‘নাটু নাটু’ গানের হাত ধরে বিশ্বজয় করে ফেলেছে এস এস রাজামৌলির ছবি ‘আরআরআর’। গত বছর মার্চে মুক্তির পর দেশ, বিদেশের বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল এই ছবি। সাফল্যের সরণি বেয়ে সোমবার অস্কার জিতে নিয়েছে ‘নাটু নাটু’।
‘নাটু নাটু’-র পাশাপাশি ৯৫তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে ভারতের ঝুলিতে এসেছে আরও একটি অস্কার। সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র নির্বাচিত হয়েছে তামিল তথ্যচিত্র ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’।
অস্কারের মঞ্চে ভারতীয় তথ্যচিত্র এবং গানের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকে আলোচনা থামছে না। দক্ষিণী নির্মাণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, নির্বাচন সঠিক হয়নি।
অস্কারের জন্য সেরার নির্বাচন হয় কী ভাবে? কোন কোন বিভাগে কারা ভোট দেন? এই নির্বাচন কি একেবারে নিরপেক্ষ? এই প্রতিবেদনে রইল অস্কার নির্বাচনের খুঁটিনাটি আলোচনা।
১৯২৯ সালে হলিউডে প্রথম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস দেওয়া চালু হয়। প্রথম দিকে আমেরিকাতেই এই পুরস্কার সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ইউরোপ এবং বাকি দেশগুলিও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
ভারতে প্রথম অস্কার এসেছিল ১৯৮৩ সালে। ‘গান্ধী’ ছবিতে সেরা পোশাক পরিকল্পনার জন্য অস্কার পেয়েছিলেন ভানু আথাইয়া।
বর্তমানে মোট ২৪টি বিভাগে অস্কার দেওয়া হয়। সেরা ছবি, সেরা অভিনেতা, অভিনেত্রী, চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে সেরা তথ্যচিত্র, পরিচালনা, মৌলিক গান— স্বতন্ত্র বিভাগে অস্কারের জন্য আবেদনও জানাতে পারেন চলচিত্র নির্মাতারা।
‘সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ছবি’কে অস্কারের সবচেয়ে সম্মানজনক বিভাগ বলে মনে করা হয়। ২০২০ সালের আগে পর্যন্ত এই বিভাগের নাম ছিল ‘সেরা বিদেশি ভাষার ছবি’ (বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম)। এই বিভাগে এখনও পর্যন্ত ভারতের তিনটি ছবি মনোনীত হয়েছিল। কিন্তু অস্কার তারা আনতে পারেনি। ছবি তিনটির নাম ‘মাদার ইন্ডিয়া’ (১৯৫৭), ‘সালাম বম্বে’ (১৯৮৮) এবং ‘লগান’ (২০০১)।
অস্কারের দৌড়ে শামিল হওয়ার জন্য যে কোনও ছবি বা গানকে মৌলিক কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। প্রাথমিক ভাবে, আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহরের বাণিজ্যিক প্রেক্ষাগৃহে কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য প্রদর্শিত হতে হয় সেই ছবিকে। তবেই তারা অস্কারের জন্য আবেদন জানাতে পারেন। লস অ্যাঞ্জেলস, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, বে এরিয়া, মায়ামি এবং আটলান্টা শহর এই তালিকায় রয়েছে।
জনপ্রিয়তার নিরিখে অস্কারের এই প্রাথমিক মানদণ্ড পূরণ করা এমন কিছু কঠিন নয়। কারণ, বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় ছবি এই শহরগুলির প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েই থাকে। তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রে অবশ্য মানদণ্ড কিছুটা ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট ছবির প্রযোজকদের আনুষ্ঠানিক ভাবে ছবির নাম নথিভুক্ত করাতে হয়।
‘সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ছবি’-র জন্য মানদণ্ড কিছুটা আলাদা। এই বিভাগে মনোনয়ন পেতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছবির নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। প্রতিটি দেশ একটি ছবির জন্যই অস্কারের মঞ্চে সওয়াল করতে পারে। এ বছর, ভারত থেকে অস্কারে আনুষ্ঠানিক ভাবে পাঠানো হয়েছিল গুজরাতি ছবি ‘ছেলো শো’।
আবেদন পর্বের পর যাবতীয় ছবির তালিকা থেকে জনপ্রিয়তার নিরিখে বেশ কিছু ছবি বাছাই করে (রিমাইন্ডার লিস্ট) নেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস কর্তৃপক্ষ। বাছাই করা সেই তালিকা দীর্ঘ। এ বছর এই বাছাই ছবির তালিকায় ছিল মোট ৩০১টি ছবি। বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’ও মানদণ্ড পূরণের পর অস্কারের তালিকায় প্রাথমিক ভাবে নথিভুক্ত হয়েছিল। তালিকায় ছিল, ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’, ‘আরআরআর’, ‘কান্তারা’, ‘রকেট্রি’-র মতো জনপ্রিয় সব ভারতীয় ছবি।
৩০১টি ছবির তালিকা থেকে ‘সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ছবি’-র বিভাগে মোট ১৫টি ছবি বেছে নেন কর্তৃপক্ষ (শর্টলিস্ট)। এই ১৫ ছবির তালিকাতেও এ বছর স্থান পেয়েছিল ভারতের ‘ছেলো শো’। কিন্তু শেষ পাঁচের নির্বাচনে (নমিনেশন) আর তার স্থান হয়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অস্কারের আশায় নাম লেখান ছবির নির্মাতারা। কী ভাবে তাদের মধ্যে থেকে সেরাটিকে বেছে নেওয়া হয়? উত্তর হল ভোট। ভোটাভুটির মাধ্যমেই অস্কারের যোগ্য সেরা ছবির নির্বাচন হয়।
অস্কারের সেরার নির্বাচনে মোট ১০ হাজার মানুষ ভোট দিয়ে থাকেন। এঁরা মূলত বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তালিকায় রয়েছেন খ্যাতিসম্পন্ন পরিচালক, লেখক কিংবা অভিনেতারা। এমনকি, যাঁরা পূর্বে অস্কার জিতেছেন, তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ সেরার বাছাইয়ে অংশ নেন।
পেশা অনুযায়ী এই ভোটারদের স্বতন্ত্র বিভাগে ভাগ করা হয়। পরিচালকদের আলাদা বিভাগ থাকে, তাঁরা সেরা পরিচালনার পুরস্কারের জন্য ভোট দেন। অভিনেতাদের আলাদা বিভাগ থাকে, তাঁরা ভোট দেন সেরা অভিনেতার বাছাইয়ে।
অস্কারের জন্য ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়া যায়। অনলাইনে ভোটিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। যে হেতু, কোনও একটি দেশের এক জনের ভোটের ভিত্তিতে সেরার নির্বাচন হয় না, তাই এই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ বলেই ধরে নেওয়া হয়। ভোটদাতারা সংশ্লিষ্ট ছবিটি দেখে, তার গান শুনে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেন। তার পরেই নিজেদের মূল্যবান ভোট দিয়ে থাকেন।