২২ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে কখনও একসঙ্গে একগাদা ছবিতে দেখা যায়নি হৃতিক রোশনকে। ফি বছরে একটি-দু’টি অথবা সবচেয়ে বেশি তিনটি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
ভেবেচিন্তে গুটিকয়েক ছবিতে হাত দিলেও সব সময়ই যে হৃতিকের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে এমন নয়। এমন বহু ছবির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন, যেগুলি পরে শাহরুখ খান বা আমির খানেরা করেছেন। এবং বক্স অফিসে তুমুল মুনাফা কামিয়েছেন তাঁরা। তারকা থেকে মহাতারকা হয়েছেন খানরা। এ রকম পাঁচটি ছবির কথাই শোনা যাক।
২০০১ সালে বক্স অফিসের প্রায় সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল আশুতোষ গোয়া়রিকরের ‘লগান’। সে ছবির পটভূমিকা ছিল, পরাধীন ভারতের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাহিনি। কর মাফ করানোর জন্য যাঁরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে টানটান ক্রিকেট ম্যাচে জয়ী হয়েছিলেন। ‘লগান’-এর গল্পে ছিল ভুবন-গৌরীর রোম্যান্সের ফোড়নও। ভুবনের চরিত্রে আমির খানের আগে হৃতিকই পছন্দ ছিল আশুতোষের।
২০০২ সালে অস্কারের দৌড়ে পৌঁছে গিয়েছিল ‘লগান’। সেরা বিদেশি ছবি বিভাগে মনোনীতও হয়েছিল। যদিও শেষমেশ শিকে ছেঁড়েনি। তবে বক্স অফিসের সাফল্যে আমিরের কেরিয়ার অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল। তা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন হৃতিক। শোনা যায়, ‘লগান’-এর চিত্রনাট্যে বিশেষ আস্থা রাখতে পারেননি বলেই নাকি সে আশুতোষকে ‘না’ বলে দেন হৃতিক। কে জানে, পরে নিশ্চয়ই হাত কামড়েছিলেন তিনি!
বলিউডের পরিচালকদের মধ্যে আশুতোষ তাঁর অন্যতম প্রিয়। সংবাদমাধ্যমে বহু বার এ দাবি করেছেন হৃতিক। তবু ‘লগান’-এর পর আবারও তাঁর ছবির অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ বার ‘স্বদেশ’। যে ছবির মুখ্য চরিত্রে শাহরুখ খানকে দেখা গিয়েছিল। নাসা-ফেরত মোহন ভার্গবের চরিত্রের জন্য নিজের সুপারস্টার ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলেছিলেন শাহরুখ।
দেশীয় বক্স অফিসে তেমন সাফল্য না পেলেও ২০০৪ সালে বিদেশের মাটিতে তুমুল মুনাফা লুটেছিল ‘স্বদেশ’। শাহরুখের কেরিয়ারেও অন্য হাওয়া বইয়ে দিয়েছিল তা। তবে তা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন হৃতিক। ‘স্বদেশ’ ফিরিয়ে দেওয়ার পিছনে তাঁর যুক্তি ছিল, ‘‘চিত্রনাট্য পড়ার পর আশুতোষের দৃষ্টিকোণ বুঝতে পারিনি। সুতরাং মনে হয় না যে ‘স্বদেশ’ করার জন্য আমিই উপযুক্ত ব্যক্তি ছিলাম।’’ যদিও ‘স্বদেশ’ যে তাঁর খুবই পছন্দের ছবি, তা জানিয়েছিলেন হৃতিক।
দক্ষিণী ছবির সীমানা ছাড়িয়ে গোটা ভারতে নাম ছড়িয়ে পড়েছিল প্রভাসের। সৌজন্যে, এস এস রাজামৌলীর ‘বাহুবলী: দ্য বিগিনিং’। ২০১৫ সালে বক্স অফিসে ৬৫০ কোটির ব্যবসা করেছিল এ ছবি। তবে এটিও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হৃতিক।
আশুতোষের ‘যোধা আকবর’ করার পর আরও একটি পিরিয়়়ড ড্রামায় মন দিতে চাননি বলে দাবি করেছিলেন হৃতিক। অন্য দিকে, হৃতিককে এ ছবির অফার দিলেও একটি টেলিভিশন শোয়ে রাজামৈলীর পাল্টা দাবি ছিল যে বাহুবলীর চরিত্রে একমাত্র প্রভাসের কথাই মাথায় ছিল তাঁর।
অনেকে বলেন, বলিউডে এক ঝলক তাজা হাওয়া বইয়ে দিয়েছিল ‘দিল চাহতা হ্যায়’। পরিচালক হিসাবে তাঁর প্রথম ছবিতে সমীর অথবা সিড, দুই চরিত্রের যে কোনও একটিকে বেছে নিতে হৃতিককে বলেছিলেন ফারহান আখতার। তবে রাজি হননি হৃতিক। পরে ওই চরিত্রে দেখা গিয়েছিল যথাক্রমে সইফ আলি খান এবং অক্ষয় খন্নাকে।
বক্স অফিসে তো বটেই, সমালোচকদেরও তারিফ কুড়িয়ে নিয়েছিল ‘দিল চাহতা হ্যায়’। গাছের ডালের আড়ালে নায়ক-নায়িকার রোম্যান্স নয়। বরং মাটির কাছাকাছি থাকা চরিত্রদের টেনে এনেছিল এ ছবি। অক্ষয়কে সিডের ভূমিকায় দেখে চমকে গিয়েছিলেন অনেকে। সে সময় সইফের প্রায় ডুবন্ত কেরিয়ারকেও বাঁচিয়ে দিয়েছিল এ ছবি। তবে আগেই তো ‘না’ বলে দিয়েছেন। ফলে কোনও ফায়দাই জোটেনি হৃতিকের।
‘রং দে বসন্তী’-তে আমির খানের মতো তারকার উপস্থিতি সত্ত্বেও কর্ণ সিংহানিয়াকে ভালবেসে ফেলেছিলেন দর্শকেরা। দক্ষিণী ছবির আঙিনা ছেড়ে প্রথম বার হিন্দিভাষীদের কাছে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন সিদ্ধার্থ। দর্শকদের পাশাপাশি সমালোচকেরাও তাঁর কাজে বেজায় খুশি হয়েছিলেন।
শোনা যায়, সিদ্ধার্থের চরিত্রে পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার প্রথম পছন্দ ছিলেন হৃতিক। তবে আমিরের তুলনায় ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও তাতে রাজি হননি তিনি। যদিও বক্স অফিসে তুমুল সফল হয়েছিল ‘রং দে বসন্তী’।