দেশকেও এই যান বিক্রি করেছে আমেরিকা।
আমেরিকার সংস্থা ‘ওশেন এয়ারো’র দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ সামুদ্রিক অভিযান, অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ারেও এই বাহনের ভূমিকা অনবদ্য।
উদ্ধারকাজ, তল্লাশি অভিযান এমনকি উপকূলে নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রেও এই সামরিক বাহনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
অ্যানাড্রোন সিস্টেমস এবং ওশেন এয়ারো-র এই যৌথ উদ্যোগ ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষার বিষয়টিকে শুধু মজবুতই করবে না, যত চ্যালেঞ্জিংই হোক না কেন দ্রুত পরিস্থিতিকে চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সমুদ্রের নীচে চিনা চোখরাঙানিকে টক্কর দিতে ‘ট্রাইটন’ বিশেষ ভূমিকা নেবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
২০০৪ সালে তৈরি হয়েছিল অ্যানাড্রোন সিস্টেমস। চালকবিহীন সামরিক উড়ান, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন, লঞ্চারের মতো সামরিক সরঞ্জামের নকশা তৈরি করে থাকে এই সংস্থা।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই সামরিক যান ভারতীয় নৌসেনায় অন্তর্ভুক্ত হলে সামুদ্রিক প্রতিরক্ষার বিষয় তো বটেই, সামুদ্রিক গবেষণাতেও আমূল পরিবর্তন আসবে।