সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার চার বছর পর চূড়ান্ত পর্যায়ে সেই মন্দিরের প্রথম দফার নির্মাণকাজ। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে আগামী বছরের ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় ‘রামলালা বিরাজমান’-এর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে। তা নজরে রেখেই তুঙ্গে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ট্রাস্ট সূত্রে খবর, মন্দিরের গর্ভগৃহে ‘রামলালা’র মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। পুজোও হবে মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনে। সেই পুজোয় যজমানের ভূমিকায় থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার পরেই হবে বিগ্রহে চক্ষুদান।
শুধু যজমানের ভূমিকাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজি থাকলে তিনিই পায়ে হেঁটে আধ কিলোমিটার দূরে একটি অস্থায়ী মন্দির থেকে ‘রামলালা’র মূর্তিকে রামমন্দিরের গর্ভগৃহে নিয়ে আসবেন।
রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে আগে থেকেই অযোধ্যায় পৌঁছে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তেরা। রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে অযোধ্যা জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। পূণ্যার্থীদের ভাড়া দিতে বেশ কয়েক জন স্থানীয় নিজেদের বাড়িতে হোমস্টের ব্যবস্থা করেছেন।
উদ্বোধনের দিন যত এগিয়ে আসছে, সেই সব হোমস্টের ভাড়া ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক হোটেল এবং হোমস্টের ভাড়া তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বোধনের দিন ভক্তদের শহরে আসতেই নিষেধ করলেন রামমন্দির ট্রাস্টের কর্তা চম্পত রাই।
রামভক্তদের উদ্দেশে চম্পত বলেন, ‘‘আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় আসার দরকার নেই।’’
রামমন্দির কর্তৃপক্ষের সেই ঘোষণায় যেমন মুষড়ে পড়েছেন ভক্তেরা, ততধিক মুষড়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কেন ভক্তদের অযোধ্যায় আসতে বারণ করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ?
রামমন্দির ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে, রামমন্দির উদ্বোধনের দিন অযোধ্যায় প্রায় চার হাজার সাধু আসবেন।
পাশাপাশি মন্দির উদ্বোধনের দিন অযোধ্যায় ভিড় উপচে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টেও দাবি করা হয়েছে যে, শহরের বেশির ভাগ হোটেলেই তিন দিন অর্থাৎ, ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বুকিং করে রেখেছেন বহু মানুষ। এর পর আরও মানুষ অযোধ্যা পৌঁছলে ভিড় সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রশাসনের আশঙ্কা, এ ভাবে চলতে থাকলে ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা হতে পারে অযোধ্যার। তা মাথায় রেখে ভক্তদের উদ্দেশে মন্দির ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় আসার দরকার নেই বলে আবেদন জানিয়েছেন।
চম্পত বার্তা দিয়েছেন, ওই দিন অযোধ্যায় না এসে যেন বাড়ির কাছে কোনও মন্দিরে ‘আনন্দ মহোৎসব’ পালন করতে পারেন ভক্তেরা। তিনি বলেন, ‘‘২২ জানুয়ারি যে কোনও দেবতার ছোট-বড় মন্দিরে যান, অযোধ্যায় আসবেন না।’’
আগত সব ভক্তদের জন্য নিশ্চিত ভাবে বিরাট ভোজের আয়োজন করা যাবে না বলেও চম্পত জানিয়েছেন। তবে বেশি লোক না এলে প্রাথমিক খাবার এবং ঘুমনোর জায়গার বন্দোবস্ত করা যাবে বলেও চম্পত জানিয়েছেন।
২৭ জানুয়ারি সকাল থেকে জনসাধারণের দর্শনের জন্য মন্দিরের গর্ভগৃহ খুলে দেওয়া হবে বলে ট্রাস্ট সূত্রে খবর। তখন গিয়ে সবাই মন্দির দর্শন করতে পারবেন।
চম্পত জানিয়েছেন, মন্দিরের গর্ভগৃহ এবং মূর্তি প্রস্তুত। তবে পুরো মন্দিরটি তৈরি হতে আরও দু’বছর সময় লাগতে পারে। তিনি আরও জানিয়েছেন, মূল অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগে থেকেই বৈদিক আচার মেনে প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল আচার পালন করবেন লক্ষ্মীকান্ত দীক্ষিত।
প্রসঙ্গত, অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে শহর জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাঁট করা হয়েছে। পুরো শহরে নজরদারি চালাচ্ছে ড্রোন বাহিনী। শীঘ্রই ড্রোনের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে ট্রাস্ট সূত্রে খবর।