জীবনের প্রথম প্রেম তাঁরা একে-অপরের। স্কুলে পড়াকালীন একসঙ্গে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্নে ইতি পড়ে গিয়েছিল মাঝপথেই।
৭ দশক আগে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে যোগাযোগ প্রায় ছিলই না। কিন্তু চোখের আড়াল মানেই তো আর মনের আড়াল নয়। তাই প্রায় ৭ দশক পর ফের শেষ থেকেই ফের শুরু হল তাঁদের লভ স্টোরি।
ফ্রেড পল এবং ফ্লোরেন্স হার্ভে। তাঁদের লভ স্টোরি শুরু হয়েছিল ৬৮ বছর আগে। কানাডার ছোট শহর ওয়ান্ডসওয়ার্থে দুজনে পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন।
ছোট থেকেই একে-অপরের সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিলেন তাঁরা। একসঙ্গে অবসর কাটানো, চার্চের পর হাতে হাত রেখে হেঁটে যাওয়া, স্কুলে ক্লাসের ফাঁকে দেখা করা এমনকি, প্রতি রাতে টর্চ জ্বালিয়ে ফ্লোরেন্সকে শুভরাত্রি বলা- এ ভাবেই দিন কাটত তাঁদের।
পল যখন ১৮ বছরে পা দিলেন ফ্লোরেন্স তখন ১৫ বছরের কিশোরী। কর্মসূত্রে পল টরোন্টোয় চলে আসেন।
তার এক বছর পর যখন ওয়ান্ডসওয়ার্থে ফেরেন তত দিনে শহর ছেড়েছেন ফ্লোরেন্স। কোথায় চলে গিয়েছিলেন সেই খোঁজ আর পাননি পল।
এর মাঝে অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। দু’জনেই বড় হয়েছেন। দু’জনেরই পরিবার হয়েছে। দু’জনেই নিজেদের পরিবার নিয়ে সুখী ছিলেন। কিন্তু মনের মধ্যে কোথাও তাঁরা একে অপরের জন্য ভালবাসাও লুকিয়ে রেখেছিলেন।
২০১৭ সালে ফ্লোরেন্সের জীবনে এক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাঁর স্বামী ক্যানসারে মারা যান। তাঁদের ৫৭ বছরের দাম্পত্যে ৫ সন্তান। ঠিক এর দু’বছর পর পলের স্ত্রীও মারা যান। পলের দুই সন্তান রয়েছে।
ফ্লোরেন্সের কানে পলের স্ত্রী বিয়োগের খবর পৌঁছে ছিল। ফোন নম্বর সংগ্রহ করে পলকে একদিন ফোন করেন ফ্লোরেন্স।
সেটা ছিল এক ভ্যালেন্টাইন ডে-র পরের দিন। সে দিন অনেক ক্ষণ কথা হয়েছিল। নিজেদের পরিবার, সন্তান, নাতি-নাতনি এ সব নিয়ে কথা হয়। শৈশবের সে সব সুখের স্মৃতিগুলোও নাড়াচাড়া করেন দুজনে।
প্রথম প্রথম সপ্তাহে একদিন করে ফোনে কথা হত তাঁদের। তারপর ক্রমশ সপ্তাহে ২ দিন, ৩ দিন, ৪ দিন এবং তার পর প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে থাকে কথোপকথন।
পলের জন্মদিনের সবচেয়ে দামি উপহার ছিলেন ফ্লোরেন্স নিজেই। পলের সঙ্গে দেখা করতে তিনি টরোন্টোয় চলে আসেন। ফ্লোরেন্সকে দেখার আনন্দ চেপে রাখতে পারেননি পলও।
এর ৩ দিন পরই তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২০ সালের ৮ অগস্ট সমস্ত রীতি মেনে তাঁরা বিয়ে করেন।
অতিমারির জন্য খুব কম অতিথি আমন্ত্রিত ছিলেন চার্চে। পল নিজেও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত।
পলের বয়স এখন ৮২ বছর এবং ফ্লোরেন্সের ৭৯ বছর। বাকি জীবনটা একসঙ্গেই কাটাতে চান তাঁরা। প্রায় ৭ দশক আগের সেই শেষ দেখা হওয়ার দিন থেকেই শুরু করবেন নিজেদের জীবন।