হিমাচল প্রদেশে ক্ষমতা দখল করল কংগ্রেস। ১৯৭৭ সাল থেকে এই রাজ্য কখনও এক দলকে পর পর দু’বার ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেয়নি। সেই রেওয়াজই বজায় রাখলেন হিমাচলের মানুষ।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির স্লোগান ছিল— ‘রাজ নয়, রেওয়াজ বদলো।’ সেই স্লোগানে ভর করেই বিজেপিকে সরিয়ে কংগ্রেসকে আবার সুযোগ দিল হিমাচল।
হিমাচলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও স্বস্তিতে নেই কংগ্রেস। রাজ্যে ‘ঘোড়া কেনাবেচা’র একটা আশঙ্কা করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। গোয়া বা কর্নাটকের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে এই পাহাড়ি রাজ্যেও না হয়, তাই আগে থেকেই সতর্ক দল।
হিমাচলে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করতেই মুখ্যমন্ত্রীর পদের দাবিদার নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে তৎপরতা তুঙ্গে। কারণ ইতিমধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বীরভদ্র সিংহের স্ত্রী এই পদের দাবিদার হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন।
সংবাদমাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, বীরভদ্র সিংহের কথা স্মরণ করে রাজ্যবাসী ভোট দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এই রাজ্যের উন্নয়নে বীরভদ্র সিংহের অনেক অবদান আছে। তাই রাজ্যবাসীও চান এই পরিবারের কেউ সেই উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাক।”
প্রতিভা আরও বলেন, “অনেক বিধায়কও চান বীরভদ্র সিংহ এবং ওঁর পরিবারকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। আর এই কারণেই কংগ্রেস বেশ কয়েক বার রাজ্যের ক্ষমতা সামলেছে।”
২০২১ সালের ৫ জুলাই মৃত্যু হয় বীরভদ্র সিংহের। তিনি হিমাচলের মান্ডির সাংসদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই আসনে প্রার্থী হন স্ত্রী প্রতিভা সিংহ। বিজেপি প্রার্থী কুশল ঠাকুরকে ৭,৪৯০ ভোটে হারিয়ে সাংসদ হন তিনি।
প্রতিভার পাশাপাশি এ বারের নির্বাচনে আরও এর জনের নাম উঠে আসছে। তিনি হলেন সুখবিন্দর সিংহ সুখু। তিনি এ বার নাদৌন থেকে লড়েছেন। ২০১৩ সালে থেকে ২০১৯ পর্যন্ত হিমাচলের কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ছিলেন সুখু।
এ বারের নির্বাচনে কংগ্রেসের তরফে প্রচার কমিটির মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুখবিন্দরকে। ঘটনাচক্রে, বীরভদ্রের পরিবারের সঙ্গে সুখুর সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। কিন্তু তার পরেও তাঁকে প্রচার কমিটির প্রধান দায়িত্ব দেয় কংগ্রেস হাইকমান্ড। দলের এক সূত্রের দাবি, নির্বাচনে সুখুকে টিকিট দেওয়া নিয়েও প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রতিভা।
বীরভদ্রের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী প্রতিভা সিংহ। এই পক্ষের ছেলে বিক্রমাদিত্য। তিনি এ বারের নির্বাচনেও শিমলা গ্রামীণ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। ৩৫,২৬৯ ভোটে জিতেছেন তিনি।
বীরভদ্রের প্রথম পক্ষের মেয়ে রয়েছে। তাঁর নাম অপরাজিতা সিংহ। পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহের নাতি অঙ্গদ সিংহের সঙ্গে অপরাজিতার বিয়ে হয়। অন্য দিকে, রাজস্থানের মেবারের রাজপরিবারের মেয়ে সুদর্শনা কুমারীকে বিয়ে করেন বিক্রমাদিত্য।
১৯৮৩ সালে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী হন বীরভদ্র সিংহ। তার পর ১৯৮৫-’৯০, ১৯৯৩-’৯৮, ২০০৩-’০৭ এবং ২০১২-’১৭ মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন তিনি। পাঁচ বারের সাংসদও ছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিক।
বীরভদ্র সিংহ ‘রাজা সাহিব’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৭৭, ’৭৯, ’৮০ এবং ২০১২-র অগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাচল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন বীরভদ্র। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে বীরভদ্র এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা সত্ত্বেও ‘প্রিভেনশন অফ করাপশন অ্যাক্ট’ লঙ্ঘন করায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়।
২০১৫ সালে বীরভদ্র এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তির মামলা রুজু করে সিবিআই।
তবে ‘ফাইনালের লড়াই’ প্রতিভা এবং সুখবিন্দরের মধ্যে হলেও পাহাড়ি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদের রয়েছেন আরও দাবিদার। সবাইকে টপকে হিমাচলের কুর্সিতে কে বসেন আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।