ভারতীয় চলচ্চিত্রের দীর্ঘ ইতিহাসে, এমন দু’ডজনেরও বেশি সিনেমা তৈরি হয়েছে, যেগুলি সেই সময়ের নিরিখে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবির তকমা পেয়েছিল।
এই সিনেমাগুলির বেশির ভাগই দর্শকদের মনে বিশেষ ভাবে দাগ কাটতে পারেনি। বক্স অফিসে মুখ থুবড়েও পড়েছে ‘সবচেয়ে ব্যয়বহুল’ ছবির তালিকায় থাকা বেশ কয়েকটি ছবি।
তবে এর মধ্যে ‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘শোলে’ এবং ‘দেবদাস’-এর মতো ব্যতিক্রমী ছবিও রয়েছে, যেগুলি তৈরিতে প্রচুর টাকা ব্যয় হলেও ছবিগুলি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল।
বলিউডের সবচেয়ে দামি ছবির মধ্যে এমন একটি ছবিও রয়েছে, যার ব্যর্থতা মেনে নিতে পারেননি খোদ পরিচালক। ছবি ‘ফ্লপ’ করার কারণে সিনে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নাম ছিল ‘তাজমহল: অ্যান ইটারনাল লাভ স্টোরি’। মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং তাঁর স্ত্রী মুমতাজের প্রেমকাহিনি নিয়ে এই ছবি তৈরি করা হয়েছিল।
ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আকবর খান। আকবর ছিলেন অভিনেতা ফিরোজ খান এবং সঞ্জয় খানের ভাই। আকবর নিজেও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২০০৫ সালে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ‘তাজমহল: অ্যান ইটারনাল লভ স্টোরি’ ছবিটি। তার আগে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে কোনও ছবি ভারতে তৈরি হয়নি।
জমকালো সেট, বড় বড় যুদ্ধের দৃশ্য এবং নামী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক বাবদ ওই বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল।
ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, কবির বেদী, মনীষা কৈরালা, জুলফি সইদ, রাহিল আজম, পূজা বাত্রা-সহ বলিউডের সেই সময়ের পরিচিত মুখেরা।
ছবিতে আওরঙ্গজেবের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সলমন খানের ভাই আরবাজ খান। মুমতাজের চরিত্রে অভিনয় করেন পাকিস্তানের নামী তারকা সোনিয়া জেহান।
বলিউডের সবচেয়ে দামি ছবি হিসাবে সেই সময় মুক্তির আগে তাজমহল ছবিটিকে নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। ছবি যে ভাল ব্যবসা করবে, তা নিয়ে নাকি এক প্রকার নিশ্চিতই ছিলেন পরিচালক আকবর এবং ছবির বাকি কলাকুশলীরা।
কিন্তু ছবি মুক্তির পর ছবির পরিচালক, প্রযোজক থেকে শুরু করে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আশা নিরাশায় পরিণত হয়। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে ‘তাজমহল’। সমালোচকদের দাঁড়িপাল্লাতেও সে ভাবে ওজন ছিল না ছবিটির।
‘তাজমহল’ ছবিটি ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানেও মুক্তি পেয়েছিল। ভারতের থেকে কম প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সত্ত্বেও তুলনামূলক ভাবে প্রতিবেশী দেশে বেশি ব্যবসা করেছিল ছবিটি। পাকিস্তান ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে ভাল ব্যবসা করে ‘তাজমহল’।
ভারতের বাইরে ছবিটি মোট ১০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। অন্য দিকে ভারতে, প্রচুর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সত্ত্বেও ছবিটি মাত্র ২১ কোটি টাকা আয় করে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ৩১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল ‘তাজমহল’। সিনেমা তৈরি করতে যা খরচ হয়েছিল, মুক্তির পর সেই টাকাও উঠে আসেনি।
৭০ এবং ৮০-এর দশকে এক জন অভিনেতা হিসাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন আকবর। ১৯৮৩ সালে ‘হাদসা’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেন তিনি। এর পর বেশ কয়েকটি ছবি এবং টিভির পর্দাতেও মুখ দেখিয়েছেন তিনি।
পরিচালক হিসেবে ‘তাজমহল’ ছিল আকবরের দ্বিতীয় ছবি। কিন্তু সিনেমাটি ‘ফ্লপ’ করায় তিনি ভেঙে পড়েন। এর পর তিনি পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও এর পরও একাধিক ছবিতে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।