মানুষের আয়ু হতে পারত ২০০ বছর। কেন হল না? সেই নিয়ে গবেষণা চালিয়ে নতুন এক তথ্য পেলেন গবেষকেরা। তাঁরা জানালেন, মানুষের দীর্ঘ আয়ুর ক্ষেত্রে বাধা হয়েছিল ডায়নোসর।
ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট জোয়াও পেড্রো ডে মাগালহায়েসের নেতৃত্বে একটি দল গবেষণা করেছিল। স্তন্যপায়ী থেকে সরীসৃপদের বেঁচে থাকা, পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া কতটা আলাদা, তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক ভাবে দেখেছিলেন, সরীসৃপের থেকে তাড়াতাড়ি বুড়ো হয় মানুষ-সহ স্তন্যপায়ীরা। সরীসৃপেরা কী ভাবে পরিণত বয়সে পৌঁছয়, তা নিয়েও গবেষণা করেছিলেন জোয়াও।
জোয়াও গবেষণায় দেখেছিলেন, সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ীদের আয়ুকালের ফারাক থাকার অন্যতম কারণ ডায়নোসর। স্তন্যপায়ীরা যখন পৃথিবীতে এসেছে, যখন তাদের বিবর্তন হচ্ছে, তখন দাপিয়ে বেড়াত ডায়নোসর।
জোয়াও নিজের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, ডায়নোসর যখন পৃথিবীতে ছিল, তখন তাদের উৎপাতে তুলনায় ছোট স্তন্যপায়ীদের দ্রুত বংশবৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। নয়তো তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারত না।
দ্রুত বংশবৃদ্ধি এবং দ্রুত বিবর্তনের স্বার্থে স্তন্যপায়ীরা প্রচুর জিন বাতিল করতে বাধ্য হয়।
ওই গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, ডায়নোসরদের দাপটে বহু স্তন্যপায়ী খাদ্যশৃঙ্খলের একেবারে নীচের ধারে পড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। অর্থাৎ তারা সে সময় জীবিত সব প্রাণীরই খাবার হয়ে উঠেছিল।
সে কারণে স্তন্যপায়ীরা প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে ডায়নোসরদের গ্রাস থেকে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছিল।
বিজ্ঞানী মনে করছেন, দ্রুত বংশবৃদ্ধির চাপের প্রভাব পড়েছিল স্তন্যপায়ীদের আয়ুকালে। মানুষ যে ভাবে পরিণত হয়, বৃদ্ধ হয়, তার উপরেও প্রভাব পড়েছিল।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডায়নোসরেরা যখন পৃথিবীতে ছিল, সে সময় স্তন্যপায়ীদের পূর্বপুরুষেরা বেশ কিছু এনজাইম হারিয়ে ফেলে। ইউথেরিয়ান স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে বিশেষত এই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। জন্মের আগেই যারা অনেকটা পরিণত হয়ে যায়, তাদের বলে ইউথেরিয়ান স্তন্যপায়ী প্রাণী।
সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির প্রভাবে স্তন্যপায়ীদের ত্বকে যে ক্ষতি হত, তা নিরাময়ের জন্য এক প্রকার এনজাইম ছিল তাদের শরীরে। যে সময়ে ডায়নোসর ছিল পৃথিবীতে। সেই এনজাইমও বিবর্তনের সময় হারিয়েছে স্তন্যপায়ীরা।
স্তন্যপায়ীদের আয়ুকাল ছোট হয়েছে বলেই ওই এনজাইম হারিয়ে গিয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ অবশ্য বিজ্ঞানীরা পাননি।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে লড়াই করা এনজাইম ছাড়াও এই কোটি কোটি বছরে অনেক কিছু হারিয়েছে স্তন্যপায়ীরা। এখন অবশ্য সেই এনজাইমের বিকল্প হিসাবে কাজ করে সানস্ক্রিন।
জোয়াওয়ের মতে, অন্য প্রাণীর থেকে স্তন্যপায়ীরা দ্রুত পরিণত হয়, বৃদ্ধ হয় বলে হয়তো তাদের মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ বেশি। জোয়াও এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তবে এও জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি।