ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে বছরভর নজরকাড়া পারফরম্যান্সের ‘পুরস্কার’ পেলেন স্মৃতি মন্দানারা। আইসিসির বিচারে ২০২২ সালে মহিলাদের টি-টোয়েন্টির সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন স্মৃতি-সহ ভারতের ৪ ক্রিকেটার। তাঁদের মধ্যে দু’জন আবার বাংলার। এই একাদশে আর কারা রয়েছেন?
ওপেনার হিসাবে ২০২২ সালের গোটাটাই দুর্দান্ত গিয়েছে স্মৃতি মন্দানার। আইসিসির বাছাই একাদশেও তিনিই ওপেন করেছেন। ’২২-এ স্মৃতির ব্যাট থেকে বেরিয়েছে ৫৯৪ টি-টোয়েন্টি রান। স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৪৮। ২১ ইনিংসে গড়ে ৩৩০০ রান করেছেন ২৬ বছরের স্মৃতি।
গত বছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভাল খেলেছে ভারত। অক্টোবরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জেতা ছাড়াও কমনওয়েলথ গেমসে রুপো ছিনিয়ে নিয়েছেন স্মৃতিরা। ’২২-এ স্মৃতির ঝুলিতে রয়েছে ৫টি অর্ধ শতক। তার মধ্যে একটি এসেছে এশিয়া কাপের ফাইনালে। সেখানে মাত্র ২৫ বলে ৫১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন স্মৃতি। বার্মিংহ্যামে কমনওয়েলথ গেমসেও পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২টো অর্ধশতরান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। সব মিলিয়ে গত বছর এই ফরম্যাটে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান ছিল স্মৃতির।
’২২-এ মোটে ১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ২৯ বছরের ওপেনার বেথ মুনি। আইসিসির সেরা একাদশে স্মৃতির সঙ্গে তিনিই ওপেন করেছেন। কারণ, ১৩৪.৫৩ স্ট্রাইক রেটে ওই ক’টি ম্যাচেই তাঁর ব্যাট থেকে ৪৩৪ রান বেরিয়েছে। গড় ৫৬.১২। কমনওয়েলথ গেমসের ফাইনালে ৪১ বলে ৬১ রান করে ভারতের সোনার স্বপ্নভঙ্গ করার পিছনে মুনিই দায়ী।
কমনওয়েলথ গেমসের ফর্মে গত বছর মুনিকে দেখা গিয়েছিল ভারতে। উপমহাদেশের পিচে ২টি অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি। ৭৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২ হাজারের বেশি রান রয়েছে মুনির।
আইসিসির সেরা একাদশে নেত্রী হিসাবে নাম রয়েছে ৩৩ বছরের সোফি ডেভিনের। ব্যাটে ৩৮৯ রানের সঙ্গে ১৩ উইকেট— গত বছরের এ হেন পারফরম্যান্সের পর অনায়াসে সেরা একাদশে ঢুকে পড়েছেন নিউ জ়িল্যান্ডের সোফি।
গত বছর কমনওয়েলথ গেমসে টানা দু’টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান করেছিলেন ৩৩ বছরের এই অলরাউন্ডার। ওই প্রতিযোগিতায় রানশিকারি হিসাবে মুনির পরেই নাম ছিল সোফির। সঙ্গে ৬টি উইকেটও যোগ করুন। কিউইদের হয়ে ’২২-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও ছিলেন তিনিই। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ১১০ উইকেটের পাশাপাশি প্রায় ৩ হাজার রান রয়েছে সোফির।
গত বছর ২১৬ টি-টোয়েন্টি রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ২৫ বছরের অ্যাশ গার্ডনার। স্ট্রাইক রেট ১৫২.১১। গড় ৭২। এক বছরে অ্যাশের এই পারফরম্যান্সকে মহিলাদের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অন্যতম সেরা বলা হচ্ছে। আইসিসির এই একাদশে তিনি রয়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসাবে।
মহিলা টি-টোয়েন্টিতে ২০১৯ সালে অ্যালিসা হিলি এবং তার আগের বছর র্যাচেল হেইন্সের পারফরম্যান্সের পর তৃতীয় ব্যাটার হিসাবে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে ২০০ রানের বেশি করেছেন অ্যাশ। ৫০-র উপরে গড়। স্ট্রাইক রেটও ছিল ১৫০-র উপরে। গত বছর মোটে ৭ বার ব্যাট করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে ৩২ বলে অপরাজিত ৬৬ রানের ঝোড়ো ইনিংসও রয়েছে। দলের ৩ উইকেটে ৫৫ রানের ব্যাট করতে এসে অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৬ রান পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান অ্যাশ।
অ্যাশের দলের আরও এক ব্যাটারের জায়গা হয়েছে আইসিসির সেরা একাদশে। গত বছর ৬০-এর বেশি গড় ছিল ২৭ বছরের টাহিলা ম্যাকগ্রার। এই ফরম্যাটে ৪৩৫ রানের সঙ্গে ১৩ উইকেটও শিকার করেছিলেন।
বছরে ১১টি ইনিংসে ১৪৫-এর স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছিলেন টাহিলা। ছিল ৪টি অর্ধ শতকও। গত বছরের গোড়ায় মহিলাদের অ্যাশেজ়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোটে ৪৯ বলে অপরাজিত ৯১ রান তুলে নিয়েছিলেন। সে সময় দলের রান ছিল ৩ উইকেটে ২৬। অনেকেই ওই ইনিংসকে মহিলা টি-টোয়েন্টির অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সের তকমা দিয়েছেন।
এই একাদশে পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন অলরাউন্ডার নিদা দার। তবে তাঁর অফ-স্পিনের ভেল্কিতে ১৫ জন ব্যাটারকে হারিয়েছিলেন তিনি। ৫.৫০ ইকোনমি রেট, গড়ে ১৮.৩৩ রান— এটিই এখনও পর্যন্ত নিদার সেরা টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স।
’২২-এ ১৪টি ম্যাচের মধ্যে ৩টিতে উইকেট তুলতে পারেননি নিদা। তবে তাঁর সেরা পারফরম্যান্স বোধ হয় তোলা ছিল এশিয়া কাপে ভারতের বিরুদ্ধে। ৩৭ বলে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস ছাড়াও বল হাতে ২৩ রানে ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। ওই ম্যাচের সেরাও ছিলেন তিনি।
গত বছরের এশিয়া কাপে ব্যাটে-বলে ভারতের হয়ে চমক দিয়েছিলেন বাংলার দীপ্তি শর্মা। স্মৃতির মতোই এই একাদশে জায়গা পেয়েছেন তিনি। তাঁর শিকার হয়েছিলেন ২৯ জন ব্যাটার। এর পর মহিলাদের টি-টোয়েন্টিতে যুগ্ম তৃতীয় উইকেট শিকারি হিসাবে উঠে আসেন ২৫ বছরের এই অলরাউন্ডার। গড় ছিল ১৮.৫৫। ইকোনমি রেটও সন্তোষজনক। মোটে ৬ রানের উপরে।
গত বছর ব্যাট হাতে ৩৭০ রানও করেছিলেন দীপ্তি। গড়ে ৩৭ রানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৬.০২। পরিসংখ্যানের নিরিখে তাঁর কেরিয়ারের স্ট্রাইক রেট (১০৬.৩৯) টপকে গিয়েছিল তা। এশিয়া কাপ মোট ১৩ উইকেট নিয়ে কামাল করেছিলেন দীপ্তি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরা দীপ্তি নতুন বল হাতে পেয়ে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়েছিলেন।
আইসিসির একাদশে বাংলার আরও এক ক্রিকেটার রয়েছেন। বয়স মোটে ১৯। এই বয়সেই মহিলা টি-টোয়েন্টিতে রিচা ঘোষের উত্থান চোখে পড়ার মতো। লোয়ার অর্ডারে নেমে ভারতকে বহু ম্যাচে অক্সিজেন জুগিয়েছেন তিনি।
১৮ ম্যাচে এই বাঙালি উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের সংগ্রহ ২৫৯ রান। তার মধ্যে রয়েছে ১৩টি ছয়। গত বছর ব্রের্বোন স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯ বলে অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংসে উজ্জীবিত হয়েছিল ভারত।
আইসিসির বিচারে মহিলা টি-টোয়েন্টির এক নম্বর স্পিনার ইংল্যান্ডের সোফি একলেস্টোন। ২২ গজে গত বছরটাও দারুণ কেটেছে তাঁর। ১৭ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে বছর শেষ করেছেন তিনি।
গত বছর দু’বার ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন ২৩ বছরের সোফি। প্রথম বার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ডার্বি ম্যাচে এবং তার পরের বার ভারতের বিপক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১২ বলে অপরাজিত ৩৩ করেছিলেন সোফি। ওই ম্যাচে ২ উইকেটও তুলে নেন। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে ২৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে লোয়ার মিডল অর্ডারকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছিলেন সোফি।
ইনোকা রণবীরাই এই একাদশে শ্রীলঙ্কার একমাত্র পতাকাধারী। গত বছর বল হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন ৩৬ বছরের রণবীরা। ১৯টি ম্যাচে ২৭ উইকেট তুলেছেন। গড় ছিল ১৩.৩৫। ইকোনমি ৫.৭৫।
বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার রণবীরার গত বছরের সেরা পারফরম্যান্স ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সিলেটে এশিয়া কাপের ম্যাচে ৭ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। ওই ম্যাচে ৩ রানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
স্মৃতি, দীপ্তি এবং রিচার সঙ্গে আরও এক ভারতীয় এই একাদশে ঢুকে পড়েছেন। তিনি হলেন ২৬ বছরের রেণুকা সিংহ। রেণুকার ফাস্ট মিডিয়াম বোলিংয়ে গত বছর ২২ জন ব্যাটার ধরাশায়ী হয়েছেন। তাঁর গড় ছিল ২৩.৯৫। ইকোনমি রেট ৬.৫০।
আইসিসির বিচারে গত বছরের সেরা উঠতি ক্রিকেটারের সম্মানও জুটেছে রেণুকার। বছরভর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭টি টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেট নিয়েছেন। সঙ্গে যোগ করুন কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়া কাপে তাঁর পারফরম্যান্স। ১১ ম্যাচে ৫.২১ ইকোনমি রেট নিয়ে ১৭টি উইকেট। তবে গত বছর তাঁর সেরা পারফরম্যান্স ছিল এশিয়া কাপে অজ়িদের বিরুদ্ধে। ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তাতে ছিল ১৬টি ডট বল।