গত আট ম্যাচের আটটিতেই জিতে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আগেই জায়গা করে নিয়েছে ভারত। রবিবারের ম্যাচটা ছিল নিছকই নিয়মরক্ষার। এই ম্যাচের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস হলেও দ্রাবিড়বাহিনীর নজরে ছিল নিউ জ়িল্যান্ড। তারাই সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ।
নেদারল্যান্ডস ম্যাচে ভারত যাবতীয় অঙ্ক কষেছে উইলিয়ামসনদের কেন্দ্র করেই। সেই কারণে রবিবার সেরা এগারোই নেমেছে মাঠে। সেমিফাইনালের আগে দলের ছন্দটা কোনও ভাবেই নষ্ট করতে চায় না তারা। শনিবারই সাংবাদিক বৈঠকে এসে সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়।
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আগের ম্যাচগুলির মতোই দাপট দেখালেন বিরাট কোহলিরা। স্কট এডওয়ার্ড (নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক)-দের সামনে তাঁরা ৪১১ রানের লক্ষ্য রাখেন। সেই রান তাড়া করতে নেমে ২৫০ রানেই গুটিয়ে যায় কমলাবাহিনী।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওয়েসলি বারেসির উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। তাঁকে আউট করেন মহম্মদ সিরাজ। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ভাল জুটি বাঁধেন ম্যাক্স ও’ডয়েড ও কলিন একারম্যান। পেসারদের বিরুদ্ধে ভাল খেলছিলেন তাঁরা। ফলে তাড়াতাড়ি স্পিনারদের বলে আনেন রোহিত। কুলদীপ ফেরান একারম্যানকে। ও’ডয়েডের উইকেট নেন রবীন্দ্র জাডেজা। মাঝের ওভারে কোহলির হাতে বল তুলে দেন রোহিত। নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে ফেরান তিনি। উইকেট নিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যান কোহলি। সতীর্থেরাও হাসতে থাকেন।
পয়েন্ট তালিকায় নেদারল্যান্ডসের ঠাঁই সবচেয়ে নীচে। এই বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নজর কাড়লেও আটটি ম্যাচ শেষে তাদের জায়গা ১০ নম্বরে। আগের দু’টি ম্যাচই হেরেছে তারা। এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের লক্ষ্য ছিল— পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা ভারতের বিরুদ্ধে যাতে অন্তত সম্মানজনক বিদায় হয়। কিন্তু তা সম্ভব হল না।
আগের ম্যাচগুলির মতো এই ম্যাচেও প্রথম বল থেকেই বিধ্বংসী ব্যাটিং শুরু করেন ওপেনার রোহিত শর্মা (ভারতের অধিনায়ক) এবং শুভমন গিল। প্রথম ১২ ওভারেই এই জুটি স্কোরবোর্ডে ১০০ রান তুলে দেন।
প্রথম ইনিংসে ভারতের প্রথম পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে তিন জন অর্ধশতরান করেছেন। দু’জন করেছেন শতরান। যা এক দিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।
মাত্র ৩০ বল খেলে অর্ধশতরান করেছেন শুভমন। আগের ম্যাচগুলিতে তেমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছিল না এই ডানহাতি ব্যাটারের। সেমিফাইনালের আগে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে বড় রান করার সুযোগ ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু ৩২ বলে ৫১ রান করেই আউট হয়ে যান তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি ১০-এর মধ্যে পাচ্ছেন ৭।
শুভমন আউট হওয়ার পরে অর্ধশতরান করেন রোহিত। কিন্তু তিনিও বেশি ক্ষণ খেলতে পারেননি। ৫৪ বলে ৬১ রান করে ফিরতে হয় অধিনায়ককে। ফিল্ডিংয়ে গলদ থাকলেও বল হাতে একটি উইকেট নিয়েছেন রোহিত। তাঁকে ৭ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
রবিবারের ম্যাচে সকলের নজর ছিল কোহলির দিকেই। এক দিনের ক্রিকেটে তাঁর ৫০তম শতরান দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল গোটা দেশ। কিন্তু তা হল না।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতে একটু সমস্যায় পড়লেও ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়ান বিরাট। তিনিও নিজের অর্ধশতরান করেন। কিন্তু সেই রানকে শতরানে নিয়ে যেতে পারেননি বিরাট। ৫৬ বলে ৫১ রান করে আউট হন তিনি। কোহলিও বল করে একটি উইকেট নিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনিও পাচ্ছেন ৭ নম্বর।
প্রথম তিন ব্যাটার আউট হওয়ার পরে চতুর্থ উইকেটে ২০০ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়স আয়ার ও লোকেশ রাহুল। দু’জনেই আক্রমণাত্মক শট খেলছিলেন। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম শতরান করলেন শ্রেয়স। চলতি বিশ্বকাপে প্রথম শতরান হল রাহুলেরও। শেষ পর্যন্ত শ্রেয়স ৯৪ বলে ১২৮ ও রাহুল ৬৪ বলে ১০২ রান করেন। দু’জনকে ১০-এ ১০ দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে বুমরা, সিরাজ, কুলদীপ ও জাডেজা ২টি করে উইকেট নেন। এই তিন জনকেই ৬ করে নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
এই বিশ্বকাপের ভীষণ ভাবে চর্চিত হয়েছে মহম্মদ শামির বোলিং। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি কোনও উইকেট পেলেন না। তাঁকে আনন্দবাজার অনলাইন ৪ নম্বর দিচ্ছে।
নেদারল্যান্ডসকে ১৬০ রানে হারিয়ে রাউন্ড রবিন পর্যায়ে ন’টি ম্যাচের ন’টিতেই জিতল ভারত। দীপাবলির রোশনাই কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা।