৪ জুলাই ২৫ বছরে পদার্পণ করে ববি দেওল, কাজল ও মনীষা কৈরালা অভিনীত ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’ ছবিটি। বলিউডের থ্রিলার ঘরানার ছবিগুলির মধ্যে এই ছবিটি বক্স অফিসে বিপুল সাড়া ফেলেছিল।
১৯৯৭ সালে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবির পরতে পরতে রয়েছে টানটান উত্তেজনা। পরিচালক রাজীব রাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল— সিনেমার মধ্যে সাসপেন্স বজায় রাখা।
বলিউডের রীতি হল— নতুন কোনও ছবি বানানোর পর সেই ছবিটি ট্রায়াল শোয়ের আয়োজন করা হয় ফিল্মজগতের বিশিষ্টজনদের দেখানোর জন্য। কিন্তু ‘গুপ্ত’ ছবিটি এর ব্যতিক্রম।
পরিস্থিতি এমনই হয় যে, ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে মূল গল্পের এই সাসপেন্সের ছিটেফোঁটা যেন দর্শকদের কাছে কোনও ভাবেই পৌঁছতে না পারে তার জন্য মুম্বইতে এই ছবির কোনও ট্রায়াল শো-ই রাখেননি তিনি। এমনকি, প্রযোজককেও এই ছবিটি দেখাতে চাননি রাজীব। ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর টিকিট কেটে ছবি দেখেন এই ছবির প্রযোজক।
তবে, যিনি ছবির প্রযোজনা করেছিলেন তাঁর পরিচয় জানলে এই ঘটনাটি অবাক করতে বাধ্য। ‘গুপ্ত’ ছবির প্রযোজক ছিলেন গুলশন রাই। সম্পর্কে তিনি রাজীবের বাবা ছিলেন। সেই সময় বলিউডের নামকরা প্রযোজকদের মধ্যে গুলশন ছিলেন অন্যতম। বিখ্যাত ত্রিমূর্তি ফিল্মস সংস্থার মালিক ছিলেন তিনি।
পুত্রের দাবি মেনে গুলশনও ছবিটি মুক্তি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। শুক্রবার ‘গুপ্ত’ মুক্তি পেলেও, তিনি সিনেমাটি দেখেছিলেন শনিবার। শুধু তা-ই নয়, ‘গুপ্ত’ ছবিকে কেন্দ্র করে রয়েছে আরও অনেক গুপ্ত কাহিনি।
‘গুপ্ত’ ছবিতে ববি দেওলকে মূল চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর অভিনয় দক্ষতার জন্য প্রশংসাও পেয়েছিলেন তিনি। তবে, নায়ক হিসাবে ববি পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিল না।
এই চরিত্রের জন্য রাজীব চেয়েছিলেন অক্ষয় কুমারকে। তাঁকে এই ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায়, সময়ের অভাবে এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হননি বলিউডের ‘খিলাড়ি’।
অক্ষয় এই ছবিতে অভিনয় করতে না পারায় রাজীব এই ছবির প্রস্তাব নিয়ে যান সানি দেওলের কাছে যান। তিনিই রাজীবকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর ভাই ববিকে এই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দিতে। সানির পরামর্শ মেনেই সাহিল সিংহের চরিত্রের জন্য ববি দেওলকে নায়ক হিসাবে বেছে নেন পরিচালক।
এই সিনেমার শ্যুটিং শুরু হওয়ার সময় বলিউডে শাহরুখ খান ও কাজলের জুটি ছিল চূড়ান্ত সফল। ‘গুপ্ত’ মুক্তি পাওয়ার কয়েক বছর আগেই মুক্তি পেয়েছিল ‘বাজিগর’, ‘কর্ণ অর্জুন’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’-এর মতো হিট ছবি।
শাহরুখ ‘ডর’ ও ‘আনজাম’ ছবিতে যে ধরনের নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন, কাজলেরও ইচ্ছা ছিল নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করার।
তাই পরিচালক যখন কাজলের কাছে ইশা দিওয়ানের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব নিয়ে যান, এক কথাতেই রাজি হয়ে যান অভিনেত্রী। ছবির গল্প অনুযায়ী, ইশা চরিত্রটি একটি মানসিক রোগীকে কল্পনা করে বানিয়েছিলেন রাজীব। কাজল বলিপাড়ার প্রথম অভিনেত্রী যিনি খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন।
‘গুপ্ত’-এর আগে রাজীব ‘মোহরা’ ছবিটির পরিচালনা করেছিলেন। ছবিটি বক্স অফিসে সাফল্যও নিয়ে আসে। এই ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবিনা ট্যান্ডন। রাজীব চেয়েছিলেন, ‘গুপ্ত’ ছবিতেও নায়িকার চরিত্রে রবিনা অভিনয় করুক।
এমনকি, ছবির জন্যই ববির সঙ্গে রবিনার একটি ফোটোশ্যুট করানো হয়েছিল। কিন্তু শ্যুটিংয়ের জন্য সময় দিতে পারবেন না বলে অভিনেত্রীর পক্ষে এই ছবিতে কাজ করা সম্ভব হয়নি।
রবিনা ছবি থেকে সরে দাঁড়ালে আবার নায়িকার সন্ধান শুরু করেন রাজীব। পরে করিশ্মার কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান তিনি। ছবির গল্প পছন্দ হয়েছিল অভিনেত্রীর। কিন্তু করিশ্মাও অন্য ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় রাজীবের প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
শেষমেষ প্রস্তাব দেওয়া হয় মনীষা কৈরালাকে। শিল্পপতি কন্যা শীতল চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
রাজীব পরিচালিত ‘ত্রিদেব’, ‘বিশ্বাত্মা’ ও ‘মোহরা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনটি ছবিই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। বলিপাড়ার একাংশই মনে করত, নাসিরুদ্দিন পরিচালকের জন্য ‘লাকি চার্ম’ হিসাবে কাজ করে।
রাজীব সেই কারণে ‘গুপ্ত’ ছবিতে পুলিশ অফিসার উধম সিংহের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব জানান নাসিরুদ্দিনকে। কিন্তু অন্য ছবির কাজে ব্যস্ত থাকায় অভিনেতা রাজীবের প্রস্তাব খারিজ করেন। এর জন্য বন্ধুতুল্য পরিচালকের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি।
নাসিরের পরামর্শেই অভিনেতা ওম পুরীকে একই চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন রাজীব। বড়পর্দায় এই চরিত্রকে জীবন্ত করে মাতিয়ে দিয়েছিলেন ওম পুরী।
আশি থেকে নব্বইয়ের এর দশকে ভারতীয় সিনেমার অন্যতম খলনায়ক হিসাবে পরিচিত ছিলেন অস্ট্রেলীয় অভিনেতা বব ক্রিস্টো। ধর্মেন্দ্র ও সানির সঙ্গে একাধিক বার অভিনয় করতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
‘গুপ্ত’ ছবিটিতে তিনি প্রথম বার দেওল পরিবারের আর এক সদস্যের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। যদিও বব একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তবে, সেই চরিত্রটিও ছিল নেতিবাচক। এরপর কয়েকটি হিন্দি ছবি করলেও আর প্রথম সারির হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পাননি বব।
এই ছবিটি রাজীবের পরিচালনা করা শেষ সফল ছবি হিসাবেই ধরা হয়। এরপর অর্জুন রামপাল অভিনীত ‘পয়্যার ইশক অউর মহব্বত’ ও ‘অসম্ভব’ নামে দুটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
কিন্তু দুটি ছবিই বক্স অফিসে ফ্লপ করে। ২০০০ সালে মুম্বইয়ে রাজীবের উপর প্রাণঘাতী হামলা হওয়ার পর ভিনদেশে থাকতে শুরু করেন তিনি।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি সলমন খানের সঙ্গে একটি ছবি তৈরির বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন রাজীব। বলিউডের একাংশ জানিয়েছে, রাজীবের পরিচালনায় তৈরি হওয়া ‘ত্রিদেব’ ছবিটির রিমেক বানানোর চিন্তাভাবনা করছেন দু’জনে। তবে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। পরিচালক ও ভাইজান উভয়েই এই বিষয়টি আপাতত গুপ্ত রাখতে চান।