আয়কর জমা দেওয়ার শেষ দিন তো প্রায় দোরগোড়ায়। আয়করদাতারা প্রায় সকলেই ব্যস্ত যাতে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁদের আয়কর জমা দেওয়া হয়ে যায়। তা না হলে গুনতে হবে সুদ অথবা পেনাল্টির বাড়তি টাকা। এ ছাড়া আর কোন নিয়ম না মানলে দিতে হবে জরিমানা?
কেন্দ্রীয় সরকার আগেই জানিয়েছে, লেট ফি ছাড়া চলতি মাসের শেষ দিন পর্যন্ত আয়কর জমা দিতে পারবেন চাকরিজীবীরা। তবে ওই দিনের পর আয়কর জমা দিতে গেলে আয়কর আইনের ২৩৪-এ ধারায় সুদ এবং ২৩৪-এফ ধারার আওতায় পেনাল্টি দিতে হবে।
এই নিয়ম ছাড়াও সকলের জন্য আয়কর আইনে বেশ কিছু বদল ঘটিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় বাজেটে সে প্রস্তাব এনেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই বদলগুলিই প্রযোজ্য হয়েছে ১ জুলাই থেকে। কী সেই বদল?
আয়কর আইনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন মনে রাখা প্রয়োজন প্রত্যেক আয়করদাতার। সেগুলি কী কী?
আয়কর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, মূলত আধার কার্ডের সঙ্গে প্যানের সংযুক্তিকরণ, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগকারী এবং যে সমস্ত চিকিৎসক ও বিভিন্ন নেটমাধ্যমে প্রভাবশালীরা আয়কর জমা দেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বদল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আয়কর আইনে বদলগুলি জানাচ্ছে, আধার-প্যান সংযুক্তিকরণের লেট ফি বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসক ও নেটমাধ্যমে প্রভাবশালীদের ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টিডিএস (আয়ের উৎসমূলে কাটা কর) দিতে হবে। অবশ্যই ওই চিকিৎসক, প্রভাবশালীরা যদি বিপণন থেকে কিছু আয় করেন, তবেই এই নিয়ম বলবৎ হবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ টিডিএস দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
মন্ত্রকের দাবি, কালো টাকার লেনদেন বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে?
প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আধার-প্যান সংযুক্তিকরণ না করলে কতটা জরিমানা হতে পারে? এই দুই কার্ডের সংযুক্তিকরণের শেষ দিন ছিল ৩০ জুন।
প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (সিবিডিটি) জানিয়েছে, যাঁরা এই নিয়ম মানবেন না, তাঁদেরকে ১,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। ১ জুলাই থেকে এই নিয়ম বলবৎ হবে। যদিও ৫০০ টাকার লেট ফি দিয়ে ৩১ মার্চ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে দুই কার্ড সংযুক্ত করা যেত বলে জানিয়েছে সিবিডিটি।
ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বদল এনেছে কেন্দ্র। ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট (ভিডিএ) ১০,০০০ টাকার বেশি হলে ১ শতাংশ টিডিএস দিতে হবে বিনিয়োগকারীদের।
এই নিয়ম চালু হয়েছে ১ জুলাই থেকে। এই নিয়মের জন্য ১৯৬১ সালের আয়কর আইনে ১৯৪-এস নামে নতুন ধারাও যোগ হয়েছে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনকারীরা আগে থেকেই ৩০ শতাংশ কর দেন। আয়কর আইন অনুযায়ী, ওই কর দেওয়া সত্ত্বেও ১ শতাংশ টিডিএসের নিয়মটি বলবৎ হবে। এমনই প্রস্তাব রাখা হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাজেটে।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্পত্তির ক্ষেত্রে কর দিতে হলেও লোকসানের ক্ষেত্রে আবার সে টাকা ফেরতের দাবিও করা যাবে। সুতরাং, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিনিয়োগের যাবতীয় তথ্য আয়কর জমা দেওয়ার সময় জানিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত।
এ বার আসা যাক চিকিৎসক এবং নেটমাধ্যমে প্রভাবশালীদের বিষয়ে। কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়কর আইনের ১৯৪-আর ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ওই নতুন ধারা অনুযায়ী, দুই ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ টিডিএস দিতে হবে।
ওষুধ সংস্থার তরফে প্রচারের জন্য চিকিৎসকেরা যে সমস্ত ওষুধ (স্যাম্পেল) বিনামূল্যে পান, তার মূল্য এক অর্থবর্ষে ২০,০০০ টাকার বেশি হলে তার উপর টিডিএস বসবে। যদিও সরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বলবৎ হবে না। নেটমাধ্যমে প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রেও প্রচারের জন্য প্রাপ্ত দ্রব্যের থেকে আয়ে ওই পরিমাণ লাভ হলে তাঁদের ওই শতাংশের টিডিএস দিতে হবে।