Kunal Kamra Controversies

নিষিদ্ধ করে একাধিক বিমান সংস্থা, ভিটেহারাও হতে হয়! বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন কুণাল কামরা

শিক্ষানবিশির তিন বছর পর কুণালের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ হাজার টাকা হয়। তখন বাবা-মাকে কুণাল জানান যে, তিনি কলেজের পড়াশোনা মাঝপথেই ছেড়ে দিয়েছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ১৫:১১
Share:
০১ ২৩
Kunal Kamra

রোম্যান্টিক হিন্দি ছবির গান। সুর একই রেখে তার শব্দ অদলবদল করে দিয়েছিলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন তিনি ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবির গানটি বদলে বদলে গাইছিলেন, তখন হেসে কুটিপাটি হচ্ছিল দর্শক। কিন্তু গান গাইতে গাইতেই মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দেকে কটাক্ষ করে বসলেন কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরা। নামোল্লেখ না করে একনাথকে কটাক্ষ করে গানের বাণীতে ‘বিশ্বাসঘাতক’ শব্দটি বসিয়ে দিলেন কুণাল। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই ‘মায়ানগরী’র রাজনীতি অশান্ত হয়ে উঠেছে।

০২ ২৩
Kunal Kamra

সম্প্রতি মুম্বইয়ের খার এলাকার এক স্টুডিয়োয় হাস্যকৌতুক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন কুণাল। মুম্বইয়ের বিশিষ্ট কৌতুকশিল্পী হিসাবে জনপ্রিয় তিনি। বেশ কয়েক দিন আগে সেই অনুষ্ঠান হলেও সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে তার ভিডিয়ো পোস্ট করেন কুণাল। তার পরেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।

Advertisement
০৩ ২৩
Kunal Kamra

৪৫ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়োয় দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে শিল্পপতিদের নিয়ে মশকরা করতে দেখা গিয়েছে কুণালকে। সেই তালিকায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, শিল্পপতি আনন্দ মহীন্দ্রা, মুকেশ অম্বানী এবং তাঁর পুত্র অনন্ত অম্বানী। ধর্মান্ধতা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নিয়ে মন্তব্য করতেও ছাড়েননি কুণাল। তার পরেই তিনি শুরু করেন গান।

০৪ ২৩

কুণালের দাবি, তাঁর গানগুলি ছিল ‘বিকশিত ভারতের মূল সুর’। হিন্দি ছবির জনপ্রিয় গানের সুর এক রেখে কলি পরিবর্তন করে গান গাইছিলেন তিনি। সেই গানের মাধ্যমে ইডি, সিবিআইয়ের মতো স‌ংস্থা থেকে শুরু করে মোদী এবং ইটালির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে নিয়েও গান বেঁধেছিলেন তিনি।

০৫ ২৩

মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে কুণাল গাইতে শুরু করলেন শাহরুখ খান অভিনীত ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবির গান ‘ভোলি সি সুরত’। সেই ‘প্যারোডি’ গাওয়ার সময় কটাক্ষের সুর বেঁধে একনাথকে বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেন কুণাল। শিন্দের অবস্থান বদল নিয়েও কটাক্ষ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে সংবিধান হাতে তুলে তিনি জানান যে, ভারতের সংবিধানই তাঁকে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার দিয়েছে। ভিডিয়োটি যখন শেষ হয় তখন স্ক্রিনের উপর লেখা ভেসে ওঠে, ‘লাইফ বিগিন্‌স হোয়্যার ফিয়ার এন্ডস’। বাংলার যার অর্থ ‘যেখানে ভয়ের শেষ, সেখান থেকেই জীবনের পথচলা শুরু’।

০৬ ২৩

কুণালের গানগুলি শুধুমাত্র কৌতুকরসেই বাঁধা থাকেনি। তা শুনে খেপে গিয়েছেন শিন্দের অনুগামীরা। শিন্দের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা সমর্থকদের রোষের মুখে পড়েন কুণাল। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, মুম্বইয়ের খার এলাকার যে হোটেলের স্টুডিয়োয় ওই মন্তব্য করেছিলেন কুণাল, সেই স্টুডিয়োয় ভাঙচুর চালান তাঁরা। তাঁদের মধ্যে থাকা কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুণালের বিরুদ্ধেও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সোমবার ওই স্টুডিয়োটি ভাঙা শুরু করে বৃহন্মুম্বই পুরনিগম (বিএমসি)। দাবি, স্টুডিয়োটি জবরদখল করা জায়গার উপর তৈরি হয়েছিল।

০৭ ২৩

পুলিশের তরফে কুণালের মুম্বইয়ের বাড়িতে নোটিস পাঠানো হয়। যদিও প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল যে তিনি সেই সময় মুম্বইয়ে ছিলেন না। শিবসেনার এক সমর্থকের সঙ্গে কুণালের ফোন-কথোপকথন প্রকাশ্যে আসে। সেখানে কুণাল নিজেই জানান যে, তিনি তামিলনাড়ুতে রয়েছেন। (যদিও এই ফোন রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)।

০৮ ২৩

বিতর্কে মুখ খুলেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। তিনি কুণালকে ক্ষমা চাইতে বলে জানিয়েছেন, আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে। প্রায় একই কথা জানিয়ে অজিত পওয়ার বলেন, “কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।”

০৯ ২৩

মহারাষ্ট্রের শাসকজোট মহাজুটি যখন কুণালের সমালোচনায় মুখর, তখন কৌতুকশিল্পীর পাশে দাঁড়ান বিরোধী কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি)-র নেতারা। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা উদ্ধবসেনার প্রধান উদ্ধব বলেন, “আমি মনে করি না কুণাল কামরা কোনও ভুল করেছেন। বিশ্বাসঘাতক তো বিশ্বাসঘাতকই হয়।” শিন্দে নিজে এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা বিদ্রুপ বুঝি। কিন্তু তারও সীমা থাকা দরকার।”

১০ ২৩

সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমের পাতায় কুণাল পোস্ট করে জানিয়েছেন যে, তিনি সব রকম ভাবে পুলিশকে সহায়তা করবেন। কিন্তু ক্ষমা চাইবেন না। যদি আদালত তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দেয়, তবেই তিনি ক্ষমা চাইবেন, নচেৎ নয়। তবে এই প্রথম বার নয়, এর আগেও বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছেন কুণাল।

১১ ২৩

১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে মুম্বইয়ের মাহিমে জন্ম কুণালের। মুম্বইয়ের স্কুল থেকে পড়াশোনা করার পর সেখানকার একটি কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

১২ ২৩

শোনা যায়, কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন জনপ্রিয় চ্যানেলের তরফে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করার প্রস্তাব পান কুণাল। পড়াশোনা ছেড়ে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু সে কথা বাড়িতে জানাতে পারেননি।

১৩ ২৩

শিক্ষানবিশির তিন বছর পর কুণালের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ হাজার টাকা হয়। তখন বাবা-মাকে কুণাল জানান যে, তিনি কলেজের পড়াশোনা মাঝপথেই ছেড়ে দিয়েছিলেন।

১৪ ২৩

তিন বছরের শিক্ষানবিশির পর আরও এক বছর শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করেন কুণাল। পরে পরিচালক প্রসূন পাণ্ডের সঙ্গে তাঁর প্রযোজনা সংস্থায় সহকারী প্রযোজক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন কুণাল। জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপন প্রযোজনা থেকে শুরু করে নামী ব্যক্তিদের সঙ্গে কর্মসূত্রে বৈঠক করতেন কুণাল। সেই সংস্থায় টানা ১১ বছর কাজ করেছিলেন তিনি।

১৫ ২৩

কুণালের এক বন্ধু তাঁকে ‘স্ট্যান্ড আপ কমেডি’ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই কথা শুনে ২০১৩ সালে এক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন কুণাল। আসলে সেই অনুষ্ঠানে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। বন্ধুর ডাকেই সেখানে ছোটখাটো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছিলেন কুণাল।

১৬ ২৩

২০১৩ সাল থেকে পেশাগত ভাবে ‘স্ট্যান্ড আপ কমেডি’র অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন কুণাল। মুম্বইয়ে হাস্যকৌতুকশিল্পী হিসাবে পরিচিতি গড়ে ওঠে তাঁর। ২০১৭ সাল থেকে ইউটিউবে পডকাস্ট শুরু করেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনীতিবিদকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানাতেন কুণাল।

১৭ ২৩

পেশাগত জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিতর্কেও জড়াতে শুরু করেন কুণাল। মুম্বইয়ের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য সেই বাড়ি থেকে কুণালকে উচ্ছেদ করে দিয়েছিলেন তাঁর বাড়িওয়ালি। আসলে ইউটিউবের এক জনপ্রিয় চ্যানেলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি অনুষ্ঠান করতে শুরু করেছিলেন কুণাল। সেই অনুষ্ঠানে ব্যঙ্গের সুরে রাজনৈতিক মত প্রকাশ করতেন তিনি। সে কারণেই বাড়িছাড়া হতে হয়েছিল তাঁকে।

১৮ ২৩

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে কুণালকে সমাজমাধ্যমের দ্বারা বিব্রত হতে হয়েছিল। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তাঁকে ঘিরে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি তাঁর ফোন নম্বরও সমাজমাধ্যমের পাতায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এক মাসের জন্য এক্স থেকে নিজের অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছিলেন কুণাল।

১৯ ২৩

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কুণাল। অতিপরিচিত এক সাংবাদিকের সঙ্গে একই বিমানে সফর করছিলেন কুণাল। সফর চলাকালীন সেই সাংবাদিকের ভিডিয়ো করেছিলেন তিনি। ভিডিয়ো চালু করে বার বার তাঁকে ‘ভিতু’ বলে মন্তব্য করছিলেন কুণাল। এই ভিডিয়ো (যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) ছড়িয়ে পড়তেই একাধিক বিমান সংস্থা কুণালের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

২০ ২৩

কুণালকে সমর্থন জানাতে বলি পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ পদক্ষেপ করেছিলেন। কুণালের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা এক বিমান সংস্থার কোনও বিমানে তিনি সফর করবেন না বলে ঘোষণা করেছিলেন। পরে বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেছিলেন কুণাল। সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও দাবি করেছিলেন তিনি।

২১ ২৩

গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ওলার সিইও ভাবিশ আগরওয়ালকে নিয়েও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কুণাল। সংস্থার তরফে যে স্কুটার তৈরি করা হয়েছিল তা নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের অন্ত ছিল না। সে কথা জানিয়ে ভাবিশের নজর কেড়েছিলেন কুণাল।

২২ ২৩

কুণালের মন্তব্যে খেপে উঠেছিলেন ভাবিশ। প্রত্যুত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘যদি আপনি কোনও সহায়তা করতে না পারেন তা হলে মুখ বন্ধ করে থাকুন। ক্রেতাদের সমস্যা নিয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তা করতে দিন।’’ এই প্রসঙ্গ টেনেও সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে ব্যঙ্গ করেছেন কুণাল।

২৩ ২৩

সমাজমাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে কুণালের। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ১১ লক্ষের গণ্ডি পার করে গিয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement