Lok Sabha Election 2024

একদা রাহুলের ‘আম আদমি’! বিতর্কের সিঁড়ি বেয়ে মহুয়া কী ভাবে জাতীয় রাজনীতির শিরোনামে

‘ঘুষ’ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে মহুয়ার বিরুদ্ধে। লোকসভা থেকে তাঁর সাংসদ পদ খারিজও হয়ে গিয়েছে। তবে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে আবার সেই মহুয়াতেই ভরসা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪২
Share:
০১ ২৬

সাম্প্রতিক অতীতে লোকসভায় সবচেয়ে চর্চিত নাম মহুয়া মৈত্র। তিনি কৃষ্ণনগরের বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ। গত ৮ ডিসেম্বর লোকসভায় মহুয়ার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।

০২ ২৬

‘ঘুষ’ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে মহুয়ার বিরুদ্ধে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে মহুয়া স্বীকার করেন, তিনি জনৈক ব্যবসায়ীকে সংসদের ওয়েবসাইটে তাঁর অ্যাকাউন্টের লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে কিছু উপহারও গ্রহণ করেছেন। তবে ‘বন্ধু’ হিসাবেই সে সব উপহার নিয়েছেন।

Advertisement
০৩ ২৬

লোকসভার এথিক্স কমিটি তদন্তের পর মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করার প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাব নিয়ে সংসদে ভোটাভুটিও হয়। প্রত্যাশিত ভাবেই খারিজ হয়ে যায় মহুয়ার সাংসদের পদ। লোকসভা থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেন স্পিকার।

০৪ ২৬

৪৯ বছরের মহুয়া রাজনীতিতে খুব বেশি ‘প্রবীণ’ নন। কংগ্রেসের হাত ধরে তাঁর রাজনীতিতে পদার্পণ। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে জড়িয়ে রয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নাম।

০৫ ২৬

রাজনীতিতে আসার আগে বিদেশে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার ছিলেন অসমের মেয়ে মহুয়া। তাঁর কেরিয়ারের শুরু হয়েছিল আমেরিকায়। কলকাতার গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলে পড়াশোনার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ম্যাসাচুসেটসে যান তিনি।

০৬ ২৬

পড়াশোনা শেষ করে মহুয়া নিউ ইয়র্ক এবং লন্ডনে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে সেই কেরিয়ার ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন। যোগ দেন জাতীয় কংগ্রেসের যুব সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান ইউথ কংগ্রেস’-এ।

০৭ ২৬

সেই সময়ে রাহুলের নেতৃত্বে ‘আম আদমি কা সিপাহি’ নামের একটি কর্মসূচি শুরু করেছিল কংগ্রেস। মহুয়া সক্রিয় ভাবে তাতে অংশ নিয়েছিলেন। সেই তাঁর ‘সক্রিয়’ রাজনীতিতে প্রবেশ। তবে মহুয়ার বরাবরই লক্ষ্য ছিল পরিষদীয় বা সংসদীয় রাজনীতিতে আসার।

০৮ ২৬

২০১০ সালে কংগ্রেস ছেড়ে মহুয়া তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে নদিয়ার করিমপুরের বিধায়ক হন। ২০১৯ সালে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তাঁকে টিকিট দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

০৯ ২৬

কৃষ্ণনগরের সাংসদ হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে জাতীয় রাজনীতির শিরোনামে আসতে শুরু করে মহুয়ার নাম। সংসদে ভাষণ, কড়া ভাষায় কেন্দ্রকে আক্রমণ, সমালোচনা, যুক্তির পিঠে পাল্টা যুক্তি সাজিয়ে মহুয়ার একের পর এক বক্তৃতা নজর কাড়ে। তবে একই সঙ্গে তাঁর বিরোধিতাও বাড়তে থাকে।

১০ ২৬

সাংসদ হিসাবে শহুরে ‘এলিট’ শ্রেণির কাছে জনপ্রিয়তার পাশাপাশিই বিতর্ক মহুয়ার বরাবরের সঙ্গী থেকেছে। একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সে সংসদে হোক বা সংসদের বাইরে। তাঁর ‘ঠোঁটকাটা’ বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে বিবিধ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মহুয়া অবশ্য সে সব নিয়ে মাথা ঘামাননি।

১১ ২৬

২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মহুয়া। একটি চ্যানেলে সম্মানহানির অভিযোগ তুলেছিলেন বাবুলের বিরুদ্ধে। পরে কলকাতা হাই কোর্টে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়।

১২ ২৬

তার কিছু দিনের মধ্যেই মহুয়া-সহ তৃণমূলের একাধিক নেতাকে পাল্টা মানহানির নোটিস পাঠিয়েছিলেন বাবুল। অভিযোগ, রোজভ্যালিকাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা।

১৩ ২৬

২০২০ সালের একটি বিতর্ক মহুয়াকে জাতীয় স্তরের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য স্তরেও আলোচিত করেছিল। সাংবাদিকদের উদ্দেশে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল কৃষ্ণনগরের তৎকালীন সাংসদের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ‘দু’পয়সার সাংবাদিক’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। যদিও সেই বিতর্কও মহুয়াকে দমাতে পারেনি। তিনি ওই মন্তব্যের জন্য পরে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বলেও শোনা যায়নি।

১৪ ২৬

নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন মহুয়া। সংবাদমাধ্যমের একাংশ তাঁকে ‘বয়কট’ও করেছিল। এমনকি, এই বিতর্কে তাঁর দলও মহুয়ার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করেছিল।

১৫ ২৬

২০২২ সালে আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে যায় মহুয়ার নাম। মা কালীর ‘আধুনিক রূপ’ প্রসঙ্গে নিজের মতামত ব্যক্ত করে সমালোচিত হন তিনি।

১৬ ২৬

একটি সিনেমার পোস্টারে মা কালীর ধূমপানের দৃশ্য চিত্রিত হয়েছিল। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা, সমালোচনা চলছিল। মহুয়া একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আমার কাছে মা কালী এমন এক দেবী, যিনি মদ-মাংস খান। প্রত্যেকের নিজেদের মতো করে দেব-দেবীকে কল্পনা করার অধিকার রয়েছে। কোথাও দেবতাকে হুইস্কি খেতে দেওয়া হয়, কোথাও আবার সেটাই ধর্মবিরোধিতা।’’

১৭ ২৬

মহুয়ার ওই মন্তব্য আলোড়ন তৈরি করে বিভিন্ন মহলে। বিতর্কের মুখে সাংসদের পাশে দাঁড়ায়নি তাঁর দল তৃণমূলও। দলের তরফে বলা হয়, ‘‘মা কালীকে নিয়ে মহুয়া ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন। দল তা অনুমোদন করে না।”

১৮ ২৬

কালী-বিতর্কে মহুয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি, মধ্যপ্রদেশের ভোপালের থানাতেও তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল অভিযোগ।

১৯ ২৬

শুধু সাংবাদিক বা কালী-বিতর্কই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলা থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থার সমালোচনা, বার বার বিতর্কের শিরোনামে উঠে এসেছে মহুয়ার নাম।

২০ ২৬

বিতর্কের সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন ‘প্রশ্নঘুষ’কাণ্ড। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধবের নামও। আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাইয়ের সঙ্গে একসময় মহুয়ার সম্পর্ক ছিল। সেই জয়ই মহুয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ তোলেন।

২১ ২৬

মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ সিবিআইকে পাঠান জয়। সেখান থেকে তা পৌঁছয় লোকসভায়। স্পিকার বিষয়টি এথিক্স কমিটির হাতে তুলে দেন। সেখানে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয়।

২২ ২৬

সংসদে মহুয়ার নিশানায় প্রায়শই উঠে এসেছে আদানি প্রসঙ্গ এবং কেন্দ্রের মোদী সরকারের সঙ্গে এই গোষ্ঠীর ‘ঘনিষ্ঠতা’র কথা। মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয়ের অভিযোগ ছিল, আদানিদের প্রতিপক্ষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রধান দর্শন হিরানন্দানির থেকে ‘ঘুষ’ নিয়েছেন মহুয়া। পরিবর্তে সংসদে আদানি-বিরোধী প্রশ্ন করে গিয়েছেন দিনের পর দিন।

২৩ ২৬

হিরানন্দানি এই অভিযোগ লিখিত ভাবে স্বীকার করে নেন। জানান, মহুয়া নিজের সংসদ-অ্যাকাউন্টের লগ-ইন তথ্য তাঁকে দিয়ে দিয়েছিলেন। মহুয়ার হয়ে তিনি নিজেই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন প্রশ্ন পোস্ট করতেন।

২৪ ২৬

মহুয়া প্রথমে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। সিবিআই এবং এথিক্স কমিটিকে যে কোনও রকম তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলেও জানান। পরে স্বীকার করেন, হিরানন্দানিকে তিনি পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপহারও নিয়েছেন। তবে উপহার নেওয়া নিতান্তই বন্ধুত্বের খাতিরে বলে দাবি করেন মহুয়া।

২৫ ২৬

গত ৯ নভেম্বর লোকসভা থেকে মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে এথিক্স কমিটি। পরে ৮ ডিসেম্বর ভোটাভুটির পর স্পিকার তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করে দেন। তৃণমূলের দাবি ছিল, মহুয়ার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণার আগে তাঁকে সংসদে কিছু বলতে দেওয়া হোক। কিন্তু শেষ দিন সেই সুযোগ আর পাননি মহুয়া।

২৬ ২৬

‘প্রশ্নঘুষ’কাণ্ড এবং সাংসদ পদ খারিজের এই পর্বে খানিকটা বিলম্বে হলেও মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিল তৃণমূল। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আবার তাঁর উপরেই ভরসা রেখেছেন দলনেত্রী মমতা। কৃষ্ণনগর থেকে আবার তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। জিতলে হারানো সাংসদ পদ আবার অর্জন করতে পারবেন মহুয়া। হেরে গেলে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement