পাকিস্তানের জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক! দাবি তুলে আবারও পথে নামলেন তাঁর হাজার হাজার সমর্থকেরা।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলবন্দি ইমরান। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ১৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় দোষীও সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। তবে তাঁর অগণিত সমর্থকদের দাবি, শীঘ্রই মুক্তি দিতে হবে ইমরানকে। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ নাকি ভিত্তিহীন।
আর সেই দাবি জানাতেই রবিবার রাজধানী ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে জড়ো হন ইমরানের অগণিত সমর্থক। ক্যাপ্টেনের মুক্তির দাবিতে সরব হন তাঁরা। স্লোগান দিয়ে মিছিলও করেন।
শাহবাজ সরকারের মূল সমালোচক তথা ইমরানের দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ (পিটিআই)-এর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পাক ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন থেকে রাজনীতির আঙিনায় পা দেওয়া ইমরান রাজনীতিবিদ হিসাবেও দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ২০১৮ সালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন তিনি।
২০২২ সালে পাক আইনসভায় অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে ক্ষমতাচ্যূত হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে। পরে গ্রেফতারও হন। তবে তাঁর সমর্থকদের দাবি, ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। পাক জনগণ এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে জোর করে কারাবন্দি রাখা হয়েছে তাঁকে।
আর সেই কারণেই ইমরানের মুক্তির দাবিতে রবিবার জনতার ঢল নামে ইসলামাবাদে। মনে করা হচ্ছে, রবিবারের সমাবেশই পিটিআই দ্বারা অনুষ্ঠিত এই বছরের বৃহত্তম এবং ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভ মিছিল। যদিও বেশ কয়েকটি জায়গায় কয়েক জন পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে আসায় বাধা দিতে প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপর জাহাজের বড় বড় কন্টেনার রেখে অবরোধ করা হয়। কয়েকটি এলাকায় পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ইমরানের মুখপাত্র জুলফি বুখারি এক বিবৃতিতে পুলিশের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন।
জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের শীর্ষ পিটিআই নেতা আলি আমিন বলেন, ‘‘ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা শীঘ্রই ইমরান খানের মুক্তি নিশ্চিত করব।’’
ক্যাপ্টেনের মুক্তির দাবিতে ইসলামাবাদের রাজপথে নামার আগে খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশেও একটি গণ সমাবেশের আয়োজন করেছিল পিটিআই।
ইমরানের ১০ হাজারেরও বেশি সমর্থককে দলের পতাকা নেড়ে তাঁর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল সোয়াবিতে। সেই সমাবেশ থেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলনকে আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পিটিআই-এর শীর্ষনেতারা।
সেই আবহে প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি বাংলাদেশের পথেই হাঁটছে পাকিস্তান? সমর্থকদের রাজপথে নামিয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনমতকে একজোট করার চেষ্টায় রয়েছেন পিটিআই নেতৃত্ব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমরানের মুক্তির দাবিতে দেশজোড়া বিক্ষোভের ডাক দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে পিটিআই।
দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০২৩ সালের ৫ অগস্ট থেকে জেলবন্দি রয়েছেন ইমরান। বর্তমানে পাকিস্তানের আদিয়ালা জেলে বন্দি তিনি। তাঁর গ্রেফতারির এক বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
তবে এ নিয়ে গত এক বছরে একাধিক বার সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে পাকিস্তানে। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা জেলবন্দি নেতা ইমরান খানকে ফেরাতে তৎপর তাঁর সমর্থকেরা।
উল্লেখ্য, পাক নির্বাচন কমিশন পিটিআইয়ের স্বীকৃতি বাতিল করায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সে দেশের সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের অনুগামীরা নির্দল হিসাবে লড়ে ৮৪টি আসনে জিতেছিলেন। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল থেকেই পিটিআইকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইমরান।
নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর দেশের শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত রদ করে জানায়, পিটিআই দলগত ভাবেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৩টি সংরক্ষিত আসন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
এর পর পিটিআইকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছিল পাক সরকার। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লা তারার জানিয়েছিলেন, নিয়মের বাইরে গিয়ে বিদেশি অনুদান গ্রহণ, হিংসায় সরাসরি মদত দেওয়া ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য ফাঁস-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে যে সব সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তা তাদের নিষিদ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট।
পাক সরকারের এই ঘোষণাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিযোগ তুলেছিল পিটিআই।
পিটিআই এ-ও দাবি করেছে, ইমরানকে জেলে নিম্ন মানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। একই অভিযোগ তুলেছিলেন ইমরান-পত্নী বুশরা বিবিও। জেলে ইমরানকে খারাপ খাবার দেওয়া হচ্ছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনিও। জেলে ইমরানের প্রাণসংশয় হতে পারে বলেও দাবি করেছিলেন বুশরা।
অন্য দিকে, আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ বার বার দাবি করেছেন, ইমরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য মোটা টাকা গুনতে হয় হয় তাঁদের। সরকারি সূত্রে খবর, প্রায় ১২ লক্ষ টাকা মাসিক খরচ হয় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।