পাকিস্তানে বাড়ছে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ! প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা জেলবন্দি নেতা ইমরান খানকে ফেরাতে তৎপর তাঁর সমর্থকেরা। ক্যাপ্টেনের মুক্তির দাবিতে ইসলামাবাদের রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ইমরানের কারাবাসের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে একটি গণ সমাবেশের আয়োজনও করা হয় সম্প্রতি।
ইমরানের ১০ হাজারেরও বেশি সমর্থককে দলের পতাকা নেড়ে তাঁর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে সোয়াবিতে। সেই সমাবেশ থেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলনকে আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর শীর্ষনেতারা।
খাইবার পাখতুনখওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুর সেই সমাবেশ থেকে ‘সত্যিকারের স্বাধীনতা’র গুরুত্ব তুলে ধরে জাতিকে কারও কাছে মাথা নত না করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই জনসমাবেশের মূল উদ্দেশ্য, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের বর্তমান সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করে ইমরানকে মুক্ত করা।
তবে কী বাংলাদেশের পথেই হাঁটছে পাকিস্তান? সমর্থকদের রাজপথে নামিয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনমতকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টায় তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্ব। ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে দেশজোড়া বিক্ষোভের ডাক দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে পিটিআই।
পাকিস্তানের আদিয়ালা জেলে বন্দি রয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। পাক নির্বাচন কমিশন পিটিআই-এর স্বীকৃতি বাতিল করায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সে দেশের সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের অনুগামীরা নির্দল হিসাবে লড়ে ৮৪টি আসনে জিতেছিলেন।
জেলবন্দি ইমরান আদিয়ালা জেল থেকেই পিটিআইকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর দেশের শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত রদ করে জানায়, পিটিআই দলগত ভাবেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৩টি সংরক্ষিত আসন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
এর পর প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তৈরি রাজনৈতিক পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-কে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছিল পাক সরকার ।
পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকারের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লা তারার জানিয়েছিলেন, নিয়মের বাইরে গিয়ে বিদেশি অনুদান গ্রহণ, হিংসায় সরাসরি মদত দেওয়া ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য ফাঁস-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তেহরিক-ই-ইনসাফের বিরুদ্ধে যে সব সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট।
পাক সরকারের এই ঘোষণাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিযোগ তুলেছে পিটিআই।
২০২৩ সালের ৫ অগস্ট দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন ইমরান। সেই থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে কড়া নিরাপত্তায় রয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২০০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। পিটিআই দাবি করেছে যে, ইমরানকে জেলে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে।
একই অভিযোগ তুলেছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বুশরা বিবিও। জেলে ইমরানকে খারাপ খাবার দেওয়া হচ্ছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনিও। জেলে ইমরানের প্রাণসংশয় হতে পারে বলেও দাবি করেছিলেন বুশরা।
রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে ইমরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে গুনতে হয় মোটা টাকা। সরকারি সূত্রে খবর, প্রায় ১২ লক্ষ টাকা মাসিক খরচ হয় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।
কারাবাসের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে ইমরান জানিয়েছিলেন, ‘জঙ্গিদের মতো খাঁচাবন্দি’ করে রাখা হয়েছে তাঁকে। প্রথমে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল পঞ্জাব প্রদেশের অ্যাটক জেলে। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে। একাধিক বার জেলবন্দি ইমরানের প্রাণনাশের আশঙ্কা করেছেন তাঁর পরিবার ও সমর্থকেরা।