তাঁদের বিয়ে নিয়ে বিতর্ক ঢের। অভিযোগও উঠেছিল প্রচুর। যার বেশির ভাগটাই হেমা মালিনীর দিকে। বিবাহিত ধর্মেন্দ্রকে বিয়ের জন্য রীতিমতো কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল তাঁকে। ঘর ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। যাঁর ঘর ভেঙেছিলেন বলে অভিযোগ, সেই প্রকাশ কউর কী বলেছিলেন হেমাকে? হেমাই বা কী বলেছিলেন?
হেমাকে বিয়ে করার আগে প্রকাশকে বিয়ে করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। চার সন্তানও ছিল তাঁদের। দীর্ঘ দিন সম্পর্কে থাকার পর ১৯৮০ সালে হেমাকে বিয়ে করেন ধর্মেন্দ্র। অভিযোগ, প্রকাশের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ না করেই হেমাকে বিয়ে করেছিলেন ধর্মেন্দ্র।
ধর্মেন্দ্রের দ্বিতীয় বিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নেননি প্রকাশ, তাঁর দুই ছেলে সানি, ববি এবং দুই মেয়ে। তাঁরা কোনও কালেই মেনে নেননি হেমাকে। এমনকি, দেওল পরিবারের অনুষ্ঠানে কখনও আমন্ত্রণ পাননি হেমা।
ধর্মেন্দ্র এবং প্রকাশের নাতি করণ দেওলের নাতির বিয়ের ক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। হেমা এবং তাঁর দুই মেয়ে এষা এবং অহনা অনুপস্থিত ছিলেন বিয়েতে। এই নিয়ে দুই তরফই কোনও মন্তব্য করেনি।
হেমা এবং প্রকাশকে কখনওই একসঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায়নি। তা হলে কি কখনওই পরস্পরের সামনে আসেননি ধর্মেন্দ্রের দুই স্ত্রী? নাহ্, তা নয়। হেমা একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েক বার প্রকাশের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর।
কখন প্রকাশের সঙ্গে দেখা হয়েছিল হেমার? হেমা নিজেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ধর্মেন্দ্রকে বিয়ের আগে প্রকাশের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। এক বার নয়, বেশ কয়েক বার।
একটি সংবাদমাধ্যম হেমার আত্মজীবনী ‘হেমা মালিনী: দ্য ড্রিম গার্ল’-থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে জানিয়েছিল, সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রকাশের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। তবে সবটাই ধর্মেন্দ্রের সঙ্গে বিয়ের আগে। বিয়ের পর আর মুখোমুখি হননি তাঁরা। হেমা তখন মনে করেছিলেন, দূরত্ব রাখাই শ্রেয়।
কেন দূরত্ব রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা-ও নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন হেমা। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি কাউকে বিরক্ত করতে চাইনি। আমার এবং আমার মেয়েদের জন্য ধরমজি যা করেছেন, তাতে আমি খুশি। এক জন ভাল বাবার ভূমিকা নিয়েছেন, যা সব বাবা করে থাকেন। আমি তাতেই খুশি।’’
জীবনের কঠিন সময়ে শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতাই যে তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছে, তা-ও লিখেছেন হেমা। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি আজ এক কর্মরত মহিলা। নিজের সম্মান নিয়ে বেঁচে রয়েছি। তার কারণ, আমি শিল্পের প্রতি নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আমার মতে, পরিস্থিতি যদি একটু অন্য রকম হত, তা হলে আমি আজ যা, তা হতে পারতাম না।’’
ধর্মেন্দ্রের পরিবারের সঙ্গে ঠিক কী রকম সম্পর্ক তাঁর, তা-ও আত্মজীবনীতে লিখেছেন হেমা। তিনি লিখেছেন, ‘‘যদিও আমি কখনও প্রকাশের বিষয়ে কথা বলিনি, তবে আমি তাঁকে সম্মান করি। আমার মেয়েরাও করে। সারা দুনিয়া আমাদের বিষয়ে জানতে চায়। কিন্তু এটা অন্যদের জানার বিষয় নয়।’’
বিয়ের আগে যখন প্রকাশের সঙ্গে দেখা হয়েছিল হেমার, তখন কী কথা হয়েছিল, বা আদৌ হয়েছিল কি না, তা এড়িয়ে গিয়েছেন হেমা।
বিয়ের পর প্রকাশের সঙ্গে আর দেখা হয়নি বলে জানান হেমা। তবে এক বার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল বড় মেয়ে এষার। ধর্মেন্দ্রের বাড়িতেই প্রকাশের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর।
ধর্মেন্দ্রের ভাই, তথা অভয় দেওলের বাবা অজিত দেওল এক বার অসুস্থ হয়েছিলেন। তাঁকে দেখতে ধর্মেন্দ্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন এষা। তখন দেখা হয়েছিল প্রকাশের সঙ্গে।
কী করেছিলেন দু’জন? হেমার আত্মজীবনীর একটি অংশে সেই কথা জানিয়েছিলেন এষা। তিনি জানান, প্রকাশের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন এষা। প্রকাশও তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন।
শোনা যায়, ধর্মেন্দ্র এবং প্রকাশের বড় ছেলে সানির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এষার। সানির বড় ছেলে করণের বিয়েতে সমাজমাধ্যমে অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি।
আর প্রকাশ কী মনে করেন হেমার বিষয়ে? ১৯৮১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ধর্মেন্দ্র এবং হেমাকে দোষারোপ করবেন, না কি নিজের ভাগ্যকে, তা বুঝতে পারেননি তিনি। তবে তিনি নিশ্চিত, ধর্মেন্দ্র যত দূরেই যান না কেন, প্রয়োজনে ঠিকে পাশে দাঁড়াবেন। এখনও ভরসা করেন স্বামীকে। প্রকাশের দাবি, বরাবর তা করেওছেন তিনি।
প্রকাশ এ-ও জানিয়েছিলেন, এত কিছুর পর স্বামীকে আগের মতোই ভালবাসেন তিনি। ধর্মেন্দ্র ছাড়া তাঁর জীবনে আর কেউ প্রবেশ করেননি। আর হেমা? প্রকাশের সাফ জবাব ছিল, হেমার জায়গায় তিনি থাকলে কখনও তাঁর মতো পদক্ষেপ করতেন না। তবে হেমা কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তিনি ভালই বুঝতে পারছেন।
কোনও দিন কি ক্ষমা করতে পারবেন হেমাকে? প্রকাশ জানিয়েছিলেন, এক জন স্ত্রী এবং মা হিসাবে পারবেন না। আর হেমা? তিনি কখনওই প্রকাশ বা নিজের বিয়ের বিষয়ে মুখ খোলেননি।