হোয়া বাচু। রোমানিয়ার এই জঙ্গলের পরিচিতি রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম ভয়ঙ্কর জঙ্গল হিসাবে। ট্রান্সিলভেনিয়ার ক্লুজ-নাপোকা শহর থেকে দক্ষিণ বরাবর হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে হোয়া বাচু বনাঞ্চলে।
হোয়া বাচুর চারিদিকে শুধু গাছ আর গাছ। জঙ্গলের গভীরে বেশ কিছু জায়গায় দিনের বেলাতেও ঠিক মতো সূর্যের আলো পৌঁছয় না। স্যাঁতসেঁতে সেই জঙ্গলে সকালে প্রবেশ করলেও গা ছমছমিয়ে ওঠে। প্রশাসনের তরফে হোয়া বাচুর প্রবেশপথে বিধিসম্মত সতর্কীকরণও দেওয়া হয়েছে।
হোয়া বাচুকে পৃথিবীর অন্যতম ঘন জঙ্গল হিসাবেও গণ্য করা হয়। প্রায় ৬১৮ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই জঙ্গল পরিচিত ‘রোমানিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নামেও।
কিন্তু এমনি এমনি পৃথিবীর অন্যতম ভয়ঙ্কর জঙ্গল হিসাবে পরিচিতি পায়নি হোয়া বাচু। এর নেপথ্যে রয়েছে নানা ঘটনা, নানা কিংবদন্তি। যে ঘটনাসমূহের কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি আজও।
হোয়া বাচুর অন্দরমহলের প্রকৃতি ভয়ঙ্কর। পদে পদে রহস্য সেই জায়গায়। অনেকে হোয়া বাচুতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার কারণে সেই জঙ্গলকে ‘রোমানিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, রোমামিয়ার এই দুর্ভেদ্য জঙ্গলের নামকরণ হয়েছে এক পশুপালকের নামে। ২০০টি ভেড়ার পাল নিয়ে জঙ্গলের গভীরে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।
তবে হোয়া বাচু খ্যাতি পেয়েছিল এমিল বার্নিয়া নামে এক সামরিক প্রযুক্তিবিদের হাত ধরে। এমিলের দাবি ছিল, তিনি ওই জঙ্গলের মধ্যে ‘ভিন্গ্রহীদের যান’ ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন।
সেই যানের ছবিও তুলেছিলেন এমিল। ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই হইচই পড়ে যায়। সারা বিশ্বের মানুষের নজর কেড়েছিল সেই ছবি। হোয়া বাচুর যে নির্দিষ্ট অংশে ‘ভিন্গ্রহীদের যান’ নেমেছিল বলে মনে করা হয়, সেটির নাম—‘দ্য ক্লিয়ারিং’।
আশ্চর্যের বিষয় যে, হোয়া বাচু গাছগাছড়ায় পরিপূর্ণ হলেও ওই নির্দিষ্ট অংশ একেবারে ফাঁকা। গাছপালা তো দূরের কথা, ঘাস অবধি জন্মায় না সেখানে। এই জায়গার আশপাশে থাকা গাছগুলিও বিশেষ বেড়ে ওঠেনি।
শুধু এমিল নন, তাঁর পরেও অনেকে ওই জঙ্গলের মধ্যে ‘ভিন্গ্রহীদের যান’ দেখতে পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন।
কয়েক জনের দাবি ছিল, হোয়া বাচুর আকাশে তাঁরা অদ্ভুত আলো দেখতে পেয়েছিলেন। সঙ্গে দেখেছিলেন উড়ন্ত গোলাকার একটি বস্তু।
কেউ কেউ আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘ভিন্গ্রহী’দের মুখোমুখি হওয়ার দাবিও করেছিলেন। যদিও এর কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
বেশ কিছু ‘ভূতুড়ে’ গল্পও জড়িয়ে রয়েছে হোয়া বাচুকে ঘিরে। মনে করা হয়, যাঁরা এই জঙ্গলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাঁদের ‘অতৃপ্ত আত্মা’ জঙ্গলের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়ায়।
বেশ কয়েক জন ওই জঙ্গলে অভিযানে গিয়ে অদ্ভুত কণ্ঠস্বর শুনেছেন বলেও দাবি করেছেন।
অনেকের মতে, হোয়া বাচুতে প্রবেশ করলেই অভিযাত্রীদের শরীর খারাপ হতে শুরু করে। মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাবের পাশাপাশি অনেকের নাকি দৃষ্টিভ্রমও হতে শুরু করে।
রোমানিয়ার বিজ্ঞানীদের একাংশ আবার হোয়া বাচুকে রহস্যময় বলে মনে করতে নারাজ। তাঁদের দাবি, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের কোনও প্রভাবের কারণেই ওই এলাকায় মানুষের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।