ভাবনায় চলবে কম্পিউটারের মাউস! এত দিন তাকে হাতে ধরে চালাতে হত। অদূর ভবিষ্যতে তা স্রেফ ভাবনা দিয়েই চালানো যাবে বলে দাবি ইলন মাস্কের।
নিউরালিঙ্ক নামের একটি স্টার্টআপ সংস্থা খুলে বছরখানেক ধরেই এ বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন মাস্ক। এই আবিষ্কার সেই গবেষণারই ফসল বলে দাবি তাঁর।
গবেষণার পর্বে তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়েছে মানবশরীরের উপর। যে হেতু ভাবনা দিয়ে মাউস চালানোর পরিকল্পনা, তাই প্রয়োজন ছিল এক জন সুস্থ মানুষের।
কিন্তু এ ব্যাপারে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে পাওয়া গেলেও পরীক্ষা চালানোর অনুমতি মিলছিল না। গত সেপ্টেম্বরে সেই অনুমতি আসে নিউরালিঙ্কের হাতে। তার পরেই কাজে নামে মাস্কের সংস্থা।
সাধারণত মস্তিষ্ক, হাত আর মাউস এই তিনের মেলবন্ধনে কম্পিউটার কাজ করে। কী খুঁজবে বা কী চায়, তা ভাবে মস্তিষ্ক। হাতকে সেই অনুযায়ী নির্দেশ দেয়। হাত নির্দেশানুসারে মাউসকে নাড়াচাড়া করে সেইখানে নিয়ে যায় যেখানে গেলে কাঙ্ক্ষিত তথ্য মিলবে। মাউসে আলতো ক্লিক খুলে ফেলে বন্ধ দরজা।
এই কাজটিই নতুন আবিষ্কারে সম্পন্ন হবে এক নিমেষে। ইলনের দাবি, নিউরালিঙ্ক প্রযুক্তির সাহায্যে শুধু ভাবনা দিয়েই খুলে ফেলা যাবে কম্পিউটারের ওই কাঙ্ক্ষিত দরজার চাবি।
কিন্তু এই নিউরালিঙ্ক প্রযুক্তি আসলে কী? এটি আসলে একটি চিপ। যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করলে সেটি মানুষের ভাবনা এবং ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে। মস্তিষ্ক যেমন সঙ্কেত পাঠিয়ে আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে, ঠিক তেমনই এই চিপ মস্তিষ্কের সঙ্কেত ডিজিটাল ক্ষেত্রে পাঠাতে সাহায্য করবে।
কিন্তু তাতে এমন কী বেশি লাভ হবে! কেনই বা মাস্কের মতো ব্যবসায়ী এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাইছেন? মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি কম্পিউটারকে যুক্ত করতে পারলে মানুষের মন আরও বেশি বিকশিত হবে। একই সঙ্গে মানুষ বহু সীমাবদ্ধতাও অতিক্রম করতে পারবে।
মাস্কের কথায়, ‘‘ভাবুন তো কত দ্রুত জিনিস শিখতে পারবেন, পড়তে পারবেন! কত দ্রুত তথ্য সরাসরি মাথায় গেঁথে যাবে! নিজের ভাব বিনিময়ের জন্য আর কথাই বলতে হবে না আপনাকে! মানুষের মেধাকে এই আবিষ্কার একেবারে অন্য পর্যায়ে পৌঁছে দেবে, তা কি বুঝতে পারছেন!’’
মাস্কের দাবি, নিউরালিঙ্কের এই প্রযুক্তির সাহায্যে, আমাদের মস্তিষ্ক কত দূর যেতে পারে তার খোঁজ পাওয়া যাবে।
এর আগে ২০১৮ সালে একটি সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেছিলেন মাস্ক। তিনি বলেন, ‘‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম মেধা একটা সময় মানুষের মেধাকে টেক্কা দেবে।’’
মাস্কের কথা সত্যি হলে এআইয়ের সঙ্গে মানুষকে টক্কর দিতে সাহায্য করবে এই নতুন নিউরালিঙ্ক প্রযুক্তি। মাস্কের অভিমত, এর সাহায্যে মানুষ নিজের মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে পারবে।
মাস্ক এই প্রযুক্তির পরীক্ষা মানবদেহে করার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে সে ব্যাপারে অনুমতি পায় মাস্কের সংস্থা নিউরালিঙ্ক। তার পরেই এক ব্যক্তির মস্তিষ্কে বসানো হয় এই চিপ।
সেই প্রতিস্থাপন কেমন হয়েছে, তা নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল ছিল। সম্প্রতি এক্সে মহাকাশ বিষয়ক একটি অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছেন মাস্ক।
জানুয়ারিতেই একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক ব্যক্তির মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করা হয়েছিল। সেই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাস্ক।
মাস্ক জানিয়েছেন, যে ব্যক্তির মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করা হয়েছে, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, নিজের ভাবনার সাহায্যে মাউস নাড়াচাড়া করতেও পারছেন তিনি।
তবে মাস্ক এখনও খুশি নন।
এক্স প্রধান জানিয়েছেন, আপাতত তাঁর লক্ষ্য একটাই— ওই ব্যক্তি তাঁর ভাবনার প্রয়োগ করে কত বার মাউস ক্লিক করতে পারেন তা দেখা। পরবর্তী পরীক্ষায় ওই মাউস ক্লিকের সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে তাঁরা মনোযোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন মাস্ক।