মাঝপথে কলেজ ছাড়তে হয়েছিল। মাদ্রাজ আইআইটি ছেড়ে পাড়ি দেন আমেরিকা। সে দিনের সেই কলেজছুট আজ কোটি কোটিপতি। ২০১৮ সাল থেকে একটি সংস্থার সিইও তিনি। বসের থেকে যাঁর সম্পত্তির পরিমাণ বেশি।
তিনি টমাস কুরিয়েন। ২০১৮ সাল থেকে গুগল ক্লাউডের সিইও। গুগল সংস্থার সিইও, বস্ সুন্দর পিচাইয়ের থেকেও তাঁর আয়ের পরিমাণ বেশি। একটু-আধটু নয়, প্রায় দ্বিগুণ।
টমাসের যমজ ভাই জর্জ কুরিয়েনও তাঁর মতোই সফল। ২০১৫ সাল থেকে তিনি নেটঅ্যাপের সিইও।
টমাসের জন্ম কেরলে। ১৯৬৬ সালে। তাঁর বাবার নাম পিসি কুরিয়েন। মায়ের নাম মলি। বিশ্বের অন্যতম সফল সিইও তিনি।
টমাসের বাবা ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। দুই ছেলে টমাস আর জর্জকে বেঙ্গালুরুর সেন্ট জোসেফ’স বয়েজ হাই স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি। ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন দুই ভাই।
এর পর আইআইটি মাদ্রাজে ভর্তি হন টমাস এবং জর্জ। যদিও মাঝপথেই সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেন দু’জন।
আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান টমাস এবং জর্জ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আমেরিকায় পাড়ি দেন তাঁরা।
টমাস ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাশ করেন। এর পর স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ বিজ়নেস থেকে এমবিএ করেন।
ম্যাককিনসে সংস্থায় প্রথম চাকরি পান টমাস। ৬ বছর ওই সংস্থায় কাজ করেন তিনি। সিইওদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত যে কনসাল্টিং দল, তার মাথায় ছিলেন টমাস। মূলত ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস এবং টেলিকমিউনিকেশন ক্ষেত্রেই কাজ করতেন তিনি।
১৯৯৬ সালে ওর্যাক্ল সংস্থায় যোগ দেন টমাস। সেখানে মোট ২২ বছর চাকরি করেছিলেন।
ওর্যাক্ল সংস্থায় চাকরি করার সময় ৩২টি দেশে ৩৫ হাজার জনের দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের সঙ্গে মতবিরোধ হয় টমাসের। সে কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।
এর পরেই গুগল ক্লাউডে যোগ দেন টমাস। মনে করা হয়, গুগল ক্লাউডকে নতুন প্রাণ দিয়েছেন তিনি। সংস্থার কৌশল বদলে ফেলার নেপথ্যে রয়েছেন তিনিই। গ্রাহক পরিষেবার উপর নজর দেন তিনি।
গুগল ক্লাউডে সেলসপার্সনদের বেতন বৃদ্ধি করেন টমাস। তিনি মনে করেন, এতে কর্মীরা কাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারবেন। সেলসে আরও কর্মীও নিয়োগ করেন তিনি। প্রযুক্তিবিদ এবং অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারও নিয়োগ করেন।
কয়েকটি সংস্থাকে ক্লাউড পরিষেবা দেওয়া শুরু করেন টমাস। বিভিন্ন সংস্থা ক্লাউডে যে সব নথি রাখে, তা ম্যানেজ করার জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু করান টমাস। নাম দেন অ্যান্থস।
ওর্যাক্ল সংস্থায় কাজ করার সময় এমন কিছু প্রোডাক্ট টমাস তৈরি করেন, যা থেকে বছরে ৩৫০০ কোটি ডলার রাজস্ব আসত সংস্থার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি গুগল ক্লাউডে সিইও হওয়ার পর সংস্থার বছরে রাজস্ব হয়েছে অন্তত সাড়ে পাঁচশো কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
আইআইএফএল হুরুন ইন্ডিয়া বিভিন্ন সংস্থার সিইওদের বার্ষিক আয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা বলছে, ২০২২ সালে গুগল কর্তা সুন্দর পিচাইয়ের আয় ছিল ৫,৩০০ কোটি টাকা। অ্যাডব কর্তা শান্তনু নারায়ণের মোট আয় ৩,৮০০ কোটি টাকা।
তালিকা অনুযায়ী, মাইক্রোসফ্টের সিইও সত্য নাদেলার ২০২২ সালে আয় হয়েছিল ৬,২০০ কোটি টাকা। সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন টমাস। ২০২২ সালে তাঁর আয় ছিল ১২,১০০ কোটি টাকা।