শিবরাজ সিংহ চৌহান নয়, মধ্যপ্রদেশে প্রায় ‘অচেনা’ মুখকে তুলে এনে চমক দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তিনি মোহন যাদব। উজ্জয়িনী-দক্ষিণ কেন্দ্রের তিন বারের বিধায়ক মোহন। সোমবার ভোপালে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়।
শৈশব অনটনের মধ্যে দিয়েই কেটেছে মধ্যপ্রদেশের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মোহনের। তাঁর বাবা পুনমচাঁদ যাদব একটি কারখানায় কাজ করতেন। বড় সংসার। ফলে আর্থিক অনটনও ছিল।
মোহনের বাবা দৈনিক ভাস্কর-কে বলেন, “ছোটবেলা থেকেই খুব কর্মঠ স্বভাবের ছেলে মোহন। পড়াশোনার পাশাপাশি চাষের কাজও করত। লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিল। তাই শালিগরাম নামে এক শিক্ষক মোহনকে নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা করান। সেই খরচও বহনও করেন ওই শিক্ষক।”
মোহন যাদবের দিদি কলাবতী বাই জানিয়েছেন, শৈশব থেকে সামাজিক কাজ করতেন তাঁর ভাই। কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) সদস্য হন। কলাবতীর কথায়, “সামাজিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকত ভাই। তবে পরিবারের প্রতি তাঁর যে দায়িত্ব, সেটা কখনওই ভুলত না।
মোহন যাদবরা পাঁচ ভাইবোন। দুই দিদি গ্যারসি এবং কলাবতী। তিন ভাই— নন্দলাল, নারায়ণ এবং মোহন। তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠ মোহন। তিন ভাই উজ্জয়িনীতে আলাদা আলাদা ভাবে থাকেন। মোহনের দুই পুত্র এবং এক কন্যা। পুত্র অভিমন্যু এবং কন্যা আকাঙ্ক্ষা চিকিৎসক। অন্য পুত্র বৈভব এলএলএম করেছেন।
মোহনের কন্যা-পুত্ররা জানিয়েছেন, তাঁদের বাবা বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন না। খুব কমই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তবে যখন কথা হয়, আলোচনার প্রসঙ্গে কিন্তু কখনওই রাজনীতি আনেন না। রোজ সকালে উঠে যোগব্যায়াম করতে কখনও ভোলেন না মোহন। অত্যন্ত নিয়ম এবং নিষ্ঠার মধ্যে বাঁধা তাঁর নিত্য দিনের কাজ।
২০ বছর আগে ২০০৩ সালে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ার জন্য টিকিট পেয়েছিলেন মোহন। উজ্জয়িনীর বড়নগর আসনে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সেখানকার তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক শান্তিলাল ধাবই মোহনকে টিকিট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেন। তাঁর চাপের মুখে পড়ে শেষমেশ মোহনকে প্রার্থিপদ থেকে সরিয়ে শান্তিলালকে ভোটে লড়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সে দিন সেই ঘটনার কোনও পাল্টা প্রতিবাদ করেননি মোহন। বরং হাসিমুখেই বিষয়টিকে মেনে নিয়েছিলেন।
ভোটে লড়ার সুযোগ দিয়েও মোহনের কাছ থেকে তা ‘কেড়ে’ নিলেও দলের জন্য দায়িত্ব পালন থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি দলের হয়ে প্রচারকাজে এ প্রান্ত-ও প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন।
নিজেকে প্রমাণ করার জন্য লড়াই জারি রাখেন। দশ বছর ধরে সেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অবশেষে ২০১৩ সালে সেই সুযোগ আসে। উজ্জয়িনী দক্ষিণ বিধানসভা আসন থেকে দলের টিকিটে নির্বাচনে লড়েন। ভোটে জেতেনও। তার পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি মোহনকে।
২০১৩ সালে প্রথম বড় সাফল্যের মুখ দেখার পর আবার সেই সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছতে সময় লাগল আরও ১০ বছর। বিধায়ক থেকে একেবারে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর পদে মোহন।
২০১৩ সালে যখন ভোটে লড়ার সুযোগ পান মোহন যাদব, ভোটের দিন মা লীলাবাই যাদবের আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন তিনি। সে দিন তাঁর মা মোহনকে বলেছিলেন, “ভোটে লড়ছ লড়ো। কিন্তু হেরে এসো না।”
মায়ের কথা রেখেছিলেন মোহন। ভোটেও জেতেন। তার পর মায়ের আশীর্বাদ নেন। এক সংবাদমাধ্যমকে এমনই জানিয়েছেন বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান গোপাল কৃষ্ণ শর্মা।
গোপালকৃষ্ণ আরও জানান, মোহন রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্নাতকোত্তর করেন। সেই সময় তিনি উজ্জয়িনী উন্নয়ন পর্ষদের প্রধান পদে নিযুক্ত ছিলেন। বয়স বেশি হওয়ার কারণে তিনি রেগুলার কোর্সে পরীক্ষায় বসতে পারেননি। তাই প্রাইভেটে এমএ পাশ করেন।
মোহন যাদব এ বারের নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে ছিলে না। নাম ঘোষণার আগে পর্যন্ত তাঁর নাম নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও চর্চাও হয়নি। উজ্জয়িনীর বাসিন্দারাও আশা করতে পারেননি যে, তাঁদের ঘর থেকেই রাজ্যের ভার সামলাতে যাচ্ছেন তাঁদেরই ঘরের ছেলে।
বিগত ৩০ বছর ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত মধ্যপ্রদেশের অনগ্রসর শ্রেণির অগ্রগণ্য নেতা মোহন। বিধানসভা নির্বাচনে তিন বার উজ্জয়িনী দক্ষিণ থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছেন তিনি। তবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান ২০২০ সালে। এর আগে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মোহন।