গৌতম আদানির পর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের নজরে এ বার আরও এক লগ্নিকারী সংস্থা। আমেরিকার ইকান এন্টারপ্রাইজ়ের বিনিয়োগ এবং লেনদেনের দিকে নজর রেখেছে তারা। আনা হয়েছে কারচুপির অভিযোগও।
মঙ্গলবার হিন্ডেনবার্গের তরফে ইকান এন্টারপ্রাইজ়ের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। আমেরিকার এই লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা স্পষ্ট জানিয়েছে, তাদের পরবর্তী ‘টার্গেট’ ইকান।
ইকান এন্টারপ্রাইজ়ের অধিকর্তা কার্ল ইকান। তিনি ফ্লরিডার বাসিন্দা। আমেরিকার ধনী শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। একাধিক শিল্পে তাঁর সংস্থার বিনিয়োগ রয়েছে।
হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ, ইকান তাঁর সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ অন্তত ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। এ ভাবেই শেয়ার বাজারে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন তাঁরা। কারচুপির মাধ্যমে ধনী হয়েছেন ইকান।
ইকান এন্টারপ্রাইজ়ের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও নথি ঘেঁটে হিন্ডেনবার্গ দাবি করেছে, ২১৮ শতাংশ প্রিমিয়ামে ব্যবসা করেন ইকান। যা বাকি সকল সংস্থার চেয়ে অনেক বেশি।
হিন্ডেনবার্গের আরও দাবি, ইকান এন্টারপ্রাইজ়ের বিরুদ্ধে তাদের যা যা অভিযোগ, তার বিস্তারিত প্রমাণ রয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে, এটিই হতে চলেছে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় আর্থিক দুর্নীতি।
হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, একটি বিশেষ অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় কাজ করছে ইকানের সংস্থা। তারা নতুন লগ্নিকারীদের কাছে নিজেদের ইউনিটগুলি বিক্রি করে দিচ্ছেন। সেখান থেকে টাকা নিয়ে তারা পুরনো লগ্নিকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছেন। এ ভাবেই চলছে লাভজনক কারবার।
ফ্লরিডার সানি ইসলেস বিচে ইকান এন্টারপ্রাইজ়ের সদর দফতর। আমেরিকার অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির একটি এই ইকান। সংস্থার কর্ণধার কার্ল ইকানও দেশে যথেষ্ট জনপ্রিয়।
হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। তার পরেই শেয়ার বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, এক দিনেই ইকানের শেয়ারের দর পড়ে গিয়েছে ১০ শতাংশ।
সময় যত এগোবে, ইকান এন্টারপ্রাইজ়ের শেয়ারের দর আরও নামতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে আদানিদের মতো অবস্থা হতে পারে এ ক্ষেত্রেও, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
ইকানের তরফে অবশ্য হিন্ডেনবার্গের এই সাম্প্রতিক দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য এখনও পর্যন্ত করা হয়নি। মুখ খোলেননি কার্ল নিজেও। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে সংস্থা বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে।
গত মার্চ মাসে আর এক আমেরিকান ধনকুবেরকে কার্যত পথে বসিয়েছিল এই হিন্ডেনবার্গ। টুইটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডরসির সংস্থা ‘ব্লক’-এ ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল তারা।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের পর ব্লকের শেয়ারও হু হু করে নেমেছে। এক দিনে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খুইয়েছিলেন জ্যাক। এক দিনে এটাই ছিল তাঁর সর্বোচ্চ সম্পত্তিহানি।
তারও আগে গত জানুয়ারিতে ভারতীয় ধনকুবের আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে কারচুপির রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রথম শিরোনামে উঠে আসে হিন্ডেনবার্গ। তাদের সেই রিপোর্টের জেরে বহু লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তিহানি হয়েছিল আদানিদের।
বিশ্বের ধনীতমদের তালিকাতেও এক ধাক্কায় অনেক ধাপ নীচে নেমে গিয়েছিলেন আদানি। তার পর থেকেই একের পর এক ধনকুবের এবং তাঁদের ব্যবসার কারচুপির দিক প্রকাশ্যে আনছে হিন্ডেনবার্গ। যা শেয়ার বাজারে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। এ বার সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন কার্ল ইকান।