২০২২ সালের ১২ নভেম্বর। মধ্যরাতের মস্কো। ইদাহো ইউনিভার্সিটির ৪ পড়ুয়ার মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয় চাঞ্চল্য। ঘুমের মধ্যেই খুন করা হয় ৪ পড়ুয়াকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে বান্ধবীর বাড়িতে সকলে মিলে সময় কাটাতে যাওয়াই কাল হল।
২০ বছর বয়সি জ়ানা কার্নোডেল মার্কেটিং বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন ইদাহো ইউনিভার্সিটিতে। সেখানকার পড়ুয়া ২০ বছর বয়সি ইথান চ্যাপিনের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন জ়ানা।
মাঝরাতে ইথানের সঙ্গে পার্টিতে গিয়েছিলেন জ়ানা। আরও ৫ জন মেয়ের সঙ্গে একটি তিন তলা বাড়িতে থাকতেন তিনি। পার্টি শেষে প্রেমিক ইথানকে নিয়ে ওই বাড়িতেই যান তিনি।
জ়ানার সঙ্গে থাকতেন ম্যাডিসন মগেন এবং কেলি গনকাভ্স। ম্যাডিসন এবং কেলি দু’জনেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। ইউনিভার্সিটিতেও একসঙ্গে পড়তেন তাঁরা। ঘটনার রাতে স্থানীয় একটি বারে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন দুই বান্ধবী। বার থেকে মধ্যরাতে নিজেদের বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
তিন তলা বাড়িতে জ়ানা, ইথান, ম্যাডিসন এবং কেলি ছাড়াও আরও দু’জন ছিলেন। কিন্তু খুন হন ৪ জন। পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করেছিল যে, তাঁদের কোনও শত্রু রয়েছে। কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে, কারও সঙ্গে কোনও রকম খারাপ সম্পর্ক ছিল না মৃতদের।
বহু দিন ধরে তদন্ত চলার পর শেষ পর্যন্ত ৩০ ডিসেম্বর মস্কো পুলিশ ২৮ বছর বয়সি ব্রায়ান কোবার্গারকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার ব্রায়ানকে আদালতে তোলা হলে নয়া তথ্য প্রকাশ্যে আসে।
ব্রায়ানের সঙ্গে মৃত পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্ক ছিল না। অন্য একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন তিনি। স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও শেষ করে ফেলেছিলেন। জানান, স্রেফ খুন করার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল বলেই এই ৪ জনকে খুন করেন।
পড়ুয়ারা যে বাড়িতে ছিলেন তার নীচের তলার দরজা আটকানো ছিল। বিশেষ কোড ব্যবহার করে ওই দরজা খোলা বা বন্ধ করা যেত। দ্বিতীয় তলায় কাচের স্লাইডিং দরজা ছিল। এই দরজা সহজে খোলা বন্ধ করা যায়।
দোতলা এবং তিন তলার ঘরেই ছিলেন ওই ৪ পড়ুয়া। একটি বড় মাপের ছুরি নিয়ে এক এক করে ৪ জনকে হত্যা করেন ব্রায়ান। তার পর দোতলা দিয়েই বাইরে বেরিয়ে যান তিনি।
৪ জনের সঙ্গে আরও যে দু’জন ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক জন ব্রায়ানকে স্বচক্ষে দেখেন বলে দাবি করেন। তিনি জানান, মাঝরাতে হঠাৎ কেলির গলার স্বর শুনতে পান তিনি। কেলি বলছিলেন এই ঘরে কেউ রয়েছে।
কিছু ক্ষণ পর জ়ানার ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। এক পুরুষ কণ্ঠকে ওই মহিলা বলতে শোনেন, ‘‘আমি তোমাকে সাহায্য করছি।’’ ঘটনার কিছুই বুঝতে না পেরে ঘরের দরজা খোলেন তিনি।
এই সময়ই চোখের সামনে হাতে ছুরি ধরা একটি অবয়ব দেখেন বলে দাবি করেন ওই মহিলা। চোখ-মুখ মুখোশে ঢাকা। শুধু মোটা ভুরুটুকু দেখা যাচ্ছে। খুনি তাঁকে দেখতে পাননি বলে দাবি করেন ওই মহিলা। এর পরই দোতলা দিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যান খুনি।
ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করে জানানো হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ধরা পড়ে, একটি সাদা গাড়ি নিয়ে খুন করতে এসেছিলেন ব্রায়ান। তার পর সেই গাড়ির মালিকের খোঁজ নিয়ে ব্রায়ানকে খুঁজে বের করে পুলিশ। খুনিকে গ্রেফতার করার পরেও এই ঘটনা এখনও মস্কোর অধিবাসীকে ভয় ধরাচ্ছে।