খনি মাফিয়াদের হাতে মঙ্গলবার দুপুরে খুন হন হরিয়ানার ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিএসপি) সুরেন্দ্র সিংহ বিষ্ণোই। তাঁকে ডাম্পারের তলায় পিষে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হরিয়ানার হিসার জেলার সারঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরেন্দ্রকুমার। বর্তমানে পরিবার নিয়ে কুরুক্ষেত্রতে থাকছিলেন। সুরেন্দ্ররা আট ভাই। তাঁদের মধ্যে দু’জন আগেই মারা গিয়েছেন।
আট ভাইয়ের মধ্যে পঞ্চম সুরেন্দ্র। ২০০৯ সালে তাঁর বড়দা অজিত বিষ্ণোইয়ের মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় ভাই ওমপ্রকাশ গ্রামে খেতখামার সামলান। তৃতীয় ভাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। চতুর্থ ভাই জগদীশ হাই কোর্টের এএজি পদে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ষষ্ঠ ভাই সুভাষ একটি স্কুলের অধ্যক্ষ। সপ্তম ভাই হিসারে ডেয়ারির ব্যবসা করেন। কনিষ্ঠ ভাই অশোক কুরুক্ষেত্রর একটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার।
সুরেন্দ্র প্রথমে পশুপালন দফতরের ক্লাস্টার সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করেন। ১৯৯৩ সালে হরিয়ানা পুলিশে পরীক্ষা দেন এবং ১৯৯৪ সালে এএসআই পদে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ পর্যন্ত কুরুক্ষেত্রের যমুনানগরে কর্মরত ছিলেন তিনি।
২০১২ সালে ডিএসপি পদে উন্নীত হন সুরেন্দ্র। বছর দুয়েক আগেই গুরুগ্রামে বদলি হয়েছিলেন তিনি। আগামী ৩১ অক্টোবর তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হত। গত ফেব্রুয়ারিতে সুরেন্দ্রর মা মন্নী দেবী এবং মার্চ মাসে বাবা অগ্রসেনের মৃত্যু হয়।
সুরেন্দ্রর ছোট ভাই অশোক বলেন, “মঙ্গলবার সকাল ৮.৫৩ মিনিটে দাদার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন দাদা জানিয়েছিল যে, খুব শীঘ্রই গ্রামের বাড়িতে আসবে।” তিনি আরও বলেন, “বাবাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে অক্টোবরে বাড়ি ফেরার টিকিট বুক করেছিল সিদ্ধার্থ। কিন্তু তার আগেই ওর কাছে খবর পৌঁছয়। মঙ্গলবার দুপুরেই ভাইপো ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, কাকা যা শুনছি সেটা কি ঠিক?”
সুরেন্দ্রর দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের নাম প্রিয়ঙ্কা। তিনি বেঙ্গালুরুর একটি ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজার। সুরেন্দ্রর জামাইও ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। ছেলে সিদ্ধার্থ বি টেকের পর স্নাতকোত্তরের জন্য কানাডায় গিয়েছেন। সিদ্ধার্থের দুই ছেলে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ নুহতে তাঁর দল নিয়ে আচমকাই তল্লাশিতে গিয়েছিলেন সুরেন্দ্র। পুলিশকে দেখে খনির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডাম্পার নিয়ে চালক পালানোর চেষ্টা করে। খনিতে যাঁরা অবৈধ খননের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁরাও পালিয়ে যান পুলিশকে দেখে। কিন্তু ডাম্পার চালককে সুরেন্দ্র দাঁড়াতে বলেন। তখনই তাঁকে পিষে দেয় চালক।
এই ঘটনায় হরিয়ানার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, খনি মাফিয়াদের ধরতে কি বড় দল নিয়ে যাননি সুরেন্দ্র? এ প্রসঙ্গে বেঙ্গালুরু পুলিশের আইজিপি জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়েই আচমকা অভিযানে গিয়েছিলেন সুরেন্দ্র। ব্যাকআপ ফোর্স সঙ্গে ছিল না। হঠাৎ তল্লাশি অভিযানে পুলিশের বড় দল নিয়ে যাওয়ার সময় পাননি। তবে কোথায় গলদ ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল বিজ বলেছেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।” অন্য দিকে খনিমন্ত্রী মূলচাঁদ শর্মা রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর এবং আমার উপর ভরসা রাখুন। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবই।” ডিএসপি সুরেন্দ্রর শেষকৃত্য হবে তাঁর পৈতৃক গ্রাম সারঙ্গপুরে।