ফোবর্সের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। তাঁর জীবন বর্ণময়। নানা সময়ে নানা বিষয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসেন। বহু সিদ্ধান্তের জন্য বার বার সমালোচিত হয়েছেন। বিশ্ব বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে চর্চিত নাম ইলন মাস্ক।
এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের অন্যতম মাস্ক। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম হলেও কানাডা এবং আমেরিকার নাগরিক তিনি। মাস্ক তাঁর মায়ের জন্য কানাডার নাগরিকত্ব পান। তাঁর মোট সম্পদ প্রায় ২১ লক্ষ কোটি টাকা। গুনে শেষ করা যায় না তাঁর সম্পত্তির অঙ্ক।
২০২৩ সালে টেসলার শেয়ারের পতন হওয়ায় ধনীতম ব্যক্তির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছিলেন মাস্ক। প্রথম স্থানে ছিলেন ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ড। তবে দিন কয়েক আগে বার্নার্ড আর্নল্ডের হাতে থাকা শেয়ারের দরে ২.৬ শতাংশ পতন হওয়ায় ফের এক নম্বরে চলে এসেছেন মাস্ক।
২০২৪ সালে স্পেসএক্স, টেসলা, এক্স (সাবেক টুইটার), দ্য বোরিং কোম্পানি, নিউরালিঙ্ক এবং এক্সএআই-এর মতো সফল ৬টি সংস্থার কর্ণধার মাস্ক জানিয়েছিলেন, এই সংস্থাগুলির দায়িত্ব নিতে প্রতি দিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় তাঁকে।
ইলনের সংস্থাগুলি উদ্ভাবনী এবং যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি এবং পদার্থবিদ্যায় স্নাতক মাস্ক একাধিক সংস্থায় তাঁর নেতৃত্বের মাধ্যমে বিভিন্ন অত্যাধুনিক শিল্প গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বিশ্বের সেরা ধনকুবের ইলন নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসেন। গাড়ির সংস্থা টেসলার পাশাপাশি তাঁর সংস্থা স্পেসএক্স মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার কৃত্রিম মেধা নিয়ে কর্মরত সংস্থা ওপেনএআই প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন তিনি।
২০০২ সালে পৃথিবী থেকে অন্য একাধিক গ্রহের যাতায়াত সুগম ও কম ব্যয়সাপেক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে মহাকাশ পরিবহণের ধারণা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে স্পেসএক্স। উন্নত রকেট এবং মহাকাশযানের নকশা তৈরি এবং পরবর্তী কালে তা মহাকাশে পাঠানো হয় এই সংস্থার মাধ্যমে। স্পেস ট্রাভেলের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত স্পেসএক্স।
স্পেসএক্সের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন। যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে গ্রহান্তরে ভ্রমণের সম্ভাবনা বাস্তব রূপ পেতে চলেছে স্পেসএক্সের হাত ধরে। ‘স্টারশিপ’ মহাকাশযানটি প্রস্তত করা হচ্ছে মঙ্গলাভিযানের উদ্দেশ্যেই।
স্পেসএক্স সংস্থাটির বর্তমান পুঁজি প্রায় ১৭ লক্ষ কোটি টাকার।
দুনিয়ার অন্যতম দামি গাড়ি সংস্থা টেসলা। বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রস্তুতকারক টেসলা মোটরসে মাস্ক একজন প্রাথমিক বিনিয়োগকারী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এর সিইও হন তিনি।
টেক্সাসভিত্তিক এই সংস্থা মূলত ইলেকট্রিক গাড়ি, সোলার প্যানেল, সোলার রুফ টাইল-সহ অন্য বেশ কিছু পণ্য উদ্ভাবন করে। টেসলার লক্ষ্য হল বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে পরিবর্তন আনা।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউরালিঙ্ক কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। নিউরালিঙ্ক মানবদেহে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া স্নায়ু ও পেশিকে নতুন করে সংযুক্ত করতে সাহায্য করবে বলে দাবি তোলে। অর্থাৎ, ব্যবসায়িক ভাবে ‘ব্রেন-ইমপ্ল্যান্ট’ করবে এই সংস্থা।
নিউরালিঙ্ক প্রযুক্তি আসলে একটি চিপ যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করলে সেটি মানুষের ভাবনা এবং ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে বলে দাবি করা হয়।
মাস্কের সাম্রাজ্যের মুকুটে সর্বশেষ পালক টুইটার, এখন যা পরিচিত এক্স মাধ্যম হিসাবে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোব্লগিং সাইটটি সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ ব্যবহার করেন।
৪৪০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে টুইটারের মালিকানা পেয়েছেন ইলন।
২০১৬ সালে ইলন ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামে এক সংস্থা তৈরি করেন। আমেরিকার এই সংস্থা দ্রুত এবং কম খরচে সুড়ঙ্গ তৈরি করে। তবে কেবলমাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাচলের জন্য সুড়ঙ্গগুলি তৈরি করে এই সংস্থা।
২০১৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) নিয়ে গবেষণা করার জন্য ‘ওপেন এআই’ নামে একটি পরীক্ষাগার তৈরি করেন ইলন। ওপেন এআই আসলে একটি অলাভজনক সংস্থা, মাইক্রোসফ্টের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছিল তারা।
২০১৮ সালে এই সংস্থার বোর্ড সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন মাস্ক। বর্তমানে, ৩৭ বছর বয়সি স্যাম অল্টম্যান ‘ওপেন এআই’-এর সিইও।