একে অপরের দিকে গোবর ছুড়ছেন কয়েকশো গ্রামবাসী। সারা গায়ে গোবর মাখামাখি করেও খুশিতে মাতোয়ারা তাঁরা। অনেকে আবার গোবরের উপরে বেজায় লাফালাফি করছেন।
দেওয়ালির রাত শেষ হতেই এমন ছবি দেখা যায় কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুর সীমানাঘেঁষা গ্রাম গোমাতাপুরায়। তাঁদের কাছে গোবরই অস্ত্রের রসদ! গোবর দিয়ে ‘যুদ্ধে’ মাতেন গ্রামের বাসিন্দারা। গোবর-যুদ্ধ করেই দেওয়ালির উৎসবে ইতি টানে গোমাতাপুরা।
জোয়া আখতারের তৈরি ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ফিল্মটির সেই দৃশ্য মনে পড়ে? স্পেনের রাস্তায় হাজারে হাজারে মানুষ পরস্পরের দিকে টোম্যাটো ছুড়ছেন। ‘লা তোমাতিনা’ নামে সেই টোম্যাটো-যুদ্ধই যেন অবিকল দেখা যায় গোমাতাপুরায়। তবে এ গ্রামে লাল টুকটুকে টোম্যাটোর বদলে ‘যুদ্ধে’র অস্ত্র গোবর!
গোবরের গন্ধে যতই নাক বন্ধ হয়ে আসুক না কেন, তা নিয়ে যেন ভ্রুক্ষেপ নেই গোমাতাপুরার বাসিন্দাদের। তাঁদের কাছে এটা এক চিরাচরিত প্রথা। যুগ যুগ ধরে এ ভাবেই দীপালির উৎসব শেষ করেন গ্রামবাসীরা। গোবর-যুদ্ধের একটা গালভরা নামও রয়েছে— গোরেহব্বা পর্ব।
গোরেহব্বা পর্বের দিন বেশ আটঘাট বেঁধে প্রস্তুতি শুরু করেন গোমাতাপুরার বাসিন্দারা। গোবর-যুদ্ধের ‘রসদ’ সংগ্রহে নামেন গ্রামের পুরুষরা। দুপুর হতেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গোবর সংগ্রহের কাজে নামেন তাঁরা। স্বাভাবিক ভাবেই গরু-মহিষদের মালিকদের বাড়িতেই ভি়ড় হয় বেশি।
প্রচুর গোবর সংগ্রহের পালা শেষে সে সব শুদ্ধিকরণ এবং পুজোপাঠও করা হয়। ট্রাক-ট্রলি যে যাতে পারেন, তাতে গোবর ভরে নিয়ে যান গ্রামের মন্দিরের পুরোহিতের কাছে। এর পর শুরু হয় গোবরপুজো। প্রথামাফিক পুজোর পর পুরোহিতের আশীর্বাদ নিয়ে গোবর-যুদ্ধে নামেন গ্রামের পুরুষরা।
‘যুদ্ধ’ শুরুর আগে প্রচুর ট্রাক ও ট্রলি বোঝাই গোবর নিয়ে যাওয়া হয় একটি ফাঁকা মাঠে। সেখানেই সকলের সংগৃহীত গোবর একে একে ঢালা হয়।
গোবর-যুদ্ধে শামিল হতে একে একে মাঠের ধারে জড়ো হতে থাকেন গ্রামের পুরুষরা। জুটে যায় কমবয়সি ছেলেরাও। এর পরই শুরু হয় যুদ্ধ!
যুদ্ধের রসদ হিসাবে গ্রামের ছেলেদের হাতে হাতে উঠে আসে গোবরের গোলা। তা বানিয়ে পরস্পরের দিকে ছুড়তে থাকেন তাঁরা। ঠিক যেন তুষারপাতের মরসুমে বরফের গোলা বানিয়ে ছোড়াছুড়ি খেলা।
গোমাতাপুরার বাসিন্দারাই গোরেহব্বা পর্বে শামিল হন। এই যুদ্ধ দেখতে কম ভিড় হয় না। ফি বছরই দূরদূরান্তের বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে গ্রামের মাঠে। তাঁদের কাছে গোরেহব্বা কোনও উৎসবের থেকে কোনও অংশে কম নয়।
গত শুক্রবার দীপাবলির শেষে শনিবার বেশ শোরগোল করেই শেষ হয়েছে ‘গোবর-যুদ্ধ’। গোমাতাপুরার বাসিন্দাদের অনেকের মতে, ‘গোবর-যুদ্ধে’র এ প্রথা চালুর পিছনে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণও রয়েছে। মহেশ নামে গ্রামের এক কৃষিজীবীর দাবি, ‘‘গোরেহব্বা পর্বে গোবর মাখামাখি হওয়ায় বহু অসুখ দূরে সরে যায়। গোবরের জেরে রোগের হাত থেকে মুক্তি মেলে।’’ যদিও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে কি না তা এখনও জানা যায়নি। তবে তা নিয়ে বোধ হয় বিশেষ চিন্তিত নন ‘গোবর-যোদ্ধারা’।