India-New Zealand FTA

কিউয়িদের সঙ্গে ‘মুক্ত বাণিজ্য’ চুক্তির পথে ভারত, কতটা লাভ হবে নয়াদিল্লির?

নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে মুক্তি বাণিজ্য চুক্তি করতে আলোচনা চালাচ্ছে ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতিকে ঠেকাতে পদক্ষেপ নয়াদিল্লির?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৩০
Share:
০১ ১৮
India-New Zealand FTA

আগামী দু’মাসেই বদলে যাবে খেলা! কিউয়িদের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে অন্তত ১০ গুণ! সেই লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) করতে হাত বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি। মার্কিন শুল্কযুদ্ধের মাঝে একে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসাবেই দেখছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৮
India-New Zealand FTA

চলতি বছরের ১৬ মার্চ নিউ জ়িল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী টড ম্যাকক্লের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। সূত্রের খবর, সেখানে মুক্তি বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে একপ্রস্ত আলোচনা সারেন তাঁরা। কোন কোন বিষয়ে এফটিএ প্রযোজ্য হবে, সেই রূপরেখাও ঠিক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৮
India-New Zealand FTA

বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চালু হলে ১০ বছরে ওয়েলিংটনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আমরা ১০ গুণ বৃদ্ধি করতে পারব।’’ এফটিএর সুবিধা কৃষি, জটিল খনিজ, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং পর্যটন শিল্পে মিলবে বলে সূত্র মারফৎ মিলেছে খবর।

০৪ ১৮

এর মধ্যেই আবার পাঁচ দিনের ভারত সফরে এসেছেন নিউ জ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনিও। তাঁর দাবি, আগামী ৬০ দিনের মধ্যেই বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করবে দুই দেশ। ওয়েলিংটন যে সে দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে, তা একরকম স্পষ্ট করেছেন কিউয়ি প্রধানমন্ত্রী।

০৫ ১৮

উল্লেখ্য, গত এক দশক ধরে ভারত ও নিউ জ়িল্যান্ডের মধ্যে স্থগিত রয়েছে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এই নিয়ে ওয়েলিংটনকে বার বার অনুরোধ করেও তেমন কোনও সুরাহা করতে পারেনি নয়াদিল্লি। কিন্তু, এ বার ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া সেই বাণিজ্য চুক্তিকেই পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে দুই দেশ। এর নেপথ্যে মূল কারণ হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধকেই দায়ী করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

০৬ ১৮

চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। নতুন নিয়মে যে দেশ আমেরিকার পণ্যে যত পরিমাণ শুল্ক নেবে, সেখান থেকে আমদানির উপর সমপরিমাণ শুল্ক চাপাবে ওয়াশিংটনও। এতে বিপুল আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা থাকায় ভারতের সঙ্গে দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে নিউ জ়িল্যান্ড, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

০৭ ১৮

এখন প্রশ্ন হল, কী এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি? কেন এই ধরনের সমঝোতা করতে এতটা আগ্রহী ভারত ও নিউ জ়িল্যান্ড? দু’টি দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে, তারা বিনা শুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে অধিকাংশ পণ্যের আমদানি এবং রফতানি করার সুযোগ পেয়ে থাকে। কোন কোন পণ্যকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আনা হবে, তা অবশ্য সংশ্লিষ্ট দু’টি রাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আর্থিক লাভের সুযোগ অনেকটা বেশি।

০৮ ১৮

বর্তমানে ১০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি ও রফতানি করে ভারত এবং নিউ জ়িল্যান্ড। ২০২৩-’২৪ আর্থিক বছরে কিউয়িভূমিতে ৫৩.৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে ওই আর্থিক বছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৩.৫ কোটি ডলারের পণ্য। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিউ জ়িল্যান্ডে ভারতের রফতানির অঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে ২১.৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ এ দেশ থেকে রফতানি হয়েছে ৪৯.৬ কোটি ডলারের পণ্য।

০৯ ১৮

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিউয়িভূমি থেকে আমদানি বেড়েছে ৭৮.৭২ শতাংশ। মোট ৪৬.৩ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে পাঠিয়েছে নিউ জ়িল্যান্ড। অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধের দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উদ্বৃত্তের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ কোটি ডলার। ২০২৩-’২৪ আর্থিক বছরে এই অঙ্ক ছিল ২০.৩ কোটি ডলার।

১০ ১৮

বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আখেরে লাভ হবে ভারতের। শুল্কের দিক থেকে ছা়ড় মেলায় আগামী দিনে ফের কিউয়িভূমিতে রফতানি বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, এফটিএকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এ দেশে নিয়ে আসার সুযোগ পাবে সরকার। এর হাত ধরে আসবে উন্নত প্রযুক্তি। দেশের মাটিতে তৈরি হবে কর্মসংস্থানও।

১১ ১৮

ভারত থেকে নিউ জ়িল্যান্ডে মূলত রফতানি করা হয় উন্নত মানের কাপড়, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং পরিশুদ্ধ পেট্রোলিয়াম। এই রফতানির পরিমাণ যথাক্রমে ৭২ শতাংশ, ৬৭ শতাংশ এবং ৫২ শতাংশ। কিউয়িভূমি থেকে আসা পণ্যের মধ্যে ২২ শতাংশ আপেল, ছ’শতাংশ অন্যান্য ফল, ১.৯ শতাংশ মাংস এবং ০.৫৭ শতাংশ দুগ্ধজাত সামগ্রী থাকে বলে জানা গিয়েছে।

১২ ১৮

তবে নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কিউয়িরা এর মাধ্যমে ভারতের দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার দখল করতে ইচ্ছুক। পশুপালন এবং দুগ্ধজাত পণ্যের উপর এ দেশের প্রায় আট কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। আর সেই কারণেই এত দিন এই ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে এসেছে নয়াদিল্লি। এফটিএর জন্য সেখান থেকে কিছুটা পিছু হটতে হতে পারে মোদী সরকারকে।

১৩ ১৮

অন্য দিকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে নিউ জ়িল্যান্ডের তথ্যপ্রযুক্তি বাজার দখলের পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। এর জন্য আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডায় কর্মদক্ষ ভারতীয়েরা যে ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন, কিউয়ি সরকারকে সেটা চালু করতে চাপ দিয়ে চলেছে মোদী সরকার। কিন্তু, এতে নিউ জ়িল্যান্ডে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ ব্যাপারে লুক্সন প্রশাসন কতটা রাজি হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

১৪ ১৮

বর্তমানে ভারতীয় পণ্যে নিউ জ়িল্যান্ড সরকার মাত্র ২.৩ শতাংশ শুল্ক নিয়ে থাকে। অন্য দিকে কিউয়িভূমি থেকে আসা সামগ্রীর উপর ১৭.৮ শতাংশ শুল্ক নেয় নয়াদিল্লি। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে এই বিষয়টি নিয়ে সর্বাধিক আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সমঝোতায় পৌঁছনো বেশ কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

১৫ ১৮

একাধিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে ইতিমধ্যেই একাধিক চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। তার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক, উদ্যানপালন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং শিক্ষা সমঝোতা চুক্তি। এ ছাড়া ক্রী়ড়া ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে একাধিক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে দুই দেশ।

১৬ ১৮

তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর এবং শুল্ক বোর্ডের সঙ্গে নিউ জ়িল্যান্ডের শুল্ক দফতরের চুক্তি। একেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ভিত্তি হিসাবে ধরা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতাগুলি দু’টি দেশ কাটিয়ে উঠতে চাইছে বলে জানা গিয়েছে।

১৭ ১৮

আগামী মে মাসের মধ্যে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে আগ্রহী কিউয়ি প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন। সেটা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এ বছরের শেষের দিকে চুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে পারে। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

১৮ ১৮

নিউ জ়িল্যান্ড ছাড়া আরও দু’টি ক্ষেত্রে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী ভারত। তার মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ান (ইইউ) এবং ব্রিটেন। দু’জায়গাতেই এ ব্যাপারে কয়েক দফায় আলোচনা সেরে ফেলেছে নয়াদিল্লি। এপ্রিলে ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু হলে দ্রুত এফটিএ চুক্তিগুলি সম্পন্ন হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement